বিশ্ব বাবা দিবসে আমার ‘বাবা কথন’

বিশ্ব বাবা দিবসে আমার 'বাবা কথন'
জাফর আহমেদ শিমুল,সিনিয়র রিপোর্টার।
প্রতিবছর জুনের তৃতীয় রোববার সারা
পৃথিবীতে ‘বাবা দিবস’ পালিত হয়। যদিও সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের প্রতি ভালোবাসার কোনো নির্দিষ্ট দিন হয় না তারপরেও জগতের সকল সন্তানদের জন্যই এই ২০-জুন রবিবার দিনটি একটি বিশেষ ‘বাবাময়’ দিন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি ভিন্ন দিনে পালন করা হয়। বাংলাদেশ, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দেশে ‘বাবা’ দিবসে ২০-জুন পালন করা হয়।
দক্ষিণ আমেরিকাতে আবার এটি পালন করা হয় ১৯-শে মার্চ। অষ্ট্রেলিয়া ও ফিজিতে এই বিশেষ দিনটি পালিত হয় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম রবিবার।
বিশ্বের সকল বটবৃক্ষসম বাবাদের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা জানিয়েই শুরু করছি আমার  ‘বাবা কথন’।
বাবা মসজিদ,বাবা মন্দির; বাবা হলেন তীর্থস্থান। যার “মা” নেই তার পৃথিবী নেই আর যার “বাবা” নেই তার পৃথিবীতে আলো,বাতাশ ও অক্সিজেনই নেই। বাবারা এমন একটি সময়ে উপনীত হন যখন চারপাশের সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিসের মাঝেই আনন্দ খুঁজতে থাকেন।সেই দুঃসময় আমরা বাবাকে দিতে পারি না একটু গুণগত সময়,সেখানেও অবশ্য আমরা দাঁড় করিয়ে দেই পরিস্থিতি নামক এক বিরাট অযুহাতকে। অথচ এমন ব্যাবহার সন্তানের কাছে কখনোই কাম্য নয়।
১৯১০ সালের ২০ জুন  ওয়াশিংটনে প্রথমবারের মতো পালন করা হয় বাবা দিবস। ‘সনোরা’ নামে এক নারীর কারণেই এই দিনটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলো। ওই নারীর জীবনে তার বাবা ছিলেন মহাপুরুষ। মাতৃহীন ওই নারী জন্মের পরপরই বুঝেছিলেন, একজন বাবা তার সন্তানের জন্য কতটুকু ত্যাগ ও তিতিক্ষা সহ্য করতে পারেন। তার জীবনবোধই আসলে বাবার প্রতি তাকে অনুরক্ত করে তুলেছিলো।
বাবা মানে বটবৃক্ষের ছায়া ভরসা-পরম আদর-ভালোবাসা-বিশ্বস্ততা।
বাবা মানে আপনত্ব।
সমাজে যে মানুষটি নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে সন্তান-সন্ততি,সংসারের গুরুজন,ও সবার মঙ্গল কামনায় ব্যাস্ত,নিজের রক্তকে জল করে দিয়ে সমাজে মাথা উঁচিয়ে বাঁচার ও বাঁচানোর চেষ্টায় নিমগ্ন থাকেন যিনি তিনি হলেন বাবা।
বাবা সমাজে আব্বু,আব্বুজি,আব্বা,বাবাই ও আরও কত শব্দে পরিচিত।এই শব্দগুলো বা এই শব্দগুলোর বাইরেও বিশ্বজুড়ে আরও কত শব্দে বাবাকে বাবার সন্তানেরা
ডেকে অভ্যস্ত। যে শব্দেই বা যে ভাবেই ডাকা হোক বাবা সন্তানের জন্য ভরসার জায়গায়, নিরাপদ আশ্রয়স্থল।বাবা সত্যিই এক বিশাল বটবৃক্ষ।সেখানে সহজেই মেলে সুশীতল ছায়া।ঝড় বাদলে
