মনে রাখার মতো এক সেশন

মনে রাখার মতো এক সেশন

বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা চলছে মিরপুর শের-ই-বাংলায়। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে খেলা শুরু হয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ- প্রথম ইনিংস: ৮৮ ওভারে ২৭২/৬ (মিরাজ ৫৩*, লিটন ৬৬*) জুটির রান: ১১৭ (২৩৫)
আউট: সৌম্য ০, শান্ত ৪, মুমিনুল ২১, তামিম ৪৪, মিথুন ১৫, মুশফিক ৫৪

ওয়েস্ট ইন্ডিজ- প্রথম ইনিংস: ১৪২.২ ওভারে ৪০৯ (কর্নওয়াল ৪*)আউট: ক্যাম্পবেল ৩৬, মোসলে ৭, ব্র্যাথওয়েট ৪৭, মায়ার্স ৫, ব্ল্যাকউড ২৮, বোনার ৯০, ডা সিলভা ৯২, আলজারি ৮২, ওয়ারিকান ২, গ্যাব্রিয়েল ৮।

ব্যাটিং করতে হতো এভাবেই!

বল ব্যাটে আসছে খুব সহজে। সমান বাউন্স। উইকেটে বিশ্বাস রাখা যাচ্ছে সহজেই। এমন উইকেটে ব্যাটিং হতে হয় দ্যুতিময়। যেমনটা লিটন ও মিরাজ করে দেখালেন। মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে চা-বিরতি পর্যন্ত দুইজনের ব্যাটিং দেখে মনেই হয়নি বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের শুরুটা ছিল একেবারেই হতশ্রী। এ সেশনে ২৭ ওভারে ৯১ রান তুলেছে বাংলাদেশ। কোনো উইকেট হারায়নি। রান রেট ছিল ৩.৩৭। এ সময়ে লিটন ও মিরাজ দুইজনই পেয়েছেন ফিফটি। প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানই নিজেদের উইকেট `অত্যাহত্যা’ দিয়েছেন। অথচ মিরাজ ও লিটনের ব্যাটিং কতটা নিখুঁত, দায়িত্বশীল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪০৯ রানের জবাবে ব্যাটিং করতে হতো এভাবেই। 

মিরাজের আরেকটি দ্যুতিময় ইনিংস

চট্টগ্রামের ব্যাটিং ফর্ম ঢাকায় অব্যাহত রেখেছেন মিরাজ। ডানহাতি ব্যাটসম্যান পেয়েছেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটির স্বাদ। ৮৫তম ওভারে গ্যাব্রিয়েলকে আপার কাটে চার মেরে ৪৪ থেকে ৪৮ রানে পৌঁছান ডানহাতি ব্যাটসম্যান। পরের তিন বল ডটের পর শেষ বল লেগ সাইডে দারুণ ফ্লিক করে ৩ রান আদায় করেন। তাতে পৌঁছে যান মাইলফলকে। ১১২ বলে ৬ বাউন্ডারিতে হাফ সেঞ্চুরি পান মিরাজ। চট্টগ্রামের হাফ সেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিয়েছিলেন। এবার পারবেন কী মিরাজ?

জুটির শতরান, এগোচ্ছে বাংলাদেশ

লিটন ও মিরাজের দায়িত্বশীল ইনিংসে এগোচ্ছে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ড। তাদের দৃঢ়চেতা মনোবলে এখনও চিড় ধরাতে পারেননি অতিথিরা। এরই মধ্যে তাদের জুটির রান একশ পেরিয়েছে। মুশফিক ১৫৫ রানে সাজঘরে ফেরার পর জুটি বাঁধেন তারা। প্রথমে তারা দলের ফলোঅন এড়ায়। এখন দলের স্কোর যতটা সম্ভব এগিয়ে নিচ্ছেন। জুটির শতরানে মিরাজের অবদান ৪৩, লিটনের ৫২। বাকিটা অতিরিক্ত খাত থেকে। 

লিটনের ফিফটিতে বাংলাদেশের লড়াই

সতীর্থরা যখন ২২ গজে ভুগছিলেন তখন লিটন খেলছিলেন সাচ্ছন্দ্যে। ক্যারিবিয়ান পেসার কিংবা স্পিনারদের সিদ্ধহস্তে সামলেছেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ব্যাটিং ধারাবাহিকতায় ডানহাতি ব্যাটসম্যান তুলে নেন ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ সেঞ্চুরি। ৯২ বলে ৬ বাউন্ডারিতে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন লিটন। লিটনকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছেন মিরাজ। চট্টগ্রাম টেস্টে সেঞ্চুরি পাওয়া মিরাজ এখন পর্যন্ত করেছেন ৩৭ রান। দুজনের জুটির রান ৮৩। 

স্বস্তি ফেরালেন মিরাজ-লিটন

মুশফিকুর রহিম যখন বাজে শটে নিজের উইকেট উপহার দিলেন তখনও বাংলাদেশকে ফলোঅন এড়াতে করতে হতো ৫৫ রান। বাংলাদেশ যে ব্যাটিং করছিল তাতে ৫৫ রান পাহাড় ছোঁয়া সমান। সপ্তম উইকেটে লিটন ও মিরাজ দলকে বিপদমুক্ত করলেন। লজ্জায় না ফেলে দলকে ফলোঅনের লজ্জা থেকে বাঁচালেন। ৭২ ওভার শেষে ৬ উইকেটে বাংলাদেশের রান ২১৫। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছিল ৪০৯ রান।

