Tag: তসলিমা নাসরিন

তসলিমা নাসরিন | তসলিমা নাসরিনের অশ্লীল লেখা | দৈনিক আগামীর সময়

তসলিমা নাসরিন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত উৎসবে তরুণীদের খোলা পিঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান বিকৃত করে লেখা অশ্লীল শব্দের পক্ষে সাফাই গাইলেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। গতকাল শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিষয়টি নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।

তসলিমার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো-

‘ইউটিউবে গাঁজা খেয়ে বেসুরো গান গায় গালিবাজ রোদ্দুর রায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারও ভক্ত তৈরি হয়। একটি চাঁদ উঠেছিল গগনের ভিডিওতে তো প্রায় ৬০ লাখ লাইক পড়েছে। এর নাম বাস্তবতা। এর নাম আমাদের সময়, যে রকমই এই সময় হোক, এ আমাদের সময়।

এক সময় দেবব্রত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে রবীন্দ্র সঙ্গীত বিকৃত করার অভিযোগ উঠেছিল, সেই অভিযোগও আর নেই, সেই রক্ষণশীলতাও নেই, দেবব্রত বিশ্বাস বরং তার সব বিকৃতি নিয়েই আগের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। আজকাল রোদ্দুর রায় জাতীয় লোকেরা রবীন্দ্র সঙ্গীত বিকৃত করছে। বিকৃত করাটাও কিন্তু এক ধরনের বাক স্বাধীনতা। তার যা খুশি সে তা বলছে, যেভাবে গান গাইতে ইচ্ছে করে, সেভাবে গাইছে। তার কিছু ভক্ত যদি শরীরে তার ফাজলামো ইতরামো এঁকে ঘোরাফেরা করে, তাতে কার কী ক্ষতি? এইসব বাঁড়া, শালা, বাঞ্চোত শব্দগুলো মূলত মানুষের তৈরি এবং ব্যবহৃত কোনো শব্দকেই রোদ্দুর রায় অশ্লীল বলে মনে করে না। সে মনে করে দারিদ্র্য অশ্লীল, প্রতারণা অশ্লীল, ঘৃণা অশ্লীল, হত্যাকাণ্ড অশ্লীল, যুদ্ধ অশ্লীল।

অশ্লীলতা ব্যাপারটা তো আসলে আপেক্ষিক, একজনের কাছে যা অশ্লীল, আরেকজনের কাছে তা অশ্লীল নয়। যে ভদ্রলোকেরা এই শব্দগুলোকে অশ্লীল বলছে, তাদের অনেকে মনে মনে এসব শব্দ বহুবার উচ্চারণ করে, অথবা এই শব্দগুলো তারা ঘরে বলে, বাইরে বলে না। বাইরে নকল হলেও ঝলমলে একটা সমাজ তারা দেখতে চায়। ১০০ বছর আগে যেমন ভাবে মানুষ চলতো, যেমন ভাবে বলতো, তেমন ভাবে আজও চলুক বলুক চায়।

কিন্তু সমাজ তো বদলে যাচ্ছে, আগের মতো কেন থাকবে সবকিছু! বদলের চাকা কিন্তু সবসময় ওপরের দিকে ওঠে না, নিচের দিকেও গড়ায়। বদলটা মনের মতো না হলে কান্নাকাটি করার তো দরকার নেই। বুঝতে হবে এই সমাজ এই মানসিকতা হঠাৎ আকাশ থেকে পড়েনি। একেই আমরা সকলে মিলে একটু একটু করে তৈরি করেছি। কোলকাতার শাসকেরা তো বাংলা অন্তপ্রাণ নিরীহ নিরপরাধ তসলিমাকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে, ওই তাড়ানোর চেয়ে কি বাঁড়া শব্দটি বেশি অশ্লীল?

মানুষ এখনো অন্যায়ের ভেতর ততটা অশ্লীলতা দেখে না, যতটা দেখে দু’চারটা শব্দে এবং অঙ্গভঙ্গিতে। খুনোখুনিতে অশ্লীলতা দেখে না, যৌনসঙ্গমে দেখে। রবীন্দ্রনাথের যুগে ছোটরা বড়দের চোখে তাকিয়ে কথা বলতো না, এখন ছোটরা বাপকেও বলে দেয়, ‘ফাক, হোয়াট বুলশিট আর ইউ টকিং ম্যান!’ এসবকে যদি আমরা বিবর্তন বলি, আধুনিকতা বলি, স্মার্টনেস বলি, তবে মেয়েদের পিঠে হাস্যরসের জন্য লেখা ‘বাঁড়া চাঁদ উঠেছিল গগনে’ দেখলে আমরা আঁতকে উঠি কেন?

কে বলেছে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে হাস্যরস করা যাবে না? ভগবানকে নিয়ে করা যায়, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যাবে না কেন? যারা রবীন্দ্রনাথের দিকে কারোর ভেংচি কাটা বা কাদা ছোঁড়া দেখে বিচলিত হয়ে পড়ে, রবীন্দ্রনাথকে বর্ম পরাতে চায়, তারা তার উচ্চতা সম্পর্কে সম্ভবত কিছুই জানে না।

বাঙালিরা আমেরিকার সমাজে বাস করার জন্য বড় ব্যাকুল। আমেরিকায় কি শুধু ডিগ্রি আর ডলারই ভেসে বেড়াচ্ছে, গালি ভাসছে না? নতুন প্রজন্ম ‘ফাক’ শব্দটি ছাড়া ক’টা বাক্য বলে শুনি! আমরা ছেলেমেয়েদের আমেরিকার স্বপ্ন দেখাব, আমেরিকার ফিল্ম দেখাব, হিপহপ শোনাব, কিন্তু বাংলা সংস্কৃতিকে ভালো না বাসলে, বাংলা গানকে বিকৃত করলে বা আমেরিকানদের মতো গালিগালাজ করলে কপাল থাপড়াবো, তা কেন?

চোখের জল মুছে ফেলে তার চেয়ে সন্তান সন্ততিদের এই শিক্ষা দিন ভাষা তার যাই হোক, কোনোদিন যেন প্রতারণা না করে, যেন কাউকে নির্যাতন না করে, যেন বর্বর না হয়, যেন লোভী না হয়, স্বার্থান্ধ না হয়। জগত হয়তো এর চেয়ে বেশি কিছু কারও কাছ থেকে চায়ও না।’

উল্লেখ্য, বসন্ত উৎসবে কয়েকজন তরুণী হলুদ শাড়ি পরে পিঠে লিখেছেন অশ্লীল শব্দ। একইভাবে বুকে অশ্লীল শব্দ লিখেছেন কয়েকজন তরুণ। গত বৃহস্পতিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত উৎসবে অংশ নেন ওই তরুণ-তরুণীরা। তাদের সেই ছবি ও ভিডিও প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় সমালোচনা।

এর জেরেই পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যাল্যয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী। গতকাল শুক্রবার ঘটনার নৈতিক দায় নিজের কাঁধে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি।

অশ্লীলতা, পর্ণোগ্রাফী
এবং তসলিমা নাসরিন
-আনু মুহাম্মদ
(বিজ্ঞানচেতনার পাঠকদের জন্য লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো।)
বাংলাদেশ সরকার এ পর্যন্ত তসলিমা নাসরিন-এর বেশ কয়েকটি বই নিষিদ্ধ করেছে। সবগুলো বই নিষিদ্ধ করবার পেছনে প্রধান যুক্তি দেয়া হয়েছিল ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত। এই নিষেধাজ্ঞা সিরিজ-এ সর্বশেষ বই ’ক’। এবারের নিষেধাজ্ঞা আগেরগুলোর থেকে ভিন্ন। এবারের বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার নয়, আদালত। আদালত এই নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে আরেকজন বিখ্যাত লেখক সৈয়দ শামসুল হক-এর আবেদনক্রমে। কোন লেখক বই নিষেধাজ্ঞার জন্য আবেদন করছেন এরকম ঘটনা সারা বিশ্বেই বিরল।
প্রায় বছর দশেক আগে ব্ল্যাশফেমী আইন করবার চক্রান্তের প্রতিবাদে আমরা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের নেতৃত্বে লেখকদের একটি প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করেছিলাম। এধরনের আইন পাকিস্তানে আছে এবং বাংলাদেশে এর ক্ষুদ্র একটি সংস্করণ এখনও আছে। এটাকে আরও পোক্ত করে বসানোর জন্য জামাত সংসদে একটি প্রস্তাব পেশ করেছিল। এধরনের আইনের মোদ্দা কথা হল কেউ যদি ধর্ম (এক্ষেত্রে ইসলাম ধর্ম), সম্পর্কে কিংবা নবী সম্পর্কে কটূক্তি করে তাহলে তা হবে কঠোর দন্ডনীয় অপরাধ এবং এর জন্য তাকে কঠোর সাজা পেতে হবে।
কাকে বলা যাবে কটূক্তি? কোন কথা দিয়ে বোঝা যাবে যে কেউ মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেছেন? ধর্মের প্রতি অশ্রদ্ধা বলতে আসলে কী বোঝায়? এসবের সংজ্ঞা ও সীমা নির্ধারণ কঠিন। আরও কঠিন তাতে সকলের একমত হওয়া। তাছাড়া সমালোচনা, পর্যালোচনা, বিরোধিতা আর কটূক্তি এক কথা নয়। ধর্ম সম্পর্কে কেন কোন বিষয়েই কটূক্তি কোন রূচির পরিচয় দেয় না। আবার সকল মত পথ নিয়ম বিধি অনুশাসন এমনকি ধর্মেরও সমালোচনা, পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ তো বটেই এসবের বিরোধিতার অধিকারও খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে সমাজে এই অধিকার অস্বীকৃত থাকে, যে সমাজে মানুষ এই নিষেধাজ্ঞা মাথা পেতে নেয় সেই সমাজে চিন্তা অগ্রসর হতে পারে না, সেই সমাজ নতুন কিছু সৃজন করতে পারে না, সেই সমাজ একই বৃত্তে শুধু যে ঘোরে তাই নয় সেখানে ক্ষয় ধরে, পচন ধরে।
ব্ল্যাশফেমী ধরনের আইনের সমস্যা হল এধরনের আইন কটূক্তি, অশ্রদ্ধা কিংবা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বিরোধিতা করবার কথা বলেই আসে কিন্তু তার মূল লক্ষ্য থাকে সমাজে রাষ্ট্র বা ক্ষমতা অনুমোদিত মত বা পথ-এর বিরোধিতা এমনকি সবরকম সমালোচনা, পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ দূর করবার ব্যবস্থা করা। ধর্মের নাম করে সবরকম নতুন চিন্তা ভাবনা এমনকি ধর্মীয় কাঠামোয় নতুন চিন্তার পথও রুদ্ধ করা। এ ধরনের আইন প্রবর্তনের উদ্যোগ তাই নতুন চিন্তা আর সৃজনশীলতার ব্যাপারে আগ্রহী সকলকে আঘাত করে। বাংলাদেশে এই আইন প্রবর্তনের ব্যাপারে জামাতের অপচেষ্টার প্রতিবাদে আয়োজিত আমাদের সমাবেশে তাই শরীক হন বিভিন্ন দল মতের লেখক শিল্পীরা। সৈয়দ শামসুল হকও সেই সমাবেশ-এ ছিলেন! সমাবেশে তিনিও আরও অনেকের মতোই জোর গলায় ধর্মকে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করে মতরুদ্ধ করবার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বলেছিলেন।
তসলিমা নাসরিন-এর ‘ক’ গ্রন্থ নিষিদ্ধ করবার জন্য আদালতের কাছে সৈয়দ হক যে আবেদন জানিয়েছেন সেখানে তিনি এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে হাজির করেছেন তিনটি বিষয়। প্রথমত: তিনি আর্জি করেছেন যে, তসলিমা তাঁর সম্পর্কে এই গ্রন্থে যা লিখেছেন তা সর্বৈব মিথ্যা এবং এতে তার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এতে মানহানির বিষয় দাঁড়ায় কিন্তু গ্রন্থ নিষিদ্ধ করবার জন্য এটা যথেষ্ট যুক্তি নয়। সুতরাং তিনিও ধর্ম ব্যবহারের রাস্তা ধরেন। আর্জিতে তিনি বলেন, এই গ্রন্থে তসলিমা ধর্মের প্রতি কটূক্তি করেছেন! কোনটা কটূক্তি কোনটা বর্ণনা, কোনটা কটূক্তি কোনটা অভিজ্ঞতার বয়ান? আর্জিতে ব্যাখ্যারও দরকার হয়নি। মোক্ষম পয়েন্ট। আদালত নিষিদ্ধ না করে যায় কোথায়? নিষিদ্ধ করবার ব্যবস্থা হল। কিন্তু কোথায় এসে দাঁড়ালেন হক? কাদের সাথে? তারপরও এখানেই শেষ নয়। এরপর বোধহয় ক্ষমতাবানদের সমর্থন নিশ্চিত করা দরকার। হক সাহেব আর্জিতে তাই তাঁর তৃতীয় দফা যুক্তি টানলেন। বললেন, এই গ্রন্থে তসলিমা প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। তার মানে কি, সৈয়দ হকের আর্জি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী সম্পর্কে কোন সমালোচনামূলক মন্তব্য করা গর্হিত কাজ? তসলিমা যেসব ‘কটূক্তি’ করেছেন তা কি এই দুই নেত্রীর লোকজন অন্য নেত্রীর উদ্দেশ্যে যেসব মন্তব্য করেন, এমনকি সংসদে যেসব গালিগালাজ হয় তার থেকেও খারাপ?
এটা বুঝতে তাই অসুবিধা হবার কথা নয় যে, সৈয়দ হক নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে আদালতে ধর্মকে ব্যবহার করেছেন, যেমন ব্যবহার করে থাকেন আমাদের শাসকেরা, ক্ষমতার চর্চাকারী সমাজপ্রভুরা। তিনি আরও ব্যবহার করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রীর ক্ষমতাকে, যেমন ব্যবহার করে উপ-শাসকেরা।
তসলিমা সৈয়দ হক সম্পর্কে ‘ক’ গ্রন্থে যা লিখেছেন তা ঠিক কি বেঠিক সেটা নিয়ে আমি কোন আলোচনা করতে চাইনা। বেঠিক হলে সৈয়দ হক তা পরিষ্কার করে আরেকটা লিখতে পারতেন, বিবৃতি দিতে পারতেন, সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারতেন। তিনি যথেষ্ট ক্ষমতাবান মানুষ এটা আমরা জানি। তসলিমার গ্রন্থেও তার স্বীকৃতি আছে। তিনি চাইলে তাঁর বক্তব্য সর্বত্র ছড়িযে পড়ত। কিন্তু স্পষ্টত:ই তাঁর সেই সাহস ছিল না। তাঁর তাই দরকার হল এমন হাতিয়ার ব্যবহার করা যার বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছি।
তসলিমার লেখা নিয়ে এযাবতকালে পত্রপত্রিকায় সবচাইতে বেশি আলোচনা হয়েছে। এখনও হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব আলোচনা শুরুই হয় প্রবল বিদ্বেষ দিয়ে। এবারের ‘ক’ গ্রন্থটি নিয়ে আলোচনাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এটি একটি পর্ণোগ্রাফী, অশ্লীলতায় ভরা, আলোচনার অযোগ্য ইত্যাদি বলেই অনেকে তাঁদের আলোচনা উপস্থিত করেছেন! অশ্লীলতার অভিযোগ এ পর্যন্ত বাংলাদেশের আর কোন লেখকের বিরুদ্ধে এভাবে ওঠেনি। কারও লেখা পর্ণোগ্রাফী এরকম কথা এইভাবে আর কারও বেলায় শোনা যায়নি। তসলিমার লেখায় পর্ণোগ্রাফীর কথা উঠছে লেখায় যৌনতার প্রসঙ্গে। তাহলে কি আর কারও লেখায় যৌন আচরণের বিবরণ আসেনি? যৌন আচরণ এবং পর্ণোগ্রাফীর সীমারেখা কোথায়? যৌনতার কথা থাকলেই কি তা অশ্লীল হয়? তাহলে শুধু তসলিমা কেন আরও অনেক লেখকই একই অভিযোগে অভিযুক্ত হবার কথা। হননি কেন? আর যদি যৌনতার বিষয় থাকলেই তা পর্ণোগ্রাফী হয় কিংবা হয় অশ্লীল তাহলে জীবন নিয়ে লেখা কিভাবে সম্ভব? ঢেকে রাখবার চেষ্টা করলেও যৌনতা জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যৌনতার সঙ্গেও জড়িত মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের সমাজ-স্বীকৃত বা অস্বীকৃত বিন্যাস। তাই এই ক্ষেত্রটিও ধারণ করে মানুষের প্রতি মানুষের আকর্ষণ, ভালবাসা, শরীর-মনের বোঝাপড়ার নানা দিক আবার একই বিষয় তুলে ধরে নিপীড়ন, বঞ্চনা, বৈষম্য এবং শোষণের নানা জাল। তসলিমা নারীকে কেন্দ্রে রেখে যেসব বিষয় লিখেছেন সেগুলো যৌনতা সম্পর্কে নীরব থেকে কীভাবে লেখা সম্ভব?
এসব বিষয় লেখকেরা খুব ভাল বোঝেন, বোঝার কথা। কিন্তু বোঝা আর মানা তো এক কথা নয়। কোন বোঝা জিনিষ একজন মানবেন তা তো শেষ পর্যন্ত নির্ভর করে তার নিজের সামাজিক মতাদর্শিক অবস্থানের উপর। তাতে তফাৎ হলে ভূমিকারও পার্থক্য হয়। সেজন্য লেখক মানেই সকলে এক নন, সেজন্য ‘বুদ্ধিজীবী’ কোন একক জনগোষ্ঠী নন। তসলিমার লেখায় লেখকেরা তাই অনেকে আক্রান্ত বোধ করেছেন, কেউ নিজের জন্য কেউ ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা বড়ভাই-এর জন্য। ক্ষমতার জাল তো অনেকভাবেই কাজকরে। লেখকদের মধ্য থেকেই তসলিমার বিরুদ্ধে এবারে তাই প্রবল সমালোচনা হচ্ছে। এই লেখকেরাই অভিযোগ তুলছেন অশ্লীলতার, পর্ণোগ্রাফীর। এই অভিযোগ কতদূর গেছে তা বোঝা যায় বাংলাদেশ ও ভারতের দুজন খ্যাতনামা লেখকের কথা থেকে। বাংলাদেশের হুমায়ূন আজাদ বলেছেন, “….এটি (ক) একটি পতিতার নগ্ন আতœকথন অথবা একজন নিকৃষ্টতম জীবের কুরুচিপূর্ণ বর্ণনা।” ভারতের সমরেশ মজুমদার বলেছেন, “প্রায় ৯০ বছর আগে কলকাতার সোনাগাছিতে একজন খ্যাতনামা বেশ্যা থাকতেন। তার নাম ছিল নন্দরাণী। কলকাতার প্রায় সমস্ত খ্যাতনামা ব্যক্তিদের যাতায়াত ছিল তার কাছে। অবশ্যই খদ্দের হিসেবে। তিনি যদি এদের নিয়ে উপন্যাস রচনার কথা ভাবতেন তাহলে তিনি তা অনেক আগেই করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তার ব্যক্তিগত জীবনে সমাজে চুপচাপ থাকার ভদ্রতা ও সৌজন্যের পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু হায়, তসলিমা নাসরিন নন্দরাণীর সেই আতœসম্মানবোধের অংমীদারও হতে পারেননি।”
লক্ষ্যণীয় যে, দুজনের বক্তব্যেই তসলিমাকে নিকৃষ্টতম প্রাণী বলতে গিয়ে তুলনা করা হয়েছে পতিতার সঙ্গে। এবং সমরেশ তাকে নিক্ষেপ করেছেন পতিতার চাইতেও অধম স্থানে। তাঁদের কাছে পতিতার মতো ঘৃণ্য কিছু হতে পারে না। তাঁদের কাছে তবে ধর্ষিতা নারীই বোধহয় ঘৃণ্য, ধর্ষক নয়। কেননা পতিতা অবস্থায় একজন নারী যে ‘বৈধ’ ধর্ষণের শিকার হন ক্রমাগত তাই নয়, ধর্ষণ একজন সমাজস্বীকৃত নারীকে পতিতায় রূপান্তরিত করবার জন্য অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে।
দৃষ্টি থাকলে এই কথাটা কারও জন্য বোঝা কঠিন নয় যে, একজন নারীর ‘পতিতা’ হবার পেছনে সাধারণভাবে থাকে আমাদের সমাজের ভয়ংকর প্রতারণা, জালিয়াতি ও নারকীয় নিপীড়ন এর ইতিহাস। বাংলাদেশে, আরও অনেক দেশের মতোই, ‘যৌন বাণিজ্য’ উচ্চ মুনাফার একটি বিনিয়োগ ক্ষেত্র। যে বিনিয়োগ সাধারণভাবে বিনোদন শিল্প কিংবা সেবাখাত হিসেবে বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা পেয়ে থাকে। এতে মুনাফার হার, অস্ত্র আর মাদকদ্রব্যের মতোই, অনেক উঁচু বলে অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে কমলেও এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। এই বিনিয়োগ বৃদ্ধি এমনি এমনি মুনাফা তৈরি করে না। তার জন্য দরকার হয় শিকার নারী আর শিকারী পুরুষ। তাই এই বিনিয়োগ বৃদ্ধির সাথে সাথে নারী পাচার, ধর্ষণ, পর্ণোগ্রাফী তৈরি, পতিতাবৃত্তিতে নারী যোগান এর তৎপরতাও বাড়তে থাকে। যেসব দুর্বৃত্ত রথী মহারথী এসব কাজে বা এগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়োজিত তারাই সমরেশ-এর ভাষায় ‘খ্যাতনামা’ ব্যক্তি। অর্থনীতি ও সমাজের চাপ ও প্রতারণা এবং স্বাচ্ছন্দের রং যেসব মেয়েকে ‘স্বেচ্ছায়’ এই পেশায় নিয়ে আসে সেই ‘স্বেচ্ছা’ও তৈরি হয় নানা মাত্রার বলপ্রয়োগ, জালিয়াতি ও আচ্ছন্নতা থেকে। কিন্তু নারীকে নিন্দা করবার জন্য নিকৃষ্ট-পুরুষতন্ত্র নিপীড়িত নারীর এই পরিচয়কেই মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। কেননা নারীকে আক্রমণ করবার, তাকে নাস্তানাবুদ করবার, তাকে ধরাশায়ী করবার জন্য এর চাইতে কার্যকর কিছু নাই।
তসলিমা প্রসঙ্গে সমরেশ আরও খোলাসা করেছেন নিজেকে। তিনি এরকমভাবে বিষয়টা উপস্থিত করেছেন যেন তাঁর খ্যাতনামা মানুষদের, যারা বেশ্যালয়ের নিয়মিত খদ্দের, সম্মান রক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং সকল আতœসম্মানবোধসম্পন্ন মানুষের উচিৎ কাজ। সেজন্য এই মহাশয়রা যা করবেন তা গোপন রাখা সকলের অবশ্য কর্তব্য। বটেই তো, এই ভিআইপিরা যা করবেন তাকে ঢেকে, যা করবেন না সেটাই তাদের নামের সাথে জড়িয়ে, পদসেবা করাই তো জনগণের কাজ। নন্দরাণী সেই কাজটি করে সমরেশ-এর প্রশংসা পেয়েছেন। সমরেশ তসলিমার নিন্দা করেছেন এই কারণে যে তসলিমা নন্দরাণীর ‘চুপচাপ থাকার’ আতœসম্মানবোধও দেখাতে পারেননি।
যারা ক্ষমতাবান তারা কেবল কথা বলবে, ক্ষমতাবান পুরুষ নারীকে নন্দরাণী হিসেবে ভোগ করবে আবার কাউকে গাল দিতে হলে তাকে পতিতা বলবে খানকি বলবে নষ্ট মেয়ে বলবে এটাই সমাজের নিয়ম। সমাজের নিয়ম এটাই যে, ক্ষমতাহীন চুপ থাকবে, তারা প্রতিবাদ তো দূরের কথা কথাই তুলবে না। নারী উত্যক্ত হোক, মার খাক, বিতাড়িত হোক তার সম্পদ থেকে, অপমানিত হোক,প্রতারিত হোক, যৌন হয়রানি এমনকি ধর্ষণের শিকার হোক –সমাজ চায় আতœসম্মানবোধ রক্ষার জন্য সে চুপ থাকবে, চাপ মানবে, কান্না আর্তনাদ চিৎকার সবই করবে নি:শব্দে, প্রতিবাদ কোনমতেই নয়। সরবতা কিংবা প্রতিবাদ নারীর ভূষণ লজ্জা দূর করে, সম্মানীর মানহানি করে। সিমি, মহিমা, রূমীর মতো মেয়েরা তাই বেঁচে থেকে প্রতিবাদ করতে পারে না, মরে গিয়ে প্রতিবাদ করে।
ভদ্রলোকেরা চায়, সমাজপ্রভুরা চায়, ক্ষমতাবানরা চায় মানুষ চুপ থাকুক, মেনে নিক সবকিছু। নীরবতা আর প্রশ্নহীনতার মৃত সমাজের মধ্যে নির্বিঘেœ চলুক শেয়াল শকুনের রাজত্ব। তাদের চাই, শ্রমিক কথা বলবে না-দাসের মতো কাজ করানো হবে কিন্তু পয়সা দেয়া হবে না, তবু তারা কথা বলতে পারবে না কেননা কেবলমাত্র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরাই প্রতিবাদ করে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু বা জাতিগত ভাষাগত সংখ্যালঘুরা কথা বলবে না- তাদের সম্পদ দখল হবে, তাদের ভিটেছাড়া করা হবে, তাদের নারী আরও একদফা বেশি হুমকির মধ্যে থাকবে, উচ্ছেদ করবার জন্য দখল করবার জন্য চারমাসের শিশুসহ তাদের পুড়িয়ে মারা হবে তারপরও তাদের চুপ থাকতে হবে কেননা হৈচৈ করে কেবলমাত্র দেশদ্রোহীরা। নারী কথা বলবে না-তাদের শরীর মন পদদলিত হবে, যুদ্ধ-শান্তি-অভাব-প্রাচুর্য্য সবকিছুতে সে হবে ছিন্নভিন্ন, সৌন্দর্য্য থাকা না থাকা- পণ্য-সামগ্রী-অলঙ্কার এসবকিছুর মতো বা এসবকিছুর জন্য বেঁচে থাকবে বা মরবে, নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা কখনো বলে কখনো ছলে অধীনস্ত হবে পুঁজি-পুরুষ-প্রতাপের; তবু তারা কথা বলবে না কেননা এসব নিয়ে কথা বলে কেবল খারাপ মেয়েরা।
