অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে নবাবগঞ্জ উপজেলাধীন আনিস মাস্টার প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী খানেপুর উচ্চ বিদ্যালয়

ঐতিহ্যবাহী খানেপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি বিগত ১৯৮৬ সাল হতে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে উপজেলায় একটি দৃঢ় অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। যোগ্য ও শক্তিশালী ম্যানেজিং কমিটির সুদক্ষ ব্যবস্থাপনায় এবং সুযোগ্য শিক্ষক/শিক্ষিকামণ্ডলীর নিরলস ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে জে.এস.সি. ও এস.এস.সি. পরীক্ষার ফলাফল শুধু সম্মানজনকই নয় বরং গৌরবেরও বটে। এ বিদ্যালয়ের ঝুড়িতে ইতোমধ্যে জমা হয়েছে গোল্ডেন জিপিএ 5, ট্যালেন্টপুল বৃত্তি ও শতভাগ পাশের গৌরব।
২০১৫ সালে এস.এস.সি. পরীক্ষায় শতভাগ পাশ সহ জে.এস.সি. পরীক্ষায় উপজেলায় ১ম স্থান দখল, ২০১৭ সালেও উপজেলায় ১ম স্থান পুনরুদ্ধার করা সহ চলতি দশকে শীর্ষ পাঁচের অবস্থান টিকিয়ে রেখেছে এ বিদ্যালয়।
ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টি দেশকে উপহার দিয়েছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট, শিক্ষক, ব্যবসায়ী সহ অনেক কৃতকর্মা ব্যক্তিত্ব। যারা বিভিন্নভাবে দেশের সেবা করে দেশকে তার লক্ষে পৌঁছে দিতে প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও কার্যক্রম
* যোগ্য ও শক্তিশালী ম্যানেজিং কমিটির সুদক্ষ ব্যবস্থাপনায় বিদ্যালয়টির ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা।
* যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকামণ্ডলীর নিবিড় তত্বাবধানে নিয়মিত পাঠানুশীলন।
* সাপ্তাহিক শ্রেণি পরীক্ষা, মাসিক ও ত্রৈমাসিক ধারাবাহিক মূল্যায়ন প্রভৃতি কার্যকলাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উন্নতি সাধন করা।
* সুশৃঙ্খল নিয়ম কানুন প্রয়োগের মাধ্যমে শুধু ভাল শিক্ষার্থী নয় ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার অবিরাম প্রচেষ্টা।
* পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিশেষ যত্ন নেয়া।
* পাবলিক পরীক্ষার পূর্বে বিশেষ অতিরিক্ত ক্লাশের ব্যবস্থা করা হয়। যাতেশিক্ষার্থীরা পাঠে অধিক মনোযোগী হয়।
* বিশেষ বিশেষ সময়ে অতর্কিত হোম ভিজিট-এর মাধ্যমে পাঠে উৎসাহিত করা।
* দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সরকারি উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা সহ বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান করা।
* এ প্লাস প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি সম্পূর্ণ মওকূফ করা হয়ে থাকে।
* নিয়মিত উপস্থিতির জন্য সনদপত্র সহ বিশেষ পুরস্কার দেয়া হয়ে থাকে।
চলমান পাতা –
(২)
* অনগ্রসর ‍ও অমনোযোগী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে কাউন্সেলিং করা।
* বিদ্যালয় আঙিনা ও শেণিকক্ষ ক্লোজড সার্কিট (সি.সি.) ক্যামেরা দ্বারা প্রতিটি মুহুর্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। প্রয়োজনে প্লেব্যাক করে দেখার ব্যবস্থা।
* নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমুন্নত রাখা। কোন কারণে কোন বিঘ্ন সৃষ্টি হলে স্বল্পতম সময়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে।
* ইভটিজিং, মাদক সহ যে কোন অন্যায় ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করা তথা প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়া। ফলস্বরূপ একাধিকবার বেশ কয়েক জন ইভটিজার ও সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হয়েছে।
* ডিজিটাল ক্লাশরুমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্লাশ নেয়ার ব্যবস্থা।
* ডিজিটাল হাজিরার মাধ্যমে শিক্ষক কর্মচারীর নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
* শিক্ষার্থীদের মতই নিয়মিত উপস্থিত শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য উৎসাহ পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করা।
* বিদ্যালয়ে ব্রডব্যান্ড ওয়াইফাই সংযোগ বিদ্যমান।
* বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময়ও জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখা।
* কৃতি শিক্ষার্থীদের সম্বর্ধনা দেয়া।
* সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
* বার্ষিক শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
* ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার ক্রীড়াঙ্গনেই সাথে সাথে প্রদান করা।
* বার্ষিক বিজ্ঞান মেলা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
* মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা ও মেধা পুরস্কার প্রদান করা।
* যে কোন আন্তঃ বিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার ব্যবস্থা করা।
* প্রতিটি শ্রেণিতে বিশেষ ভাবে নম্র, বিনয়ী, সদাচারী এবং বিদ্যালয় ও দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল শিক্ষার্থীদের প্রতি বছর “বিশেষ সদাচরণ” পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করা।