দুইশ পেরিয়ে বাংলাদেশ

আরেকটি ছোট জুটিতে বাংলাদেশের রান দুইশ পেরিয়েছে। দলের হাল ধরেছেন মিরাজ ও লিটন। তাদের ব্যাটে ইনিংসের ৬৭তম ওভারে দলীয় ২০০ রান পেরিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি সপ্তম উইকেটে তাদের জুটির রানও ৫০ পেরিয়েছে। ১০৫ বলে জুটির ৫০ রান পূর্ণ হয়। ১৫৫ রানে মুশফিক আউট হওয়ার পর জুটি বাঁধেন দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। 

লিটনের ‘এক হাজার’

১৫তম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ১ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন লিটন। নামের পাশে ৯৬৬ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন তিনি। মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে দ্রুতই মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। ১ হাজার রান পেতে ৩৭ ইনিংস লাগল ডানহাতি ব্যাটসম্যানের। 

অস্বস্তি এখনও কাটেনি

তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাফল্য ২ উইকেট। বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে তুলেছে ৭৬ রান। ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের রান ১৮১। ফলোঅন এড়াতে স্বাগতিকদের করতে হবে আরও ২৯ রান। পারবে কী বাংলাদেশ? ভরসা হয়ে উঠতে পারবেন কী মিরাজ, লিটন? তাদের ৭১ বলে ২৬ রানের জুটি কিছুটা আশা দেখাচ্ছে। মিথুন ও মুশফিক দুইজনই উইকেট উপহার দিয়েছেন কর্নওয়ালকে। মিথুন ব্র্যাথওয়েটের দারুণ ক্যাচে পরিণত হওয়ার পর মুশফিক রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে মায়ার্সের হাতে ক্যাচ দেন। এর আগে নিজের ক্যারিয়ারের ২২তম হাফ সেঞ্চুরি পান মুশফিক। 

মুশফিকের উইকেট উপহার

‘আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। মুশফিক এ ধরণের শট খেলতে পারেন, তাও এরকম মুহূর্তে।’ – ধারাভাষ্যে বলছিলেন অবাক আতাহার আলী! রাকিম কর্নওয়ালের সোজা বল রিভার্স সুইপ খেলার চেষ্টা করলেন মুশফিকুর রহিম। বল তার ব্যাটের নিচের অংশে লেগে চলে যায় কভারে। সোজা মায়ার্সের হাতে। এভাবেও আউট হওয়া যায়? আউট হওয়া বলের আগের ডেলিভারীতে পুল করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন মুশফিক। হাল্কা বাউন্স পাওয়ায় বল ব্যাটে লেগে লেগ স্লিপের ফিল্ডারের কাছ দিয়ে বেরিয়ে যায়। কোনো রকমে বেঁচে গেলেও পরের বলে উইকেট বিসর্জন। ১০৫ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৫৪ রান করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তার আউট হওয়ার সময় বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১৫৫। ফলোঅন এড়াতে বাংলাদেশকে করতে হবে ২১০ রান। 

ব্র্যাথওয়েটের দারুণ ক্যাচে মিথুন সাজঘরে

মুশফিকের সঙ্গে ৭১ রানের জুটি গড়ে সাজঘরে ফিরলেন মোহাম্মদ মিথুন। অফস্পিনার কর্নওয়ালের বল ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন। সামনে ডাইভ দিয়ে দারুণ দক্ষতায় বল তালুবন্দি করেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। মিথুনের ব্যাট থেকে আসে ১৫ রান। তবে এ ইনিংসটি খেলেছেন ৮৬ বলে। গতকাল ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল থামিয়ে এ ব্যাটসম্যান দৃঢ়তা দেখান। আজও তার ব্যাটে তাকিয়ে ছিল দল। শুরুটা ভালো করলেও নিজের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে পারলেন না মিথুন। তার আউটের সময় বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১৪২। 

মুশফিকের ফিফটি

২২তম টেস্ট ফিফটির দেখা পেলেন মুশফিকুর রহিম। দৃঢ় ব্যাটিংয়ে দলের রানের চাকা সচল রাখছেন এ ব্যাটসম্যান। ৮৯ বলে ফিফটি পেয়েছেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ফিফটির ইনিংসে ছিল ৬ বাউন্ডারি। 

জুটির ৫০ রান

তামিম ইকবাল যখন আউট হন তখন দল খাদের কিনারায়। সেখান থেকে চোয়ালবদ্ধ ব্যাটিং করেন মিথুন ও মুশফিক। রান তোলার ক্ষেত্রে কোনো তাড়া দেখাননি দুইজন। এরই মধ্যে জুটির ৫০ রান পূর্ণ হয়েছে তাদের। ১৫০ বলে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৫০ রান এসেছে। যেখানে মুশফিকের অবদান ৩৭, মিথুনের ১১। ৩ রান এসেছে অতিরিক্ত খাত থেকে। 

ফলোঅন এড়ানোর লড়াই

ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ৪০৯ রানের জবাবে নেমে প্রথম ইনিংসে পর্যদুস্ত বাংলাদেশ। ১০৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে অস্বস্তি নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল স্বাগতিকরা। ফলোঅন এড়াতে বাংলাদেশের করতে হবে আরও ১০৫ রান। সেই লড়াইয়ে নেমেছেন মুশফিক ও মিথুন। দ্বিতীয় দিনের পড়ন্ত বিকেলে তাদের ব্যাটে আশার আলো দেখা যায়। ১২২ বল ও ৮৯ মিনিট ক্রিজে থেকে দারুণ প্রতিরোধ গড়েন তারা। এবার নতুন দিনের লড়াইটা কেমন হয় সেটাই দেখার। 

আপনি আরও পড়তে পারেন