‘ক’ প্রকাশের অনেক আগে থেকেই এমনকি লজ্জা প্রকাশেরও আগে থেকে তসলিমা খারাপ মেয়ে হিসেবে অনেকের কাছে চিহ্নিত কেননা তসলিমা যেসব বিষয়ে কথা বলেছেন সেগুলো নারীর বলার কথা নয়। তসলিমা খারাপ মেয়ে কেননা তার দায় নীরবতা ভাঙার। নারী কেন প্রশ্ন তুলবে সমাজের অনুশাসন নিয়ে, ধর্ম নিয়ে কিংবা কেন কথা বলবে তার যৌনতা নিয়ে? নারীর কলমে নারীর শরীর ও মনের ক্ষোভ-যাতনা-বঞ্চনা-ইচ্ছা অনিচ্ছার কথা যাদের কাছে পর্নোগ্রাফী তাদের কাছেই তসলিমা বেশ্যা। এদেশে অশ্লীল পত্রিকার অভাব নেই অভাব নেই অশ্লীল চলচ্চিত্রের, এদেশে আন্তর্জাতিক পর্ণোগ্রাফী সুলভ কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে এই ধর্ম-জাতীয়তাবাদ-দেশ-সমাজ রক্ষাকারীদের তেমন শোরগোল উত্তেজনা মারদাঙ্গা ভাব দেখা যায়না কারণ আসলেই যেগুলো পর্ণোগ্রাফী সেখানে নারী হল পুরুষের-পুঁজির-প্রতাপের অধীনস্ত জড় মাংসপিন্ড। তাই তা গ্রহণযোগ্য, গ্রহণযোগ্য পতিতাবৃত্তিও কেননা তা পুরুষদের চরিত্র ঠিক রাখার জন্য দরকার! যে নারী সমাজে ধর্ষকদের রাজত্ব, নিপীড়কদের শাসন, পর্ণোগ্রাফীর বান, পতিতাবৃত্তির বাণিজ্য স্বীকার করে নেবে, মেনে নেবে এসব নিজের জীবনে সেই নারী গ্রহণযোগ্য, তাকে নিয়ে সমাজপ্রভুদের কোন সমস্যা নেই। সমস্যা সেখানেই যেখানে নারী এই কাঠামোকে প্রশ্ন করবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দাঁড় করাবে।
‘ক’ প্রকাশের পর বিভিন্ন পত্রপত্রিকা হুলস্থুল করে বই-এর কিছু কিছু অংশ প্রকাশ করেছে। প্রকাশ করেছে সেইসব অংশ যেখানে যৌনতার গন্ধ আছে। হুমড়ি খেয়ে অনেকে বই কিনে সেগুলো খুঁজে খুঁজে পড়েছেন এবং আরও খুঁজেছেন। পর্ণো খুঁজে হয়রান এসব অনেক পাঠক বাকি বই ছুঁড়ে ফেলে চিৎকার শুরু করেছেন এই বই অশ্লীল। তারা অশ্লীলতাই কিনতে চান।
বস্তুত: এই বইটি তসলিমার নিজের জীবন নিয়ে লেখা। এখানে একজন নারী স্বচ্ছল, প্রতিষ্ঠিত, খ্যাতিমান হয়েও যেসব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান তার সহজ-কঠিন-নিষ্ঠুর অধ্যায়ের সরল অকপট বর্ণনা আছে। আছে একজন না মেনে নেওয়া নারীর নিজের জীবন নিজের মতো করে গড়ে তোলার চেষ্টার-সাফল্যের-ব্যর্থতার বর্ণনা। সেখানে পুরুষের ভালবাসা, প্রতারণা, ছল, নির্যাতন আছে আবার আছে নারীর হাল ছেড়ে না দেবার যন্ত্রণাদায়ক আনন্দ। আছে নিষ্ঠুর উন্মোচন। আবার আছে পুঁজির কাছে একজন লেখকের আতœসমর্পণের বর্ননা। আছে খ্যাতির মোহে পরিশ্রমের বদলে তাড়াহুড়া শর্টকাট রাস্তা খোঁজার গ্লানি। আছে দায়িত্বহীন অবিবেচক আচরণের আতœস্বীকৃতি। পাশাপাশি এই বই শুধু তসলিমার ‘ব্যক্তিগত’ জীবন নয়, উপস্থিত করেছে সমসাময়িক আরও অনেক বিষয় যা মানুষকে স্পর্শ করে। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্গতি, সাম্প্রদায়িকতার ভয়াবহতা, প্রতাপশালীদের নিষ্ঠুর দাপট, মুখোশধারীদের প্রতারণা, স্বৈরশাসন, বিদ্যমান রাজনীতির শূন্যতা ইত্যাদি। বকুলির নীরবতা। তার মার আকুতি।
তসলিমার লেখা থেকে এটা বোঝা যায় এখানে ভনিতা নেই। আবার এটাও বোঝা যায় এগুলো আগের অনেক লেখার মতোই অনেকখানি স্বতস্ফ’র্ততার ফসল। স্বতস্ফ’র্ততার মধ্যেও তার একটা ধারাবাহিকতা আছে। এর কারণেই তার মধ্যে একটা শক্তি আছে আবার এর বিপদও আছে। স্বস্ফ’র্ততায় হারিয়ে যায় অনেক প্রয়োজনীয় বিষয়, মুখ্য হয়ে ওঠে গৌণ, বাজার যাকে চাটি মেরে নিজের করে নেয়। অগভীরতা ভ্রান্তি আনে। তসলিমা নিজেও স্বীকার করেছেন কিভাবে প্রকাশকদের চাপ, আগাম টাকা তাকে দিয়ে তাড়াহুড়া লেখা লিখিয়ে নেয়। তসলিমা যে প্রতিশ্র“তি নিয়ে লেখা শুরু করেছিলেন, তার লেখা থেকে এদেশের নারী যে ভাষা খুঁজছিলেন সেখানে এই অর্থ-খ্যাতির মোহ সবসময় দায়িত্বশীল ভূমিকা উপস্থিত করেনি। তিনি নিজেই বলেছেন খুব ভেবেচিন্তে তিনি কিছু করেননা কিছু লেখেননা। ঠিকই, এর স্বাক্ষর আমরা স্পষ্টই পাই। কিন্তু একটা বড় অচলায়তন সরাবার কাজে হাত দিলে, আরও অনেকের কথা বলতে গেলে, নারীর নীরবতা ভেঙে এগুতে গেলে ভেবেচিন্তে বলতেই হয়। নইলে শত্র“র বিরুদ্ধে ছোঁড়া অস্ত্র অজান্তে শত্র“র জন্যই সুবিধাজনক অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। তাঁর লেখা ব্যবহার করে তাই বাংলাদেশ, ভারত ও পশ্চিমের জনশত্র“রা নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করতে উদ্যত হয়েছে বারবার।
লেখার জন্য, নিজের মতামতের জন্য তসলিমার ভোগান্তি কম হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা তো বটেই, শারীরিকভাবে হামলা হয়েছে তাঁর উপর। ঘরছাড়া হয়েছেন। ফাঁসির হুমকি নিয়ে ঘুরেছেন, শেষমেষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তারপরও তাঁর লেখা, শত ত্র“টি বিচ্যুতি দুর্বলতা সত্ত্বেও, অব্যাহত থেকেছে এবং বকুলির নীরবতা ভাঙায় শক্তি যুগিয়েছে, যোগাচ্ছে।

 

পুরুষের লুঙ্গি খুব অশ্লীল পোশাক: তসলিমা নাসরিন

user2
পুরুষের লুঙ্গি খুব অশ্লীল পোশাক: তসলিমা নাসরিন

বাংলাদেশ তো বটে, উপমহাদেশের পুরুষদের প্রিয় পোশাক লুঙ্গি নিয়ে এবার কটাক্ষ করলেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। লুঙ্গিকে ‘অশ্লীল পোশাক’ বলে মনে করেন তিনি। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, ‘পুরুষের লুঙ্গিটাকে আমার খুব অশ্লীল পোশাক বলে মনে হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে যে পুরুষেরা লুঙ্গি পরে, তাদের বেশির ভাগই কোনো আন্ডারওয়্যার পরে না, লুঙ্গিটাকে অহেতুক খোলে আবার গিঁট দিয়ে বাঁধে। কখনো আবার গিঁট ছুটে গিয়ে হাঁটুর কাছে বা গোড়ালির কাছে চলে যায় লুঙ্গি।’ https://agamirsomoy.com/%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%8f%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a1%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%87%e0%a6%a8%e0%a6%ad/230845 ‘তাছাড়া লুঙ্গি পরার পরই শুরু হয় তাদের অঙ্গ চুলকানো। ডানে বামে পেছনে সামনে…

বিস্তারিত

আনন্দ যে কী ‘ভীষণ’, গভীর রাতে জেনেছেন তসলিমা নাসরিন

user2
আনন্দ যে কী ‘ভীষণ’, গভীর রাতে জেনেছেন তসলিমা নাসরিন

বাংলাদেশের আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। নির্বাসিত এ লেখিকা বর্তমানে আছেন দিল্লিতে। থাকছেন একাই। একা থাকার আনন্দ সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন নিজের ফেইসবুক পেজে। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) এক পোস্টে তাসলিমা লেখেন, ‘রাত দেড়টায় এক বাড়ি থেকে গজল শুনে বাড়ি ফিরলাম। ভেতর থেকে দরজা খুলে দেওয়ার কেউ নেই। কেউ চিল্লানোর নেই, কোথায় ছিলাম, কেন রাত হলো। আমিই তালা খুলে ঘরে ঢুকি। ভেতরে অপেক্ষা করে সাদা ফুটফুটে বেড়াল। গোছানো বাড়ি, এলোমেলো করার, নষ্ট করার, এখানে ওখানে কাপড় চোপড়, চায়ের কাপ, মদের বোতল ফেলে রাখার কেউ নেই, বিকট শব্দে টেলিভিশনের বিচ্ছিরি অনুষ্ঠান দেখারও কেউ নেই।…

বিস্তারিত

তসলিমা নাসরিন বয়স, শিক্ষা, পেশা, স্বামী, দেশত্যাগ

admin
তসলিমা নাসরিন বয়স, শিক্ষা, পেশা, স্বামী, দেশত্যাগ

তসলিমা নাসরিন (জন্ম: ২৫ আগস্ট, ১৯৬২) বাংলাদেশের একজন সাহিত্যিক ও চিকিৎসক। বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে একজন উদীয়মান কবি হিসেবে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করে তসলিমা এই শতকের শেষের দিকে নারীবাদী ও ধর্মীয় সমালোচনামূলক রচনার কারণে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। তিনি তার রচনা ও ভাষণের মাধ্যমে লিঙ্গসমতা, মুক্তচিন্তা, নাস্তিক্যবাদ এবং ধর্মবিরোধী উগ্র মতবাদ প্রচার করায় ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীদের রোষানলে পড়েন ও তাদের নিকট হতে হত্যার হুমকি পেতে থাকায় ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ ত্যাগ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করতে বাধ্য হন। তিনি কিছুকাল যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন। বর্তমানে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক ভারতে অজ্ঞাতবাসে অবস্থানের সুযোগ পেয়েছেন। https://agamirsomoy.com/haier-inverter-ac-vs-gree-inverter-ac/234360   তসলিমা নাসরিন    …

বিস্তারিত

রাস্তায় প্রেমিককে চুমু খেয়েছি, ঘনিষ্ঠ হয়েছি সমুদ্রপাড়ে: তসলিমা

user2
রাস্তায় প্রেমিককে চুমু খেয়েছি, ঘনিষ্ঠ হয়েছি সমুদ্রপাড়ে: তসলিমা

  নিজের প্রেমজীবন নিয়ে সমাজের কোনো তোয়াক্কা করেননি নির্বাসিতা লেখিকা তসলিমা নাসরিন! যেমন হুড়মুড়িয়ে প্রেমে পড়েছেন। তেমনি খোলামেলা ছিল সম্পর্ক নিয়ে তার চিন্তাভাবনা থেকে কর্মকাণ্ড। শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে ২০১৬-র একটি পোস্ট নতুন করে শেয়ার করেন লেখিকা। সেখানে ফলোয়ারদের সামনে এনেছেন কী ভাবে ছক ভাঙা পথে হেঁটে প্রেমে মগ্ন ছিলেন তিনি। সামনে এনেছেন একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতিও। https://agamirsomoy.com/gree-gs24mu410-non-inverter-ac/234137 সেই পোস্টে লেখিকা বলছেন , ‘তিরিশ বছর আগে আমি আমার প্রেমিককে রাস্তায়, রেস্তোরাঁয় চুমু খেয়েছিলাম বাংলাদেশের মতো দেশে।’ আর? ইউরোপের দেশগুলোয় হাটে মাঠে ঘাটে ইউরোপীয়…

বিস্তারিত

নব্বই বছর বয়সী সেই আইনজীবীর বিয়ে মানতে পারছেন না তসলিমা

user2
নব্বই বছর বয়সী সেই আইনজীবীর বিয়ে মানতে পারছেন না তসলিমা

নব্বই বছর বয়সে বিয়ে করেছেন কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী ইসমাইল হোসেন। তাঁর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে পাঁচ বছর আগে। সন্তানরাও নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। তাই এবার সঙ্গীর খোঁজে ৪০ বছরের এক যুবতীকে বিয়ে করেছেন তিনি। বিষয়টি কোনোভাবেই মানতে পারছেন না নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তাদের বিয়ের বিষয়টি উল্লেখ করে তসলিমার মন্তব্য, ‘পুরুষরাই মেয়েদের জীবন নষ্টের জন্য দায়ী। ‘ তসলিমা নাসরিনের ফেসবুকের পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো- “বাংলাদেশের কুমিল্লায় নব্বই বছর বয়সী এক অবসরপ্রাপ্ত আইনজীবী এক তরুণীকে ঘটা করে বিয়ে করেছে। এই খবরটি মিডিয়ার অনলাইন এডিশানে দেখলাম। ভেবেছিলাম…

বিস্তারিত

সন্তান জন্ম দেওয়ার এত দরকার কেন? পরীকে তসলিমা

user2
সন্তান জন্ম দেওয়ার এত দরকার কেন? পরীকে তসলিমা

বর্তমান সময়ের টপ অব দ্যা মিডিয়া আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি। তিনি নিজেই জন্ম দেন সমালোচনার। এমনি এক আলোচনার জন্ম দিলেন পরী গতকাল সোমবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে গণমাধ্যমকে জানালেন, তার মা হওয়ার খবর। এর পর থেকেই এই রেশ কাটছেই না। জানা যায়, গত বছরের ১৭ অক্টোবর অভিনেতা শরিফুল রাজকে বিয়ে করেন তিনি। এসব আলোচনার মাঝেই সন্তান জন্ম দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। ফেসবুকে দেওয়া লেখিকার সেই পোস্টটি পাঠকদের জন্য তুলো ধরা হলো- সন্তান জন্ম দেওয়ার এত দরকার…

বিস্তারিত

মৃত্যু হলেই বুঝবো হাশরের ময়দান কেমন, কেমন জাহান্নামের আগুন!

user2
মৃত্যু হলেই বুঝবো হাশরের ময়দান কেমন, কেমন জাহান্নামের আগুন!

আমি মৃত্যুর কথা বললে এক পাল মূর্খ এসে ভিড় করে, যেন মৃত্যুটা তাদের সম্পত্তি, যেন আমি ভুল করে তাদের সম্পত্তিতে হাত দিয়েছি। তারা বেদম হেসে বলে, ‘দেখলে তো, ধর্মে বিশ্বাস না করেও তোমাকে মৃত্যু নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। এবার তো বুঝলে যে আল্লাহ আছে?’ মৃত্যু হবে, এ নিয়ে দুঃখ হবে আমার। এ স্বাভাবিক। এর সঙ্গে ধর্মের বা ঈশ্বরের বা আল্লাহর সম্পর্ক তো এক বিন্দু নেই। একটি বাস্তবতা আরেকটি রূপকথা। SAMSUNG | SONY BRAVIA | MI TV | UPTO 55% DISCOUNT তারা বলতে চায়, মৃত্যুটা আল্লাহ দিচ্ছে, সুতরাং মৃত্যুকে স্বীকার করা মানে…

বিস্তারিত

তসলিমা নাসরিনের নামে চার্জশিট দিচ্ছে পুলিশ

admin
তসলিমা নাসরিনের নামে চার্জশিট দিচ্ছে পুলিশ

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলায় নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন, সাংবাদিক সুপ্রীতি ধরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে যাচ্ছে পুলিশের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ বিভাগ। ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে লেখিকা তসলিমা নাসরিন, উইমেন চ্যাপ্টারের সম্পাদক সুপ্রীতি ধর ও সাব এডিটর শুচিস্মিতা সীমন্তির বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে যে কোনো সময় চার্জশিট দাখিল করা হবে বলে জানা গেছে।   এই মামলায় অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে লীনা হককে। ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে লেখিকা তসলিমা নাসরিন ও উইমেন চ্যাপ্টারের সম্পাদক সুপ্রীতি ধর, পত্রিকার সাব এডিটর শুচিস্মিতা সীমন্তি ও লীনা হককে…

বিস্তারিত

পরীমনির সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পাচ্ছেন তসলিমা!

admin
পরীমনির সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পাচ্ছেন তসলিমা!

২৬দিন জেলে কাটানোর পর বুধবার জামিনে ছাড়া পেয়েছেন ঢালিউডের আলোচিত নায়িকা পরীমনি। তবে জেল থেকে বের হয়েও রেহাই নেই। প্রতিবেশীদের অভিযোগে পরীমনিকে বাড়িটি ছাড়তে নোটিশ দেন তার বাড়িওয়ালা। অসহায় পরীমনির প্রশ্ন তোলেন ‘এখন আমি কোথায় যাব?’ এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ফের একবার তার পাশে দাঁড়ালেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। গোটা ঘটনায় ‘ষড়যন্ত্র’র ছায়া দেখছেন তসলিমা। পরীমনির প্রসঙ্গ ধরেই টেনে এনেছেন তার নিজের কথা। উল্লেখ্য, পরীমনি কারামুক্তির পর বাড়ি ছাড়ার নোটিশ পেয়েছেন বলে খবর ছড়ানো হয়। যদিও পরে এ নায়িকা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এমন কোনো নোটিশ তিনি পাননি বা তাকে দেওয়া হয়নি। পরীমনির বাসা…

বিস্তারিত

তসলিমা নাসরিন আতঙ্কিত।রিমান্ডে পরীমনির শারীরিক নির্যাতন হচ্ছে না তো?

user2
তসলিমা নাসরিন আতঙ্কিত।রিমান্ডে পরীমনির শারীরিক নির্যাতন হচ্ছে না তো?

  পরীমনিকে নিয়ে তসলিমা নাসরিন আতঙ্কিত। সেই আতঙ্ক তিনি লুকোননি। প্রকাশ করেছেন তার সামাজিক পাতায়। সেখানে তার প্রশ্ন, ‘রিমান্ডে পরীমনির শারীরিক নির্যাতন হচ্ছে না তো? ধর্ষণ করা হচ্ছে না তো?’ কেন তার এই আতঙ্ক, সেই ব্যাখ্যাও লেখিকা দিয়েছেন। তসলিমা জানেন, ‘এই যে পরীমনিকে রিমান্ডে নিচ্ছে দিনের পর দিন, রিমান্ডে তো শুনেছি মানুষকে প্রচণ্ড নির্যাতন করা হয়। আরও পড়ুন.. অনলাইন শপিং … জেনারেল উইন্ডো এসির দাম ও কোথায় পাবেন বাংলাদেশে ? সনি টিভি অফার | Sony showroom Bangladesh এসির দাম ২০২১| বাংলাদেশে শীর্ষে থাকা ৫টি এসির রিভিউ- Click Here অনলাইন শপিং…

বিস্তারিত