সরকারি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন কেন ঠিক হয় না?

সরকারি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন কেন ঠিক হয় না?

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কতখানি জটিল তা হয়তো ব্যবস্থাপক চেয়ারে না বসলে বুঝতাম না। জটিলতা পরিহার করে সাধারনের বোঝার জন্য একদম সহজভাবে লেখার চেষ্টা করছি।

একটি উদাহরন দেই- ধরুন, এক্স-রে নষ্ট।

কোনো প্রাইভেট ক্লিনিকে হলে মালিক ডায়রেক্ট ইঞ্জিনিয়ারকে ফোন করে ডেকে ঠিক করে টাকা পরিশোধ করে দেবে। শেষ।

কিন্তু সরকারি হাসপাতালে কী হবে?

সরকারি হাসপাতালে হলে সেটা নষ্ট কি নষ্ট নয়, সেজন্যই চিঠি ইস্যু করতে হবে নিমিউতে। চিঠি লিখে যোগাযোগ, লিঁয়াজো সব শেষে তাদের তরফে টেকনিশিয়ান আসবে যার কাগজের কোনো ঠিক থাকবে না। এরপর টেকনিশিয়ান এসে বলে যাবে, নষ্ট হয়েছে নাকি মেরামতযোগ্য। এরপর টিএ-ডিএ শিটে সাইন নিয়ে চলে যাবে। পুনরায় তার প্রত্যয়ন নিয়ে চিঠি লিখে নিমিউতে জানাতে হবে, নষ্ট, ঠিক করে দেন। আবার টেকনিশিয়ান আসবে। দেখবে। বলবে সব নাট-বল্টু সাথে আনি নাই। আবার পরে আসবে। মাঝের টিএডিএ বিলে স্বাক্ষর। ইতোমধ্যে একবছর শেষ। প্রশাসক বিরক্ত হয়ে লোকাল বাজেট থেকে জোড়াতালি দিয়ে ঠিক করবে৷ কয়েকদিন চালাবে, তারপর আবার বন্ধ।

হাসপাতালের প্রশাসক চেঞ্জ, সব ঢাকা পরে যাবে। ২ বছর পর হঠাৎ উর্ধ্বতনদের ঠেলা খেয়ে কিছু ডিপার্টমেন্ট নড়েচড়ে বসবে। আবার শুরু হবে চিঠি চালাচালি, যোগাযোগ, লিঁয়াজো। ইতোমধ্যে আগের সকল চিঠি হারিয়ে যাবে। স্টোরকিপার না থাকায় তালগোল পাকিয়ে যাবে সকল পত্র।

আবার টেকনিশিয়ান আসবে পূর্বের কাগজ নিয়ে। এসে সার্ভে করে প্রতিবেদন দিবে, আরো বেশ কিছু নাট-বল্টু নষ্ট।  বড় মাপের ঠেলা খেলে দ্বিতীয়বার এসে এক্স-রে ঠিক করে দিয়ে যাবে। চালু হবে।

এবার সমস্যা শুরু হবে এক্স-রে কে চালাবে। টেকনিশিয়ান নেই। লবিং, লিঁয়াজো, পত্র চালাচালি, স্বশরীরে দেখা — টেকনিশিয়ান আর পাওয়া যাবে না। উর্ধ্বতনদের চাপাচাপিতে পাশের কোনো উপজেলার একজন টেকনিশিয়ানকে দুইদিন করে সার্ভিস দেয়ার জন্য অর্ডার করা হবে। অর্ডার পেয়েই সেই টেকনিশিয়ান শুরু করবে লবিং৷ যিনি অর্ডার করেছেন, তাকে বিভিন্ন মহল থেকে ফোনের পর ফোন দিয়ে নাজেহাল করে ছাড়া হবে।

সর্বশেষ অর্ডার সাসটেইন করে গেলে মনক্ষুন্ন হয়ে টেকনিশিয়ান সার্ভিস দেয়া শুরু করবে। কিন্তু সর্বোচ্চ একমাস। এক্স-রে আবার নষ্ট। টেকনিশিয়ান নিয়োগের ব্যর্থতার দায়ভার যাদের নেয়ার কথা তারা গায়ে বাতাস লাগিয়ে বেড়াবে। তারা নিয়োগে ব্যর্থ, তারা তাদের প্রশাসনিক কাজে অদক্ষ এটা কোথাও বলা হবে না। মাঝখান থেকে ধুঁকবে মাঠ, বঞ্চিত হবে জনগন।

এই সাইকেল চলতেই থাকবে। মাঝে এক্স-রে মেশিনের জিহবা বের হয়ে যাবে। কনডেমনেশন করার জন্য চিঠি লিখে আবার বসে থাকতে হবে। এটা আরেক কাহিনী। ১৫/২০ বছর ধরে পরে থাকবে নষ্ট মেশিন। অডিট এসে আপত্তি দিয়ে যাবে প্রশাসকের নামে। দোষের ভাগীদার হবে স্বাস্থ্য প্রশাসক। জনগনও তাদের ভালো চোখে দেখবে না, উর্দ্বতনরাও তাদের গায়ে দোষ চাপিয়ে বলবে তার মাঝে লিডারশিপ নেই। বিগত ৫০ বছর এভাবেই চলছে। প্রকৃত সমস্যার সমাধান না করে স্ট্যান্টবাজি করলে আগামী ৫০বছরের স্বাস্থ্য ঠিক হবে না।

সমস্যা হলো, অনভিজ্ঞদের পক্ষে মাঠের প্রকৃত সমস্যা অনুধাবন করা সম্ভব না, আবার এই সত্যগুলো কোনো স্বাস্থ্য প্রশাসক বললেই তার উপর অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে। এভাবে একটা সিস্টেম আসলে রান করতে পারে না।

আপনি আরও পড়তে পারেন