‘তরলীকৃত গ্যাস পরিবহনে কেনা হচ্ছে ৬টি জাহাজ’

‘তরলীকৃত গ্যাস পরিবহনে কেনা হচ্ছে ৬টি জাহাজ’

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পরিবহনের জন্য বড় আকারের ৬টি ট্যাংকার বা ক্যারিয়ার জাহাজ কিনবে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। আর জাহাজ ছয়টি কিনতে সরকারের খরচ ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০২১-২৫), রূপকল্প ২০৪১, টেকসই উন্নয়ন লক্ষে ২০৩০ এবং ব্লু-ইকোনমি (সুনীল অর্থনীতি) ধারণার আলোকে এই ছয়টি জাহাজ কেনার পরিকল্পনা করেছে শিপিং করপোরেশন। 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) শিপিং করপোরেশনের মাধ্যমে এলএনজি জাহাজ ক্রয়ের প্রস্তাবের বিষয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিবৃতি থেকে জানা যায়, ছয়টি এলএনজি ট্যাংকারের মধ্যে দুটি কেনা হবে এক লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার ধারণক্ষমতার, দুটি ট্যাংক কেনা হবে এক লাখ ৭৪ হাজার ঘনমিটার করে ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আর বাকি দুটি এলএনজি ট্যাংক কেনা হবে প্রতিটি এক লাখ ৮০ হাজার ঘনমিটার ধারণক্ষমতার।

 এক লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার ধারণক্ষমতার দুটির মূল্য ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৫৪২ কোটি, এক লাখ ৭৪ হাজার ঘনমিটার ধারণক্ষমতার ট্যাংকার দুটি মূল্য ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা, আর ৩ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা ব্যয় হবে এক লাখ ৮০ হাজার ঘনমিটার ধারণক্ষমতার এলএনজি ট্যাংক দুটো কিনতে।

৬টি এলএনজি ট্যাংকার ক্রয় সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

এ সময় অন্যদের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির, জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব সেখ আকতার হোসেন, পেট্রোবাংলার পরিচালক আলী মো. আল মামুন, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যাবেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে চলতি বছর ২৫ জানুয়ারি বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ইপিসি (ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কন্সট্রাকশন) প্লাস শিপ ফাইন্যান্সিংয়ের ভিত্তিতে শিপিং করপোরেশনের মাধ্যমে এলএনজি ট্যাংকার/ক্যারিয়ার ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ক্রয় প্রস্তাবসংক্রান্ত এই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়, মহেষখালী দ্বীপের নিকট দেশের দু’টি এলএনজি টার্মিনাল এবং এক বা একাধিক স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিপ্রেক্ষিতে এলএনজি ট্যাংকার ক্রয়ের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। জাহাজগুলো দিয়ে বছরে প্রায় ১৯ মিলিয়ন ঘনমিটার (৬.৭১ মিলিয়ন টন) এলএনজি পরিবহন করা সম্ভব হবে। 
সভায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এলএনজি পরিবহন, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের তথা রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিদেশি জাহাজের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে জ্বালানি নিরাপত্তা অনেকাংশে নিশ্চিত হবে।

তিনি বলেন, মেরিটাইম সেক্টরে দক্ষ লোকবল সৃষ্টিসহ চাকরির সুযোগ তৈরির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

কয়েকটি দেশের ১৪টি প্রতিষ্ঠান এলএনজি ট্যাংকার সংগ্রহে আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, সরকার বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে চীনের আর্থিক সহায়তায় এক হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে ছয়টি জাহাজ সংগ্রহ করেছে। সংগৃহীত জাহাজগুলো হলো, এম.ভি বাংলার জয়যাত্রা, এম.ভি বাংলার সমৃদ্ধি, এম.ভি বাংলার অর্জন, এম.টি বাংলার অগ্রযাত্রা, এম.টি বাংলার অগ্রদূত এবং ‘এম টি বাংলার অগ্রগতি’।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে বিএসসি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭২ সালে ‘বাংলার দূত’ ও ১৯৭৩ সালে ‘বাংলার সম্পদ’ অর্জনের মাধ্যমে বিএসসি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সর্বমোট ৩৮টি জাহাজ সংগ্রহ করেছিল। বয়সের কারণে এবং বাণিজ্যিকভাবে অলাভজনক বিবেচিত হওয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৬টি জাহাজ বিক্রয় ও হস্তান্তরের পর দুটি জাহাজ ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে ছয়টি নতুন জাহাজ সংগ্রহের ফলে বর্তমানে বিএসসির বহরে আটটি জাহাজ রয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন