শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার খবরে খুশি শিক্ষার্থীরা, চিন্তায় অভিভাবকরা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার খবরে খুশি শিক্ষার্থীরা, চিন্তায় অভিভাবকরা

দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নমনীয় পর্যায়ে আসতে থাকায় পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যেই এসএসসি, এইচএসসিসহ স্থগিত থাকা বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সরকার এমন ঘোষণায় খুশি শিক্ষার্থীরা, ব্যস্ততা বেড়েছে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার সিদ্ধান্তে সন্তানদের টিউশন ফি, বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য ফি পরিশোধ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবক মহল। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর অভিযোগ, বকেয়া বেতনসহ পুনঃভর্তি ফি পরিশোধ করার জন্য বিদ্যালয় থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। যদিও শিক্ষা অফিস বলছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধুমাত্র টিউশন ফি নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

সম্প্রতি রংপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন তাজিদুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, তার ছেলে শাহরিয়ার হিমেল বর্ডার গার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সব অভিভাবককে পুনঃভর্তি ফি, বকেয়া বেতনসহ অন্যসব ফি প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। যা শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর সমতুল্য।

dhaka post

এদিকে করোনা পীড়িত সময়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন অভিভাবকদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন বেসরকারি (এমপিওভুক্ত, এমপিওবিহীন) কলেজগুলোকে শুধুমাত্র টিউশন ফি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ২৪ নভেম্বর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‌‌‌‌‌‌কলেজগুলো একাদশ-দ্বাদশ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি গ্রহণ করবে, কিন্তু পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি গ্রহণ করবে না। যদি করা হয় তা ফেরত দেবে অথবা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করবে। তবে যদি কোনো অভিভাবক চরম আর্থিক সংকটে পতিত হন, তাহলে তার সন্তানের টিউশন ফির বিষয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় নেবেন।

সরকারি এই নির্দেশনা অমান্য করে বেশির ভাগ কলেজ থেকে টিউশন ফি ছাড়াও অন্যান্য ফি দ্রুত পরিশোধের জন্য শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে। অনেক অভিভাবক বকেয়া বেতনসহ অন্য ফি মওকুফের জন্য আবেদনও করছেন। কেউ কেউ আবার অধিদফতরের নির্দেশনা না মেনে টিউশন ফি ছাড়া অন্যান্য ফি নেওয়ার বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। তবে ঝামেলা এড়ানোর ভয়ে এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে নারাজ বেশির ভাগ অভিভাবক। পুনঃভর্তিসহ বিভিন্ন ফি ও বকেয়া বেতন শুধু কলেজে নয়, স্কুলগুলো থেকেও চাওয়া হচ্ছে।

রংপুর নগরীর শালবন এলাকার শেখ শাহ্জাহান নামে এক ব্যবসায়ী কলেজের নাম না প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, করোনার মধ্যে স্কুল-কলেজ সবই বন্ধ ছিল। তারপরও ছেলেকে পুরো বেতন ও অন্যান্য ফি পরিশোধের জন্য ফোন করেছে শিক্ষক। এখন ঋণ করা ছাড়া একসঙ্গে এতগুলো মাসের বকেয়া টাকা পরিশোধ করার উপায় নেই।

dhaka post

আরেক অভিভাবক সোহরাব হোসেন জানান, তার মেয়েকেও বকেয়া পুরো বেতন পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এজন্য কয়েক হাজার টাকা প্রয়োজন। এত টাকা সংগ্রহ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তার মতো হাজারো অভিভাবক সন্তানদের বকেয়া বেতন নিয়ে চিন্তিত। বিষয়টি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

অন্যদিকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. রোকসানা বেগম জানান, কেউ যদি সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে, তা অবশ্যই অন্যায়। একটি লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে অন্য কোনো অভিভাবক এমন অভিযোগ দেননি।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস.আর ফারুক জানান, টিউশন ফি ছাড়া অন্যান্য ফি আদায়ের তেমন জোরালো কোনো অভিযোগ নেই। তাজিদুল ইসলাম নামে এক অভিভাবকের করা অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে শুধুমাত্র টিউশন ফি নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর বেশি নিলে সেটা বেআইনি। কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন