৩৮ লাখ টাকার পর্দা কোথায় কেনা হয়েছে জানেন না স্বাস্থ্যমন্ত্রী

৩৮ লাখ টাকার পর্দা কোথায় কেনা হয়েছে জানেন না স্বাস্থ্যমন্ত্রী

৩৮ লাখ টাকার পর্দা কোথায় কেনা হয়েছে, তা জানেন না বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তিনি এ দাবি করেন।

বুধবার জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট বিলের ওপর বিরোধীদলীয় সাংসদদের জনমত যাচাইয়ের আলোচনার পর বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

জাহিদ মালেক বলেন, বিএনপির হারুন সাহেব বলেছেন, ৩৮ লাখ টাকা দিয়ে পর্দা কেনা হয়েছে। কিন্তু এটি কোথায় হয়েছে, আমার জানা নেই। এটি কেনা হয়নি। ভুল তথ্য দিলে জনগণ ভুল বুঝে। এটি সঠিক নয়।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০ হাজার ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে যন্ত্রপাতি রয়েছে। এসব ব্যবহার হলে একটা সময় পর নষ্ট হয়ে যায়। এক সময় এগুলো ঠিক করতে হয়। যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। তা আমরা করে যাচ্ছি।

জাতীয় সংসদ বিরোধীদলীয় সাংসদদের বক্তব্যে উঠে আসা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনাকে ইতিবাচক উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমি সমালোচনা পছন্দ করি। কারণ এটি আমাকে শক্তিশালী করে। এ সমালোচনা অবশ্যই সঠিক হতে হবে। বাংলাদেশে ৩৮টি মেডিকেল কলেজ হয়েছে। আপনারা (বিএনপি) একটিও যে করেননি, সেই কথা বলিনি।

বিএনপির সাংসদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা টিকার কথা বলেছেন, তিন হাজার টাকা। আপনাকে তো আগে জানতে হবে। তারপর বলতে হবে। অর্ধেক নয়, আপনাকে পুরো বিষয় নিয়েই বলতে হবে। যখন টিকা দেওয়া হয়, তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে দেওয়া হয়। এর সঙ্গে জনবল, সংরক্ষণাগার জড়িত। এখানে শুধু টিকার দাম তিন হাজার টাকা নয়।

এর আগে, বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, বিএনপির সময় কি কোনো হাসপাতালে ৩৮ লাখ টাকা দিয়ে পর্দা কেনা হয়েছিল? এ ধরনের কোনো ঘটনা আছে? আজ গত দশ বছরে যে হাজার হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো ব্যবস্থা আছে?

তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপি ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। তিনি (মন্ত্রী) তথ্য দিতে পারবেন যে, কত লাখ মানুষ বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। এসব কথা আলোচনায় নিয়ে আসুন। বাংলাদেশে ১৩ বছর আপনারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় আছেন। দেশের গণতন্ত্রের সূচক কোথায় আছে? এমন কোনো বিভাগ নেই, যা নিয়ে গণমাধ্যমে দুর্নীতির খবর প্রকাশ হচ্ছে না। এগুলো পড়ুন।

বিএনপি দলীয় এ সংসদ সদস্য বলেন, আজ সরকার দলের সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়াচ্ছেন যে, বিএনপি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আজ আমরা লজ্জায়, গত ১২ বছরে ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। আধুনিক প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে। আজ অহেতুক দোষারোপ না করে আমরা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। গণতন্ত্রের যে সঙ্কট চলছে, গণতন্ত্রের যে সঙ্কট দাঁড়িয়ে গেছে, সেই সঙ্কট থেকে আমরা কীভাবে বেরিয়ে আসব, মানুষের ভোটাধিকার আমরা কীভাবে নিশ্চিত করব, আসুন সেসব নিয়ে আলোচনা করি।

সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন সমালোচনার জবাব দিতে উঠে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, তারা বেশ এনার্জি নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন। চালিয়ে যান, আমিও চালিয়ে যাবো আপনাদের সঙ্গে। কাজেই কোনো অসুবিধা হবে না। আপনারা দোষ-ত্রুটি খুঁজে পাবেনই। সমুদ্রের মধ্যে দুই বালতি ময়লা ফেললে সমুদ্র নষ্ট হয়ে যাবে না, পানি নষ্ট হয়ে যাবে না।

বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে আমরা স্বাস্থ্যখাতে কী করেছি, আর আপনারা কি করেছিলেন, তা একটু তুলে ধরতে চাই জনগণের সামনে।

বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমরা জানি আপনারা কী বলতে পারেন। তাই আজ প্রস্তুত হয়ে এসেছি। সারাদিন লাগবে। কমিউনিটি ক্লিনিক ছিল ১৪ হাজার, প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন, যেখানে ৩০ রকমের ওষুধ ফ্রি দেওয়া হতো। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। আপনারা এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, আর্টারি ব্লকের সঙ্গে করোনার তুলনা করলেন, স্বাস্থ্য সেবার তুলনা করলেন। একটা হিসাব বের করলেন। একজন আইনজীবী এটি করতে পারেন, কিন্তু একজন চিকিৎসক তা করতে পারেন না।

স্বাস্থ্যসেবায় উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার কথা তুলে ধরেন মন্ত্রী বলেন, আপনাদের সময় কী হয়েছে আমরা জানি না।

এ সময় সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে বলতে থাকেন, দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। এতে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আপনাদের (বিএনপি) সময় দুর্নীতির কারণে মানুষ মারা গেছে, গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশে আমরা তো উন্নয়ন করে পুরস্কার পেয়েছি। আর আপনারা পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। আমরা আর কিছু বলতে চাই না। আপনাদের বিষয়ে বলতে গেলে আমার সময় শেষ হয়ে যাবে। আজ পার্লামেন্ট জমছে ভালো। আপনারা কথা বলবেন আমরাও কথার উত্তর দেব।

আপনি আরও পড়তে পারেন