বাবার মতো শক্তিশালী স্নেহের ছাতাও এই সমাজে নেই।সমাজের বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ যখন প্রখর সূর্যের তাপের ন্যায় প্রকট হয়ে ওঠে,বাবা নামের এক অসম্ভব শক্তিধর ছায়া সব অসহ্য তাপকে ছায়াবৃত করে সন্তানকে নিরাপদে রাখে।পৃথিবীতে বাবা ই একমাত্র সত্যিকারের রাজকীয় ব্যাক্তি যার কোনো রাজকীয় সিংহাসন না থেকেও তিনি রাজা-মহারাজা এবং সন্তান সেই রাজ্যের রাজপুত্র বা রাজকন্যা।কথা সাহত্যিকদের ভাষায় “পৃথিবীতে বহু নোংরা পুরুষ আছে,কিন্তু একটিও খারাপ বাবা নেই”।
বাবারা নিজের কপালের ঘাম দিয়ে সন্তানের জীবন গড়ে দেওয়ার নেপথ্য কারিগর। নিজের রক্ত জল করে সন্তানের সকল চাহিদা মিটিয়ে যান বিনিমিয়ে কোনো প্রত্যাশা না করেই।
সাহিত্যিক পল্লব মোহাইমেন বাবাকে নিয়ে লিখেছিলেন, ‘পৃথিবীর সকল পিতাই বটবৃক্ষসম। ছায়া দিতে যারা কোনোদিন কার্পণ্য করেন না। এ এমন এক বৃক্ষ যার নিচে চারা গাছ বেড়ে ওঠে অনায়াসে। এই বৃক্ষ অন্য বৃক্ষকে বড় হতে দেয়, বড় হতে সাহায্য করে। আত্মজ বেড়ে উঠলে সেই উচ্চতার গর্ব করে, ছায়া আরো নিবিড় হয়,আরো প্রগাঢ় হয়।’
আমাদের বাবা নামক মানুষ সত্তার নিবিড় স্নেহ,যত্ন,পরিচর্যার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা আমরা অনেক লোভী ও অকৃতজ্ঞ সন্তানেরাই আবার নিজেদের ভোগ-বিলাসের জীবন কামনায় তাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেই কখনো বাবা নিজ গৃহে রেখেই যত্নহীন,গুরুত্বহীন ও গৃহ-পরবাসী করে তুলি।
অথচ বাবারা সবসময় ই চান তাঁর ভেতরের সেই সম্ভাবনাময় নন্দন কলার ও শৈল্পিক কর্মকান্ডের তথা শিল্পীত রুপের প্রতিফলন অত্যন্ত সাবলীল ভাবে আমাদের জীবনে ঘটাতে। একজন প্রকৃত বাবা আমাদের ছোট বেলা থেকেই শেখান আমরা যেনো স্বাধীন জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হতে পারি,পাশাপাশি এটাও বোঝান যে স্বাধীন হওয়া মানেই স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠা নয় বরং সৎ ও দৃঢ়চেতা হয়ে সুসৃঙ্খল হয়ে জীবনে প্রকৃত উৎকর্ষতার পথে এগিয়ে যাওয়া। বড় হবার পরে যেনো সন্তান তার আদর্শ ও শক্তিশালী ব্যাক্তিত্ব সন্তান ধারণ করতে পারে।সর্বোপরী বাবা ও বাবার বীরোচিত ও আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন ও নিরহংকারী ব্যক্তিত্ব ও সুবোধ সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব সকল সময় আমাদের অনুপ্রেরণা ও প্রেষণা যোগায়। আজকের এই বিশেষ দিবসে আমার বাবাসহ জগতের সকল বাবাদের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা,সেলাম ও গভীর ভালোবাসা জানাচ্ছি, ‘শুভ বাবা দিবস’।

আপনি আরও পড়তে পারেন