মুক্তিযোদ্ধার দাফনে বাধা, শেষ বিদায়ে মেলেনি গার্ড অব অনার

মুক্তিযোদ্ধার দাফনে বাধা, শেষ বিদায়ে মেলেনি গার্ড অব অনার

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্লাহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মৃত্যুর পর তার মরদেহ দাফনে বাধা দেন বাড়ির লোকজন। পরে ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা তার মরদেহ দাফন করেন। এ সময় মসজিদের ইমামকেও জানাজা পড়াতে দেওয়া হয়নি। এমনকি বিদায়কালে রাষ্ট্রীয় সম্মানও পাননি এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

বুধবার (৪ আগস্ট) করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার গ্রামের আবদুর রশীদ মুহুরি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার সরকারি গেজেট নম্বর ৫০৮৩, লাল বই নম্বর ০২০৩০৪১২০৯। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) রাতে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহর ছেলে হোসেন মো. জামিল বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাবার মৃত্যুর পর বাড়ির লোকজন মরদেহের গোসল করানো, কবরের খোঁড়া ও দাফন করতে পারবো না বলে জানায়। এমনকি তারা বাড়িতে অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত নিতে দেয়নি। বিষয়টি করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’-কে খবর দেন। তারাই দাফনের ব্যবস্থা করেছেন।

তিনি বলেন, গ্রামের মসজিদের ইমাম জানাজার নামাজ পড়াতে অস্বীকৃতি জানালে শেষ বিদায়ের বন্ধুর একজন নামাজ পড়ান। বাড়ির লোকজন মসজিদের ইমামকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে নামাজ না পড়াতে বলেন।

তিনি আরও বলেন, বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। গার্ড অব অনারের জন্য ইউএনওর কাছে গিয়েছিলাম বুধবার ভোর ছয়টায়। কিন্তু ওনার সঙ্গে দেখা হয়নি। পরে বিষয়টি আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জানাই। ওনি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বলছিলেন, আসতে আসতে সকাল ১০টা হবে। এর আগে করলে লোকজন পাওয়া কষ্ট হবে।

জামিল আরও বলেন, পরে আবার ফোনে যোগাযোগ করা ওই মুক্তিযোদ্ধাকে বলি, যেহেতু গ্রামের লোকজন জানাজা পড়তে আসবে না, আর আপনাদেরও আসতে সময় লাগছে, তাহলে থাক। তাই আমি সকাল ৯টায় দাফন শেষ করি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজেদ উল্ল্যাহকে গার্ড অব অনার দেওয়ার জন্য সকাল ১০টায় সময় নির্ধারণ করা হয়। উনার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় পরিবারের লোকজন তাড়াতাড়ি সকাল ৯টায় দাফন শেষ করে শহরে চলে যায়। সেজন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, লাশ দাফনে গ্রামবাসী বাধা দেওয়ার বিষয়টি আমি শুনিনি। বিষয়টি জানলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিতাম।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহমেদ বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজেদ উল্ল্যাহর মরদেহ দাফনের জন্য সকাল ১০টায় সময় নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তার পরিবারের লোকজন সকাল ৯টায় তাড়াহুড়ো করে দাফন করে ফেলে। ফলে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়নি।

করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সাজেদা উল্লাহর মরদেহ বাড়িতে নিতে ও দাফনে বাধা দেয় বাড়ির লোকজন। তারা ওই বাড়ির রাস্তায় বাঁশ পুঁতে দিয়েছিল, যাতে বাড়িতে অ্যাম্বুলেন্স না যেতে পারে।

আপনি আরও পড়তে পারেন