ডোপ টেস্টে ‘ধরা খাবেন’ চাকরিরত মাদকাসক্তরা

ডোপ টেস্টে ‘ধরা খাবেন’ চাকরিরত মাদকাসক্তরা

সরকারি চাকরিতে কর্মরত অনেকের বিরুদ্ধে প্রায়ই মাদক গ্রহণের অভিযোগ আসে। সেজন্য বছরে একবার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডোপ টেস্টের (মাদক পরীক্ষা) পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। চূড়ান্ত হতে যাওয়া ডোপ টেস্ট বিধিমালাতেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এরপর তা বাস্তবায়ন করবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়। এরপর থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন শাখায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ডোপ টেস্টের জন্য লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রত্যাশীদের তালিকা পাঠানো হচ্ছে। এবার কর্মরতদেরও ডোপ টেস্টের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়। এরপর থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন শাখায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ডোপ টেস্টের জন্য লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রত্যাশীদের তালিকা পাঠানো হচ্ছে। এবার কর্মরতদেরও ডোপ টেস্টের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কর্মরতরা বলছেন, বছরে একবার ডোপ টেস্ট হলে চাকরিরত মাদকাসক্তরা চিহ্নিত হবেন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ বিভাগের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আমরা প্রায়ই মাদক গ্রহণের অভিযোগ পাই। সেজন্য প্রতি বছর একবার ডোপ টেস্টের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্তরা ধরা খাবেন।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ডোপ টেস্টে যারা পজিটিভ হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে অন্যরাও সতর্ক হবেন।

গত ১৭ আগস্ট সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে মাদক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বছরে একবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ডোপ টেস্টের আওতায় আসবেন। যারা পজিটিভ হবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

dhakapost

পরিকল্পনাটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে— জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সমন্বয় করছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মাধ্যমে বিষয়টি বাস্তবায়ন হবে।

পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে চূড়ান্ত হতে যাওয়া ডোপ টেস্ট সংক্রান্ত বিধিমালায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আব্দুস সবুর মন্ডল। তিনি  বলেন, ‘এটি কীভাবে বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তা দেখা (পর্যালোচনা) হচ্ছে। যেভাবেই হোক, বিধিমালাতে আমরা বিষয়টি নিয়ে আসব।’

আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, চাকরির বিধিতে এটি (মাদক গ্রহণ) অনৈতিক। এটি অসদাচরণের শামিলের মধ্যেই পড়ে। আপনি অ্যালকোহল বা এ জাতীয় জিনিস বিনা অনুমতিতে গ্রহণ করতে পারবেন না, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এটি স্পষ্ট বলা আছে। তাই এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন- ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) এ ডোপ টেস্টের জন্য বিধিমালা প্রণয়নের কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। ওই আইনের আলোকে ‘ডোপ টেস্ট বিধিমালা ২০২১’ প্রণয়ন করছে সরকার। যা চূড়ান্ত হওয়ার পথে।

খসড়া বিধিমালায় বলা হয়, ডোপ টেস্টের রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ অর্থ হচ্ছে, মানবদেহে জৈবিক নমুনা পরীক্ষা করে মাদকদ্রব্যের উপস্থিতি পাওয়া। ‘নেগেটিভ’ অর্থ, মাদকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

খসড়া অনুযায়ী, ডোপ টেস্টের প্রয়োজন দেখা দিলে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এরপর জৈব নমুনা হিসাবে মূত্র, রক্ত, ঘাম, নখ, প্রশ্বাসের বাতাস, মুখের লালা ও মানবদেহের যেকোনো অঙ্গ বা অংশবিশেষ বা দেহের তরল সংগ্রহ করা হবে। টেস্টের কাজে ব্যবহারের পর নমুনার অবশিষ্টাংশ অন্তত ছয় মাস সংরক্ষণ করতে হবে।

ফলাফল পজিটিভ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মাদকাসক্ত বলে ঘোষণা করা যাবে। সেক্ষেত্রে মাদক সেবনে অভিযুক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণ ধারায় শাস্তি দেওয়া হবে

খসড়া বিধিমালায় আরও বলা হয়, ফলাফল পজিটিভ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মাদকাসক্ত বলে ঘোষণা করা যাবে। সেক্ষেত্রে মাদক সেবনে অভিযুক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী ‘অসদাচরণ ধারায়’ শাস্তি দেওয়া হবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, বিধিমালাটি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। চূড়ান্ত হলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

এদিকে, প্রতিদিন ১০০ ব্যক্তির ডোপ টেস্টের সক্ষমতা রয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের। বছরে একবার সরকারি চাকরিজীবীদের ডোপ টেস্টের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে অধিদফতরের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে।

এ বিষয়ে আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, এটি খুব বড় ইস্যু নয়। কারণ, লোকবল বাড়িয়ে দিলেই সক্ষমতা বেড়ে যাবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন