ইয়াসের সঙ্গে পূর্ণিমার প্রভাব, গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত

উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পূর্ণিমার প্রভাব। ফলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু জোয়ারের মুখে পড়েছে।

এতে জোয়ারের পানি অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। উপকূলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- পূর্ণিমার প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-চার ফুট বেশি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পঞ্জিকা অনুসারে বাংলাদেশে পূর্ণিমা তিথি শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার রাত ৮টা ১০ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে, পূর্ণিমা শেষ হবে বুধবার বিকাল ৫টা ৪২ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডে।

ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

পায়রাবন্দর (পটুয়াখালী): ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানি অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে পটুয়াখালী উপকূলের ২১ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের ৬ কিলোমিটার অরক্ষিত বেড়িবাঁধ এবং রাঙ্গাবালী উপজেলার চরআন্ডা, দক্ষিণ চরমোন্তাজ ও চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের প্রায় ১০ কিলোমিটার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। এছাড়াও বেড়িবাঁধের বাইরের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। শত শত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই এসব এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলবাসী।

ধারণা করা হচ্ছে, বিগত দিনের রেকর্ড অতিক্রম করবে এবারের ঘূর্ণিঝড়।

কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো.শওকত হোসেন বিশ্বাস জানান, লালুয়া ইউনিয়নের ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন যাবত অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। বাঁধের বিভিন্ন স্থানে আগে থেকেই ভাঙা ছিল। ভাঙা জায়গা দিয়ে পানি প্রবেশ করে ৮ গ্রাম প্লাবিত হয়।

রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান জানান, চালিতাবুনিয়া একটি ভাঙনকবলিত এলাকা। এখানে বেড়িবাঁধ বলতে কিছু নেই। অনেক আগেই বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। কিন্তু নতুন করে বেড়িবাঁধ না করায় জোয়ারের পানিতে একটি বাদে সব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন।

চরমোন্তাজ ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ মিয়া জানান, চরআন্ডার বেড়িবাঁধটি দীর্ঘদিন অরক্ষিত পড়ে আছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি হলেই পানি প্রবেশ করে লোকালয় তলিয়ে যায়। জোয়ারের পানির অতিরিক্ত চাপে চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডা ও দক্ষিণ চরমোন্তাজ বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মাশফাকুর রহমান জানান, অতিরিক্ত জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকছে। এতে অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। এছাড়াও বেড়িবাঁধের বাইরের গ্রামের মানুষও পানিবন্দি হয়ে আছেন। তাদের উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন