একনেকে ৬টি সড়কের অনুমোদন সুফল পাবে নওগাঁবাসী

একনেকে ৬টি সড়কের অনুমোদন সুফল পাবে নওগাঁবাসী

বিকাশ চন্দ্র প্রাং:

নওগাঁর ৩টি আঞ্চলিক ও ৩টি জেলা মহাসড়কের ১৫৯ দশমিক ৬৭৮কিমি অংশের যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরন প্রকল্পকে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২২মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক সভায় এই অনুমোদন প্রদান করেন। বাস্তবায়নের পর জেলার এই ৬টি মহাসড়কের মাধ্যমে নওগাঁবাসী আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নওগাঁ সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, একনেকে যে ৩টি আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্থতায় উন্নীতকরণের কাজ অনুমোদন পেয়েছে সেগুলো হচ্ছে বগুড়া-নওগাঁ-মহাদেবপুর-পত্নীতলা-ধামইরহাট-জয়পুরহাট সড়কের (আর-৫৪৫) (চৌমাসিয়া হতে মঙ্গলবাড়ি) ৫১ দশমিক ৪৯৮কিমি, নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের সান্তাহার (নওগাঁ)-আত্রাই সড়কের (আর-৫৪৪) (সান্তাহার ঢাকা মোড় হতে রাণীনগর রেল ষ্টেশন) ৮কিমি, নওগাঁ-বদলগাছী-পত্নীতলা-সাপাহার-পোরশা-রহনপুর সড়কের (আর-৫৪৭) (নওগাঁ হতে পত্নীতলা) ৩৩কিমি আর ৩টি জেলা সহাসড়কগুলো হচ্ছে মহাদেবপুর-সরাইগাছী-পোরশা সড়কের (জেড-৫৪৫৬) ৩৭ দশমিক ৯৩০কিমি, জয়পুরহাট-আক্কেলপুর-বদলগাছী সড়কের (জেড-৫৪৫২) (বদলগাছী হতে আক্কেলপুর) ১১কিমি এবং মান্দা-নিয়ামতপুর-শিবপুর-পোরশা সড়কের (জেড-৬৮৫২) (মান্দা ফেরীঘাট হতে নিয়ামতপুর তিন মাথা) ১৮ দশমিক ২৫০কিমি অংশ যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরনের লক্ষ্যে ১১৮২ দশমিক ৪৯ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে মোট ১৫টি প্যাকেজ রাখা হয়েছে। প্রকল্পে ৪৩ দশমিক ৪৮হেক্টর জমি অধিগ্রহণের জন্য ২৫০ দশমিক ৯৯কোটি টাকা, ১৫ দশমিক ৮০২লক্ষ ঘনমিটার সড়ক বাঁধ নির্মাণ/ প্রশস্থকরনের জন্য ৫৭ দশমিক ৫২কোটি টাকা, শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে ১কিমি সড়ক ৪-লেন নির্মাণের জন্য ৯ দশমিক ৫৭কোটি টাকা, ১১৯ দশমিক ৩৫কিমি সড়ক প্রশস্থকরনের জন্য ১০১ দশমিক ৫৯কোটি টাকা, ৭.৩০মিটার সড়ক পুন:নির্মাণের জন্য ৪ দশমিক ৬৬কোটি টাকা, ১৩০ দশমিক ০৮কিমি সড়ক মজবুতীকরণের জন্য ১১৮ দশমিক ৪০কোটি টাকা, ১৪৫ দশমিক ২৩কিমি সড়ক সার্ফেসিংয়ের জন্য ৩০৫ দশমিক ২৪কোটি টাকা, ১৩ দশমিক ৪৫কিমি রিজিড পেভমেন্টের জন্য ১০৮ দশমিক ২৪কোটি টাকা, ৮৪মিটার কালভার্ট (২০টি) নির্মাণের জন্য ১৩ দশমিক ১১কোটি টাকা, ২৭২৯৫মিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণের জন্য ৩৩ দশমিক ৯৫কোটি টাকা, ১৪৪২৮মিটার প্যালিসাইডিং/টো-ওয়াল নির্মাণের জন্য ১৬ দশমিক ৯০কোটি টাকা, ৫২টি বাস-বে/যাত্রী ছাউনী নির্মাণের জন্য ১৩কোটি টাকা, ৪০০৯৭ দশমিক ৫০বর্গমিটার রোড মার্কিং/সাইন সিগন্যাল ইত্যাদি কাজের জন্য ৩৭ দশমিক ৫৩কোটি টাকা, ৪টি ইন্টার সেকশন উন্নয়নের জন্য ২৭ দশমিক ৫৫কোটি টাকা, ইউটিলিটি শিফটিং (থোক) এর জন্য ৪ দশমিক ৫৫কোটি টাকা ও অন্যান্য দফার জন্য ৭৯ দশমিক ৬৯কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়দের দাবী সময়ের প্রেক্ষিতে এই ৬টি মহাসড়কসহ অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ন সড়কগুলো দীর্ঘদিন যাবত প্রশস্ত, সংস্কার কিংবা নতুন করে মেরামত না করার কারণে এই অঞ্চলগুলোতে বসবাসরত মানুষরা বছরের পর বছর চরম ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছিলো। বেহাল সড়কের কারণে কৃষিভিত্তিক এই অঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিলো। এই সড়কগুলো যদি বরাদ্দ অনুসারে সঠিক নিয়ম ও মানে নতুন করে নির্মাণ করা হয় তাহলে এই অঞ্চলগুলোর মানুষরা কম সময়ে নওগাঁ শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুব সহজেই যাতায়াত করতে সক্ষম হবে।

নওগাঁর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো আধুনিকায়ন করতে এই অনুমোদন দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছে পুরো নওগাঁবাসী ও নওগাঁর সচেতনমহল। সীমান্তবর্তি এই নওগাঁর অবশিষ্ট প্রধান সড়কসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের আনাচে-কানাচের রাস্তাগুলোকে আধুনিকায়ন করে ডিজিটাল মহাসড়কের সঙ্গে নওগাঁবাসীকে যুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর এমন উপহার আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদী নওগাঁবাসী।

নওগাঁ সড়ক (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সাজেদুর রহমান বলেন, আগামী ৬মাসের মধ্যে সকল প্রক্রিয়া শেষে ৬টি মহাসড়কের শুরু হওয়া দৃশ্যমান কাজ নওগাঁবাসী দেখতে পাবেন। বরাদ্দ অনুসারে সঠিক নিয়ম ও মান বজায় রেখেই কাজগুলো সম্পন্ন করতে যা যা করার প্রয়োজন নওগাঁ সড়ক বিভাগ তাই করবে। তিনি আরো বলেন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সড়কগুলোর আশেপাশের বাসিন্দাসহ পুরো নওগাঁবাসী ও তার আশেপাশের অঞ্চলের মানুষরা এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। বিশেষ করে রোগী বহন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, কৃষকদের পণ্য বাজারজাত করাসহ বিভিন্ন স্থানে পরিবহনের ক্ষেত্রে নতুন ভাবে নির্মিত এই মহাসড়কগুলো মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। নতুন করে কোন দুর্যোগ কিংবা জটিলতার সৃষ্টি না হলে প্রকল্পের মেয়াদ অনুসারে নওগাঁ সড়ক বিভাগ আগামী ২০২৪সালের ৩০জুনের মধ্যেই ৬টি মহাসড়কের সকল কাজ সম্পন্ন করতে পারবে বলে আমি আশাবাদী।

আপনি আরও পড়তে পারেন