* দেয়ালিকা ও ম্যাগাজিন প্রকাশের ব্যবস্থা নেয়া।
* যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় দিবস সমূহ উদযাপন করা।
* ঈদ-ই-মিলাদ-উন-নবী (সাঃ) উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা।
* বাংলা নববর্ষে বিশেষ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
* বার্ষিক শিক্ষা সফরের আয়োজন করা।
* বছরের বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে পরীক্ষার পরে অভিভাবক-শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমন্বয়ে মত বিনিময় সভার আয়োজন করা।
* সর্বোপরি বিদ্যালয়টি রাজনীতিমূক্ত নিরিবিলি পরিবেশ বজায় রাখতে সদা সচেষ্ট।
(৩)
বিদ্যালয়ের পারিপার্শ্বিক অবস্থা
* দক্ষিণমূখী দোতালা মূল ভবনের পাশে একতলা ভবনটি দোতালা করার প্রক্রিয়া চলছে।
* সরকারি অনুদানে চার তলা আর একটি ভবন নির্মান-এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ‍নির্মান কাজ শুরু হবে।
* বিদ্যালয় সংলগ্ন ইছামতি নদীর দুই পাড়ের মধ্যে সংযোগ সাধনের জন্য সেতু নির্মানের কাজ চলছে, যা খুব শীঘ্রই উদ্বোধন হবে।
* সেতুর সাথে দুই পাড়ের রাস্তাও কার্পেটিং হবে। খানেপুর বাজার হয়ে তুইতাল পর্যন্ত রাস্তা আগে থেকেই কার্পেটিং করা আছে।
অতএব, বিদ্যালয়টির ভবন বা রাস্তা কোন কিছুতেই আর কোন ঘাটতি থাকছে না।
যাদের সঠিক দিক নির্দেশনায় ও ব্যবস্থাপনায় বিদ্যালয়টি এগিয়ে চলছে তাদের (বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি) পরিচিতি
০১) জনাব সামসুদ্দিন আহমেদ, দাতা সদস্য ও সভাপতি,
(অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা)
০২) জনাব আসাদুজ্জামান, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য,
(সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক আগামীর সময়)
০৩) জনাব আলহাজ্ব রজ্জব মোল্লা, শিক্ষানুরাগী সদস্য,
(সাবেক চেয়ারম্যান, বারুয়াখালি ইউনিয়ন পরিষদ)
০৪) জনাব মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য
০৫) বাবু রঞ্জিত পাল, সাধারণ শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য
০৬) মিসেস আফরোজা আক্তার, সংরক্ষিত শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য
০৭) জনাব আনোয়ার হোসেন, সাধারণ অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্য
(বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী)
০৮) জনাব পরশ আলী, সাধারণ অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্য
(বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী)
০৯) জনাব মোবারক হোসেন নান্নু, সাধারণ অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্য
(বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজসেবী)
১০) জনাব মোঃ শেহের আলী, সাধারণ অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্য
(বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী)
১১) মিসেস লিপি বেগম, সংরক্ষিত অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্য
(বিশিষ্ট সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী)
১২) জনাব মোঃ আমজাদ হোসেন, প্রধান শিক্ষক/ সদস্য সচিব
(৪)
যাদের নিরলস প্রচেষ্টায় ও অক্লান্ত পরিশ্রমে বিদ্যালয়টির অবস্থান দৃঢ়তর হচ্ছে তাদের (শিক্ষক/শিক্ষিকা) পরিচিতি
প্রধান শিক্ষক,  জনাব মোঃ আমজাদ হোসেন, এম.এ., বি.এড. বাবু ভোলানাথ চক্রবর্তী বি.এ.,বি.এড. (রেক্টর), বাবু বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, এম.এস-সি., বি.এড., সহকারী প্রধান শিক্ষক, জনাব মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, বি.কম., বি.এড., সিনিয়র শিক্ষক (একাউন্টিং), জনাব মোজাফ্ফর আহমেদ, বি.এ.,বি.এড. সিনিয়র শিক্ষক (ইংরেজি), বাবু চিত্তরঞ্জন মণ্ডল, বি.এস-সি.,বি.এড. সিনিয়র শিক্ষক (বিজ্ঞান), মিসেস আফরোজা আক্তার, বি.এ. সহকারী শিক্ষিকা (সমাজ বিজ্ঞান), জনাব আনিচুল হক রুবেল, বি.এ.,বি.পি.এড. সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা), মোছাঃ নূরজাহান, ডিপ-ইন-এজি, সহকারী শিক্ষিকা (কৃষি), বাবু রঞ্জিত পাল, বি.এস-সি.,বি.এড., সহকারী শিক্ষক (গণিত), জনাব মোঃ জাফর আলী, এম.এ., ডিপ-ইন-কম্পি.সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি ও আইসিটি), জনাব মোঃ রেদওয়ানুল কবির, কামিল, বি.এড, ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষক, বাবু ডালিম চন্দ্র মহন্ত, এম.এস.এস, সংস্কৃত উপাধি, হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক, জনাব মোঃ মামুনুর রশিদ, এম.বি.এস, বি.এড, ও.এস, কাম কম্পি. অপারেটর, জনাব মোঃ কাশেম আলী, এইচ. এস. সি, জুনিয়র শিক্ষক (গণিত) ।
এছাড়া এনটিআরসি-র মাধ্যমে আরও দু’জন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
“আগামীর সময়” প্রতিনিধি সাক্ষাত করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে। জানতে চাওয়া হয় এমন একটি অবহেলিত এলাকায় কোন যাদু বলে এ বিদ্যালয়টি এগিয়ে চলেছে এমন অদম্য গতিতে ?
কথা হয় প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ আমজাদ হোসেন সাহেবের সাথে। তিনি এ গ্রামেরই সন্তান। ১৯৮৩ সাল থেকে তিনি এ বিদ্যালয়ে কর্মরত। সহকারী শিক্ষক পদে তার প্রথম পদচারণা। তার পিতা মরহুম মোঃ রজ্জব আলী বেপারী সাহেবও ছিলেন বিদ্যালয়ের অন্যতম হিতাকাঙ্খী।
তিনি জানান, ১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত এ গ্রাম সহ পার্শ্ববর্তী পনেরটি গ্রামে কোন এস.এস.সি পাশ মেয়ে ছিল না। অথচ এখন এ বিদ্যালয়ের বদৌলতে এতদ অঞ্চলে খানেপুর গ্রামে শিক্ষার হার সবচেয়ে বেশি। এ গ্রামের মেয়েরা এখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,শিক্ষক সহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থায় অবদান রাখছে। এ গ্রামেরই এক কীর্তিমান মরহুম আনিস উদ্দিন আহমেদ সাহেব দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ডিগ্রী এম.এ. পাশ করে অনেক বড় বড় পদে সরকারি চাকুরীর হাতছানি উপেক্ষা করে এ অজ পাড়াগাঁয়ে প্রতিষ্ঠা করেন “খানেপুর উচ্চ বিদ্যালয়”। প্রধান শিক্ষক পদে তিনি নিজেই এর হাল ধরেন। অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তিনি এ বিদ্যালয়টিকে উন্নয়নের স্রোতধারায় প্রবাহিত করতে সক্ষম হন। প্রধান শিক্ষককের পদ হতে ২০০৭ সালে তিনি অবসর নেয়ার পর বর্তমান প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বর্তমান প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ আমজাদ হোসেন আরও জানান, তিনি তার সহকর্মীদের নিকট হতে পূর্ণ সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টির পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল এখন গর্ব করার মত। তাদের কর্ম পদ্ধতি এখন আরও অনেকেই অনুকরণ অনুসরণ করছেন। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক তথা এলাকাবাসীর সহযোগিতাও উল্লেখযোগ্য। তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এখনও ভাল মানের শিক্ষার্থী খুব একটা ভর্তি হয় না। এখানে যারা ভর্তি হয় তাদের অধিকাংশই হয় শিক্ষার্থী হিসেবে দুর্বল অথবা আর্থিক ভাবে অস্বচ্ছল। এখানে যারা ভর্তি হয় তাদেরকে ঘষে মেজে পাশ করানো হয়তো যায় কিন্তু সব সময় কাঙ্খিত মানে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। কোন কোন অভিভাবকের মন মানসিকতা এখনও বিদ্যালয়ের অনুকূলে নয়। এমনও দেখা যায়, একই মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল সন্তানটি নামী দামী কোন স্কুলে ভর্তি করালো, না চাইতেই তার যত্নের কোন ঘাটতি থাকলো না। অথচ খানেপুর স্কুলে যাকে ভর্তি করালো সে তো এমনিতেই দুর্বল তার উপর তার জন্য পরিবারের পক্ষ হতে তেমন কোন সুযোগ সুবিধাও বরাদ্দ থাকে না।
(৬)
প্রতিষ্ঠাতা মহোদয়ের নির্দেশ “টাকার অভাবে কারো পড়ালেখা যেন বন্ধ না হয়ে যায়।” তাঁর নির্দেশ আমরা এখনও সযত্নে পালন করে যাচ্ছি। তাই খেটে খাওয়া দিন মজুর সহ সকল প্রকার শ্রেণি মানুষের জন্য এ বিদ্যালয়ের দূয়ার চির অবারিত। অনেক অভিভাবক যারা নিজেদেরকে উঁচু শ্রেণির বলে দাবী করে (ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সবাই এমন নয়) তারা মনে করে ‘রহিমুদ্দির আসমানী’-রা পড়ে খানেপুর স্কুলে, অতএব, সেখানে আমার সন্তানকে দিতে পারিনা। আবার কেউ এমন আছে, বিদেশে গিয়ে নতুন পয়সাওয়ালা হয়েছে। তারা (প্রবাসীরা) নিজেরা কোথাও যখন আড্ডায় বসে তখন গর্ব করে বলবে, এত এত টাকা খরচ করে আমার সন্তানকে ওমুক নামী দামী স্কুলে পড়াই। সেখানে খানেপুরের নাম বলতে তাদের লজ্জা লাগে অথবা মনে করে খানেপুরে সন্তান পড়ালে সবাই ভাববে আমার অর্থনৈতিক দৈন্যতা রয়েই গেছে, সেই নিচুতেই রয়ে গেলাম, জাতে উঠা হলো না। এখানে উল্লেখ্য, ওসব নামী দামী স্কুলে শুধু ভর্তির সময় যে টাকা ব্যয় করতে হয় খানেপুর স্কুলে সারা বছরেও তা লাগে না। অথচ পাবলিক পরীক্ষায় ঐ সব স্কুলের পাশের হার অন্ততঃ চলতি দশকে খানেপুরের চেয়ে অনেক নিচে।
কথা হয় বিদ্যালয়ের একাধারে তিন বার নির্বাচিত সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা জনাব সামসুদ্দিন আহমেদ সাহেবের সাথে। তিনি জানান শিক্ষক/শিক্ষিকা বৃন্দের সাথে তার যেন আত্মিক সম্পর্ক। তিনি কখনো নিজেকে শিক্ষকদের ‘বস’ মনে করেন না। তিনি শিক্ষক-শিক্ষিকার সাথে মন খুলে আলাপ করেন। তাদের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হন। বিদ্যালয়ের সাধ্য মত তাদের চাহিদাও পূরণ করতে তিনি কখনো কার্পণ্য করেন না। এ ব্যাপারে তিনি সব সময়ই কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দের পূর্ণ সহযোগিতা পেয়ে থাকেন বলে জানালেন। শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দও তাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করেন এবং বিদ্যালয়ের স্বার্থে যে কোন নির্দেশ পালন করতে কখনো তাদের কোন রকম দ্বিধাগ্রস্থ হতে দেখেন নাই।
কথা হয় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্যবৃন্দের সাথে। অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্য জনাব মোঃ শেহের আলী জানান, তিনি আগেও আরও দুইবার এ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছেন। কমিটির সকলেই চান, এ বিদ্যালয়টি যেন গর্বের সাথে মাথা উচু করে চলতে পারে। এখান থেকে তাদের পাবার কিছুই নেই বলে তিনি জানান বরং সাধ্যমত আগেও এ বিদ্যালয়টিকে সব রকম সহযোগিতা করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
কথা হয় বিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য জনাব মোঃ মফজেল হোসেন সাহেবের সাথে। তিনি পরপর দুইবার এ কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি বান্দুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি বলেন, এ বিদ্যালয় সম্পর্কে আগে তিনি নিন্দুকের অনেক নিন্দা বাক্য শুনেছেন। এ বিদ্যালয়ের সংস্পর্শে না এলে তিনি যে অন্ধকারে ছিলেন, সেই তিমিরেই থেকে যেতেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। এ বিদ্যালয়ের কমিটিতে এসে তিনি অডিট উপ কমিটিরও সক্রিয় দায়িত্ব পালন করেছেন।
(৭)
বিদ্যালয়টির আয়-ব্যয় তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখেছেন। কোথাও কোন অসংগতি তিনি খুঁজে পাননি বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক সাহেবের ধ্যান জ্ঞান বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নের পাশাপাশি ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন। বিদ্যালয়ের অত্যন্ত সীমিত আয়ের মধ্যেও তার একান্ত উদ্দীপনায় এবং আমাদের সকলের সহযোগিতায় বিদ্যুৎ সমস্যা মোকবিলা করতে জেনারেটর কিনেছেন, ব্রডব্যান্ড লাইনের মাধ্যমে ওয়াইফাই সংযোগ নিয়েছেন, ডিজিটাল ক্লাশরুম নির্মান করেছেন, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে ও বাইরে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছেন, প্রতিটি শ্রেণিকেক্ষে হোয়াইট বোর্ড ব্যবহার করছেন। তিনি সার্বিক সহযোগিতার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান এবং এ বিদ্যালয়ের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন