—ড. ইয়াসির ক্বাদী
আর অবশ্যই কুরআনের সবচেয়ে আশাবাদী আয়াত, অধিকাংশ আলেম-ওলামার মতে… তবে মনে রাখুন, এটা একটা অভিমত মাত্র। আমাদের ক্বারি দুইদিন আগে এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেছেন। قُلۡ یٰعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِیۡعًا ؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ – “বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।” (39:53)
সম্পূর্ণ শর্তহীন! আল্লাহ্ দরজা পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এই আয়াতে তিনি কোনো ধরণের শর্ত বা সীমা নির্ধারণ করে দেননি। আর আল্লাহ্ সরাসরি আমাদের সম্বোধন করে বলছেন, কূল ইয়া ইবাদিই। আল্লাহ্ বলছেন, “ও আমার বান্দারা।” তিনি আমাদের সরাসরি সম্বোধন করে বলছেন। ও আমার ইবাদাতকারীরা। তোমরা যারা আমাদের ইবাদাত করো। “ইয়া ইবাদিই।” তিনি আমাদেরকে তাঁর দিকে সম্বন্ধযুক্ত করে বলছেন, আমাদের সকল পাপ সত্ত্বেও। তিনি আমাদেরকে তাঁর দিকে সম্পর্কযুক্ত করে বলছেন। এরা আমার বান্দা। আল্লাহর ইবাদাত করে এমন প্রতিটি ব্যক্তি এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। “ইয়া ইবাদিই।” এরপর আল্লাহ্ কাদের সাথে কথা বলছেন? যারা নিজেদের রূহের বিরুদ্ধে অগণিত পাপ করেছে।
এই আয়াতে আল্লাহ্ আমার এবং আপনার সাথে কথা বলছেন। এই আয়াতে তিনি সলেহিন বা সিদ্দিকীনদের সাথে কথা বলছেন না। তিনি আমার আপনার সাথে কথা বলছেন। “ও আমার বান্দারা! যারা সারা জীবন ধরে নিজেদের বিরুদ্ধে পাপ করেছো। লা তাকনাতু মির রাহমাতিল্লাহ। আল্লাহর রাহমা থেকে কখনো নিরাশ হবে না। আল্লাহ্ সকল পাপ ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ হলেন গাফুর এবং রহিম।”
সবচেয়ে শর্তহীন, সবচেয়ে অবাধ, সম্পূর্ণ খোলা আয়াত আমাদের বলে তুমি যে পাপী ব্যক্তিই হও না কেন, যে কোনো পাপী- চিন্তা করো না, আল্লাহ্ তোমাকে মাফ করে দিবেন। “জামিয়া-সকল পাপ।” এরপর আল্লাহ্ বলছেন কেন? কারণ, আমি গাফুর এবং রহিম।
সুতরাং, এগুলো হলো প্রত্যাশার এমন কিছু আয়াত যা আমাদের মুখস্ত করে রাখা উচিত এবং আমরা এগুলো ব্যবহার করবো যেন আল্লাহ্ সম্পর্কে আমাদের সবসময় সুধারনা থাকে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি হুসানাস জন(সুধারণা) থাকে। আল্লাহ্ সম্পর্কে সবসময় ইতিবাচক ধারণা পোষণ করুন।
ও মুসলিম! আল্লাহর শপথ করে বলছি। আল্লাহর রহমতের কাছে আপনার পাপ কিছুই না। আর-রাহমান এবং আর-রাহিমের দয়ার কাছে আপনার পাপ কিছুই না। বুঝতে পারেন না? যে ব্লাস্ফেমি(ধর্মদ্রোহিতা) শয়তান আমার এবং আপনার মনে প্রবেশ করিয়ে দেয়? সে ব্লাস্ফেমি হলো শয়তান যখন বলে, তোমার এতো বেশি পাপ আল্লাহর পক্ষে ক্ষমা করা সম্ভব নয়। বুঝতে পারেন না? এ চিন্তাটাই, এ চিন্তাটাই সবচেয়ে বড় পাপ আপনার দ্বারা সম্পাদিত যে কোনো পাপের চেয়ে। আমি আবারো বলছি— এ বিশ্বাস, এ চিন্তা যে আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমা করতে পারবেন না, এটা আপনার যে কোনো পাপ বা সারা জীবন ধরে করা সমস্ত পাপসমূহের চেয়েও বড় পাপ।
কেন? কারণ, এ চিন্তাটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে সীমিত করে দেয়। যেখানে আল্লাহর রহমতের তুলনায় আপনার পাপ কিছুই না। তাই, যখন আপনি বলেন আমার পক্ষে ক্ষমা পাওয়া সম্ভব নয়, যখন আপনি বলেন আমি অতিরিক্ত পাপী— আপনি আর-হামুর রাহিমিনের ক্ষমতাকে সীমিত করে ফেলছেন। আপনি কে আর কত পাপই বা করতে পারবেন, আল্লাহর রহমতের তুলনায়— যে আপনি এ কথা বলার স্পর্ধা দেখান আল্লাহ্ কীভাবে আমাকে ক্ষমা করবেন। এ চিন্তাটা শয়তান থেকে এসেছে। এর থেকে মুক্ত হোন। মাথা থেকে এ চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন। আল্লাহ্ সকল পাপ ক্ষমা করে দিতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করতে পারবে?
অতএব, আমরা আল্লাহ্ সম্পর্কে ভালো চিন্তা করবো। আল্লাহ্ সম্পর্কে সুধারনা করবো। সবসময় ইতিবাচক চিন্তা থাকতে হবে আমাদের ধর্ম সম্পর্কে, আমাদের ঈমান সম্পর্কে এবং আমাদের সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে। ইনশাআল্লাহ, ধীরে ধীরে আমরা আমাদের ত্রুটিগুলো সংশোধন করে নিতে পারবো। এভাবে একদিন আমরা আমাদের প্রভুর সাথে সাক্ষাৎ করবো। সেইদিন তিনি হবেন রাহমান এবং রহিম, যদি আমরা তাঁর দয়ার প্রতি আস্থা রাখতে পারি এবং ক্ষমা পাওয়ার জন্য দুয়া করি।
———————- * ———————–
[আল্লাহ যখনই কুরআনে আমাদেরকে তাঁর ক্ষমার কথা বলেছেন, তিনি আমাদের অতীত গুনাহের প্রতি নির্দেশ করেছেন। আর ইবলিস যখন আমাদেরকে আল্লাহর ক্ষমার কথা মনে করিয়ে দেয়, সে ভবিষ্যতের গুনাহের প্রতি নির্দেশ করে, যেন আমরা পাপের কাজটি করি। ইবলিস কুমন্ত্রণা দিবে এই বলে— “আল্লাহ তাওবা গ্রহণ করেন, তুমি কি কুরআনে এটা পড়োনি? নোমান আলী খানের লেকচারে শোনোনি আল্লাহ কতটা ক্ষমাশীল? যাও, পাপের কাজে জড়িয়ে পড়। পরে তাওবা করে নিলেই হবে।”
না, এমনটি করবেন না। পরে তাওবা করে নিবেন এই চিন্তায় নিজের ক্যালেন্ডারে পাপের পরিকল্পনা করবেন না।
— নোমান আলী খান ]