খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি : নামে আছে, কাজে কোথায়?

খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি : নামে আছে, কাজে কোথায়?

অনেক দিন পর কিছুটা চাঞ্চল্য ফিরল ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতিতে। উপলক্ষ্য বেটিং বা ফিক্সিং ইস্যুতে শাস্তিপ্রাপ্ত ফুটবলারদের নিয়ে সভা। মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের আরেক প্রান্তে হকি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি। এই অফিস খোলা হয় কালে ভদ্রে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। সেই ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবের নেই কোন আনুষ্ঠানিক কার্যালয়।

দেশের ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণকেন্দ্র বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অনেক ফেডারেশনের কার্যালয় মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে। ফেডারেশনগুলোর পাশাপাশি কিছু অ্যাসোসিয়েশনেও রয়েছে। এর মধ্যেও দীর্ঘদিন ধরেই ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির রয়েছে দুইটি কক্ষ মিলিয়ে একটি কার্যালয় অন্য দিকে হকির খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির মাত্র একটি রুম। কোয়াবের অস্থায়ী কার্যালয় ছিল পান্থপথে। সেটি এখন আর নেই। ক্রিকেট বোর্ডের কাছে কোয়াব কার্যালয়ের জন্য বরাদ্দ চেয়েছে। আনুষ্ঠানিক কার্যালয় ছাড়াই চলছে তারা।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে কোনো সাফল্য নেই। কিন্তু ঘরোয়া ফুটবলে কার্যক্রম ব্যাপক। প্রিমিয়ার ফুটবলে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের অর্থ পুরোপুরি না পাওয়া, ফুটবলারদের ইনজুরি পুনবার্সন নিয়ে ক্লাব ফেডারেশনের উদাসীনতাসহ অনেক ইস্যু জড়িত ঘরোয়া ফুটবলে। গত কয়েক বছরে খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি এই সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। বাৎসরিক ইফতার মাহফিল আর বিশেষ কোনো দিবসে ফুল দেওয়া ছাড়া তেমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অন্য পদধারীরা অফিসে আসেন না। অফিস সহকারী মাঝেমধ্যে কার্যালয় খুলেন।

হকি লিগ একেবারে অনিয়মিত। ফেডারেশনকে চিঠি দেওয়া ছাড়া আর তেমন কিছু করারও নেই হকি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির। তবে মাঝেমধ্যে হকি ফেডারেশনের নির্বাচন ইস্যুতে খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

ক্রিকেটের কার্যালয় না থাকলেও গত কয়েক বছরে ক্রিকেটারদের দুঃখে পাশে ছিল কোয়াব। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে কোয়াব অনেক কাজ করেছে। হকি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতিও করোনাকালীন সময় ও ঈদের আগে কিছু কর্মকাণ্ড ছিল। ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি অবশ্য তেমন কিছু করেনি।

জেলা কমিটি এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এই দুই দিক থেকে কোয়াব, ফুটবল এবং হকির চেয়ে এগিয়ে। দেশের প্রায় ৫০ টি জেলায় তাদের জেলা কমিটি রয়েছে। সেখানে ফুটবল এবং হকিতে মাত্র হাতে গোণা কয়েক জায়গায়। ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ফিকার সদস্য কোয়াব। ফুটবল এবং হকি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির আন্তর্জাতিক কোনো স্বীকৃতিও নেই।

ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফ খান জয় এক দশকের বেশি সময়। এর মাঝে আরিফ খান জয় যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রীও হয়েছিলেন। সেই সময়টুকু সাবেক জাতীয় ফুটবলার হাসান আল মামুন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জয়ের মন্ত্রীত্ব মেয়াদের পর আর হাসান আল মামুন দায়িত্ব পালন করেননি। হকি সমিতির সভাপতি রাসেল খান বাপ্পী ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক প্রিন্স। এই কমিটিও দশ বছরের বেশি।

ফুটবল, হকির মতোই অবস্থা ক্রিকেটের। এক যুগের বেশি সময় ধরে কোয়াবের সভাপতি সাবেক জাতীয় অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক ক্রিকেটার দেবব্রত পাল। গত বছর ক্রিকেটারদের বিদ্রোহের সময় একটি এজেন্ডা ছিল কোয়াব। সাকিবদের সেই আন্দোলনের পর কোয়াবের নতুন কমিটি হওয়ার উদ্যোগ ছিল।

করোনা ও নানাবিধ কারণে সেটা থমকে গেছে। তবে সামনে নতুন কমিটির আশাবাদ ব্যক্ত করলেন সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল, ‘দুর্জয় ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা ক্রিকেটারদের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি সব সময়। অবশ্যই নতুন নেতৃত্ব আসা দরকার। আশা করি এই বছরের মধ্যে আমরা নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে সক্ষম হবো।’ সামনে ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন। ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনের পরই কোয়াব নিয়ে কাজ হবে।

ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বর্তমান খেলোয়াড়দেরই এর নেতৃত্বে থাকা উচিত। আমরা আহবান জানিয়েছি অনেক আগেই। আগ্রহী কাউকে পাওয়া যায় না। ফলে সংগঠন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। শিগগিরই নতুন কমিটির উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।’ ১১ সেপ্টেম্বর ফুটবল খেলোয়াড় কল্যান কমিটির বিশেষ সভা রয়েছে।

হকি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক প্রিন্স নতুন নেতৃত্ব সম্পর্কে বলেন, ‘আমি ও বাপ্পী ভাই এক-দুই বছর আগেই দায়িত্ব ছাড়তে চেয়েছিলাম। আমাদের হকিতে শীর্ষ খেলোয়াড়রা সার্ভিসেস বাহিনীতে। তাদের কোনো সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব নয়। ফলে আমরা একটা সংকটে রয়েছি।’

খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি ও ফেডারেশন/বোর্ড হচ্ছে মুখোমুখি অবস্থান। ফুটবল এবং ক্রিকেট উভয় সমিতিতে বোর্ড/ফেডারেশনের প্রতিনিধিও। নাইমুর রহমান দুর্জয় আট বছর ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক। ইকবাল হোসেনও আট বছর ফেডারেশনের কমিটিতে ছিলেন। আরিফ খান জয় ফেডারেশনের সহ-সভাপতিও ছিলেন। হকি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক প্রিন্সও এক বছরের জন্য হকি ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটিতে ছিলেন!

আপনি আরও পড়তে পারেন