অবৈধ ট্রাক্টর-ট্রলিতে সড়কের বেহাল দশা, বাড়ছে দুর্ঘটনা

অবৈধ ট্রাক্টর-ট্রলিতে সড়কের বেহাল দশা, বাড়ছে দুর্ঘটনা

বড়াইগ্রামের সড়ক-মহাসড়কগুলো বৃষ্টির আগে ধুলা ও বৃষ্টির পর কাদায় মাখামাখি হয়ে উঠেছে। বড়াইগ্রাম ও বনপাড়া পৌর এলাকাসহ উপজেলার প্রায় সব সড়ক-মহাসড়কেই এমন অবস্থা বিরাজ করছে। ফসলি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন করে অবৈধ ট্রাক্টর-ট্রলিতে বহনের সময় মাটি পড়ে পাকা সড়কগুলোর এমন বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

গত তিন দিন থেকে হালকা বৃষ্টিতে এসব মাটি কাদায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে কাদার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। পথচারীদের পায়ে হেঁটে চলাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো রাস্তায় চালকরা রিকশা-ভ্যান নিয়েও যেতে চাচ্ছেন না। জনসাধারণের এমন ভোগান্তিতে এ ঘটনায় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসন যেন নীরব দর্শক। অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে অবৈধ ট্রাক্টর ও মাটি কারবারিরা।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সরকারি ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উপজেলার সর্বত্র অবাধে ফসসি জমিতে পুকুর খনন চলছে। সেসব পুকুরের মাটি অবৈধ ট্রাক্টর-ট্রলি চালকরা নাটোর-পাবনা এবং বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক ও আহম্মেদপুর-গুরুদাসপুরসহ উপজেলার দুটি পৌরসভা ও গ্রামীণ পাকা সড়ক দিয়ে অবাধে পরিবহন করে আসছে।

কখনো কখনো প্রশাসন বাধা দিলে মাটি দস্যুরা রাতে এসব সড়ক-মহাসড়কে মাটি বহন করছে। বহনের সময় সড়কজুড়ে মাটি পড়ে পুরু আস্তরণ সৃষ্টি হয়েছে। এসব মাটি থেকে বৃষ্টির আগে প্রচণ্ড ধুলা ও বৃষ্টির পরে সড়কে কাদায় মাখামাখি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেখে মনে হয় ইটের খোয়া, পাথর ও বিটুমিনের পরিবর্তে মাটি দিয়ে নির্মাণ করা সড়ক।

এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সড়কে চলা বাস, ট্রাক, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ভ্যান, মোটরসাইকেলচালক ও পথচারীরা। প্রায়ই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। যে কোনো মুহুর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নাটোর-পাবনা মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গা, আহম্মেদপুর-গুরুদাসপুর সড়ক, রয়না মোড়-জোনাইল সড়ক, আহম্মেদপুর-কুমরুল সড়ক, লক্ষ্মীকোল-কয়েনবাজার সড়কসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক ও গ্রামীণ পাকা সড়কগুলো কর্দমাক্ত মাটির রাস্তায় পরিণত হয়েছে। এতে যে শুধু যান চলাচলই বিঘ্ন হচ্ছে তা নয়, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাদায় পরিপূর্ণ রাস্তায় পথচারীরা হেঁটেও চলতে করতে পারছেন না। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন সাইকেল ও মোটরসাইকেলচালকরা। তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। পিছলে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।

উপজেলার আহম্মেদপুর এলাকার ডা. মামুনুর রশিদ জানান, ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পাকা সড়কে কাদায় পিছলে পড়ে গেছি।

মাড়িয়া এলাকার ডাক বিভাগের কর্মচারী মো. আশরাফ আলী বলেন, রাস্তাগুলোর এমন বেহাল অবস্থা, অথচ দেখার যেন কেউ নেই। বাড়ি থেকে অফিসে যাওয়ার পথে আমার সামনেই কয়েকজন মোটরসাইকেলচালক পিছলে পড়ে আহত হয়েছেন। আমিও পড়তে পড়তে অল্পের জন্য বেঁচে গেছি।

কলেজছাত্র রাকিবুল হাসান রকি জানান, সরকার রাস্তা পাকা করে দিয়েছে, কিন্তু বর্তমানে পুরো রাস্তাজুড়ে কাদা। হাঁটার মতো কোতো জায়গা নেই। উপজেলার খাকসা এলাকার উজ্জল জানান, বারবার মানববন্ধনসহ আন্দোলন করে বড়াইগ্রাম থানা মোড়-রয়না ভরটহাট রাস্তার সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। অথচ প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাটিও ট্রাক্টরের মাটি পড়ে কাদা হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. মারিয়াম খাতুন জানান, অবৈধ পুকুর খনন ও রাস্তা দিয়ে বহন বন্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে তৎপরতা আরও বাড়ানো হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন