উপনির্বাচনে জয় হলেও তিন মাস পর পরাজয়;নেপথ্যে কি!

উপনির্বাচনে জয় হলেও তিন মাস পর পরাজয়;নেপথ্যে কি!


নিজস্ব প্রতিবেদক : শত শত অভিযোগ এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। রয়েছে একাধিক মামলা। মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের নিয়ন্ত্রক এই বাহিনীর হাতে। পান থেকে চুন খসলেই চলে গুলির আওয়াজ। মুহুর্তেই লঙ্কাকাণ্ড হয়ে যায় যে কোনো স্থান। এই চক্রের মূল হোতা আবুল হাসান। দলীয় আদর্শের বিপরীতে অবস্থানকারী এই চক্রের পৃষ্টপোষক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন।

হাইব্রিডদের দলে বেড়াচ্ছেন তিনি- এমন অভিযোগ তোলেছেন নাম প্রকাশ নাকরারশর্তে জেলার একাধিক নেতৃবৃন্দ। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হলেও কাউকেই পাত্তা দিচ্ছেননা ইমন। যার প্রভাব পড়েছে জগন্নাথপুর পৌরসভা নির্বাচনে। ক্ষোভের মুখে কর্মীরা ভোট দেননি দলীয় প্রার্থীকে। ফলে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে শোচনীয়ভাবে। 
জেলা সম্পাদকের যে কোনো সভা-সমিতিতে অংশগ্রহণ মানেই এই বাহিনী পোয়াবারো। নিজ গাড়িতে আদরে এই বাহিনীকে নিয়ে সদলবলে হাজির হন জেলা সম্পাদক। বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) জেলার জগন্নাথপুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেল। বিশেষ করে দলীয় কর্মীর জনসভায় অস্ত্রসহ গ্রেফতারকৃত একাধিক মামলার পলাতক আসামী ছাত্রদল নেতা সাইদুলসহ( সিলেট কোতয়ালি থানায় মামলার আসামী)  বিতর্কিত অনেকেই দেখা যায় ওই নির্বাচনী জনসভায়।  শুধু নির্বাচনী সভায়ই নয়-সার্বক্ষণিক ইমনের চারপাশ ঘিরে রাখেন এইসব বিতর্কিতরা। এ নিয়ে সমালোচনা ও দলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে একাধিকবার। ‌


জানাগেছে, জগন্নাথপুর পৌরসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ( সিলেট বিভাগ) জগন্নাথপুরে আসেন। যথারীতি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে জেলা সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার এনামুল কবির ইমনও সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় জেলা সেক্রেটারীর গাড়ি বহরের সাথে যুক্ত হন জগন্নাথপুরের বহুল আলোচিত আবুল হাসান। দৃশ্যটি দলীয় নেতাকর্মীদের মনোক্ষুন্নের কারণ হলেও তাতে কর্ণপাত করেননি ব্যারিষ্টার ইমন। উপরন্তু নিজে এই চক্রের সাথে সেলফি তোলে পোস্ট দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর মুহুর্তেই সেইসব ছবি ভাইরাল হয়ে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। 


সদ্য পরাজিত আওয়ামীলীগের মেয়র মিজানুর রশীদ গত তিন চার মাস আগে উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন,তখন এই বাহিনী তার সাথে ছিলোনা। 
জানাগেছে, আবুল হাসান বাহিনী জগন্নাথপুর উপজেলার এক আতঙ্কের নাম। তার সন্ত্রাসী বাহিনী একের পর এক তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর বাজারে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া,গুলিবর্ষণে শব্দ এখনো কানে ভাসে এলাকাবাসীর। এই চক্রের হাতে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে রাষ্ট্রীয় মালামাল।

জগন্নাথপুর থানাসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক জিডি ও মামলা রয়েছে। উপজেলায় দীর্ঘদিন থেকে মাদক সেবন ও অস্ত্র বিক্রি করে চলছে এই আবুল হাসান বাহিনী। স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সালেহ আহমদ ছোট মিয়া মাদক সেবন ও বিক্রির অভিযোগে জগন্নাথপুর থানায় আবুল হাসানের বিরুদ্ধে জিডি করেন। এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ছোট মিয়াকে দেখে নেওয়ার নির্দেশ দেন হাসান বাহিনীর প্রধান বিতর্কিত সন্ত্রাসী আবুল হাসান। এর পর পরই সৈয়দপুরের ত্রাস হাসানের নেতৃত্বে সৈয়দপুর বাজারে অবস্থিত ছোট মিয়ার বাসা ও মার্কেট ঘেরাও করে রেখেছিল তার ক্যাডার বাহিনী।
এই বাহিনীর অন্যতম সহযোগী হলেন চিহ্নিত সন্ত্রাসী সৈয়দ সাইদুল হক (ছাত্রদল ক্যাডার), সাব্বির আহমদ, মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী রুম্মান, জুম্মান, মিজান, জুম্মান জয়সহ আরো প্রায় অর্ধশতাধিক দুর্বৃত্ত।

খোদদলীয় লোকেরাও হয়রানী হচ্ছে এই চক্রের কাছে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার এবং অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে আদালতে। তাছাড়া, সাংবাদিকের উপর হামলার অভিযোগও রয়েছে এই বাহিনীর  উপর। বিভিন্ন সময়ে ভোটকেন্দ্র দখল ও দায়িত্বরত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের উপরও হামলার অভিযোগ রয়েছে এই বাহিনীর উপর।   
এর আগে গেল জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণার জন্য বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ এমএ মান্নান যথারীতি সৈয়দপুর বাজারে অবস্থান নিলে হাসান বাহিনী বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে জনসভা পণ্ড করে পুলিশী পাহারায় সৈয়দপুর ত্যাগ করেন বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রী।
এদিকে, জেলা সম্পাদকের সাথে চিহ্নিত অপরাধী চক্রের সখ্যতার বিষয়ে মুখ খোলতে শুরু করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, ‘তিনি এই বাহিনীর মামলার বিষয় দেখভাল করেন। ফলে অপরাধী চক্র বারবার অপরাধ করেও পাড় পেয়ে যায়। এই অবস্থায় তিনি ( ব্যারিষ্টার ইমন) দলকে বারবার বিতর্কিত ও দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছেন বলে মনে করছি।’
জেলা সম্পাদকের উপর এমন অভিযোগ নতুন নয়। দলের ভাবমূর্তি বিনষ্টের জন্য তিনি এর আগেও একাধিক বিতর্কিত ঘটনার জন্মদেন। এরই ধারাবাহিকতায়, হত্যা মামলার আসামী, মাদক ব্যবসায়ীসহ চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠে এই নেতার উপর। এ নিয়ে দলের কট্টরপন্থী এবং সত্যিকার আদর্শিক রাজনীতিবিদদের হৃদয়ে ক্ষরণ সৃষ্টি হলেও জেলা সাধারণ সম্পাদক বারবারই এইসব কার্যক্রম অব্যাহত রেখে দলকে বিতর্কিত করে যাচ্ছেন।

দলীয় প্রধান এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যখন দল থেকে হাইব্রিড ও বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে দলে শুদ্ধি অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন-সেখানে ব্যারিষ্টার ইমন বারবারই হাইব্রিড ও বিতর্কিতদের প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে-চিহ্নিত অপরাধিদের মামলার যাবতীয় তদবীরসহ আসামীদের জন্য তিনি ধর্ণা দেন বিভিন্ন স্থানে। এর মাধ্যমে আর্থিক একটি সুবিধা আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেছেন জেলা পর্যায়ের এক আওয়ামী লীগ নেতা।  
এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে জেলা সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার ইমন বলেন, দলীয় প্রচারণায় জনসমাগম ঘটে অনেক লোকের। বিভিন্ন দলের সমর্থনকারীরাও উপস্থিত থাকবেন।ছবিও তোলেন অনেকে, কিন্তু কোনো দাগি অপরাধী কিংবা সন্ত্রাসী বাহিনীর দায় কেনো আমি নিতে যাবো ?
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিক বলেন, জেলা পর্যায়ে ত্যাগী আর নির্দোষ কে, সেটি আমার জানার কথা নয়।তিনি বলেন, জেলা সাধারণ সম্পাদকের নিজ তোলা সেল্ফিতে ছাত্রদল ক্যাডার এবং অস্ত্রবাজ ও সন্ত্রাসীদের যদি পাওয়া যায়, তাঁর দায় জেলা কমিটির। এমনটি ঘটে থাকলে প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন