চলমি মৌসুমে চার বিঘা জমিতে ভুট্টা ও পাঁচ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছিলেন আব্দুস সালাম (৩৫)। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। সেই শিলাবৃষ্টিতে আব্দুস সালামের সব ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি ভেবেছিলেন ফসলগুলো আবার উঠে দাঁড়াবে। কিন্তু দিন যতই যায় ফসলের উন্নতি না দেখে আব্দুস সালাম হতাশ হয়ে পড়েন।
ধার দেনা করে ধান ও ভুট্টার আবাদ করেছিলেন তিনি। একদিকে ফসলের ক্ষতি অন্যদিকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। হতাশায় ১ মার্চ দুপুরে মাঠ থেকে ফিরে বাড়িতে থাকা কীটনাশক পান করেন আব্দুস সালাম। পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার অবস্থার অবনতি হলে দুই দিন পর উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তার বাঁচার আশা ছেড়ে দেন। মৃতপ্রায় অবস্থায় গত মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সকালে আব্দুস সালামকে বাড়িতে আনা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ওইদিন বিকেলে তাকে আবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (৯ মার্চ) সকালে মারা যান তিনি।
আব্দুস সালাম চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের ঝোড়াঘাটা মাঠপাড়ার আব্দুস সাত্তারের ছেলে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, শিলাবৃষ্টিতে চার বিঘা জমির ভুট্টা ও পাঁচ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে যায়। ধারদেনা করে ফসল ফলিয়েছিলেন। এতে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। যন্ত্রণা সইতে না পেরে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
স্থানীয়রা জানায়, আব্দুস সালাম খুবই দরিদ্র ছিলেন। কৃষিকাজ করেই তিনি সংসার চালাতেন। ধারদেনা করে যে ফসল ফলিয়েছিলেন, শিলাবৃষ্টিতে তা সব নষ্ট হয়ে গেছে। এ জন্য ঋণের টাকা ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দেখে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
আলুকদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিলাবৃষ্টিতে এলাকায় প্রচুর ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে আব্দুস সালামের ভুট্টা ও ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। একদিকে ফসলের ক্ষতি, অন্যদিকে ঋণের বোঝা। ফলে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবায়ের মাসরুর বলেন, আমরা আব্দুস সালামের আত্মহত্যার বিষয়টি জেনেছি। তার ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা আব্দুস সালামসহ ক্ষতিগ্রস্ত সবার তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, শিলাবৃষ্টিতে সদর উপজেলার ছয় ইউনিয়নে মোট ২৩৩ কোটির টাকার ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, অভিযোগ না থাকায় সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে ময়নাতদন্ত ছাড়াই আব্দুস সালামের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার রাতে গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টা ১০ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টি হয়। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বড় বড় শিলা পড়তে থাকে। টানা প্রায় ১৮ মিনিট ধরে শিলাবৃষ্টিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অনেকে।