কোরবানির পশুর যেসব বৈশিষ্ট্য থাকতেই হবে

কোরবানির পশুর যেসব বৈশিষ্ট্য থাকতেই হবে

কোরবানি ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত আমল। এতে আত্মত্যাগের মহিমা ও  সেবার গৌরব জড়িত। যারা নিসাবসম্পন্ন (শরয়ি দৃষ্টিকোণে সামর্থ্যবান) তাদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। কেউ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি না করলে গুনাহগার হবে।

যেসব পশু দিয়ে কোরবানি করা যায়

 

ছয় প্রকার পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ। উট, গরু, মহিষ, দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল। অন্যান্য পশু দিয়ে কোরবানি নাজায়েজ। কোরবানি করার জন্য ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স কমপক্ষে এক বছর পূর্ণ হতে হবে। অবশ্য ছয় মাসের ভেড়া যদি দেখতে মোটাতাজা হয় এবং এক বছর বয়সের মতো মনে হয়— তাহলে তা দিয়েই কোরবানি করা বৈধ। গরু-মহিষের হতে হবে পূর্ণ দুই বছর। আর উটের পাঁচ বছর পূর্ণ হতে হবে। (হিদায়া, খণ্ড : ০৪, পৃষ্ঠা : ১০৩)

কতজন ব্যক্তি মিলে কোরবানি দিতে পরবে

 

ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদির ক্ষেত্রে একটি পশু শুধু এক ব্যক্তিই কোরবানি দিতে পারবে। তাতে একজনের বেশি অংশ নিতে পারবে না। এছাড়া গরু, মহিষ ও উটে সর্বোচ্চ সাত ব্যক্তি অংশ নিতে ও কোরবানি দিতে পারবে।

উট ও গরু-মহিষের ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সা.) হাদিসে এমনটা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘একটি উট ও গরু-মহিষে সাত ব্যক্তি কোরবানির জন্য শরিক হতে পারে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩১৮)

যেসব দোষ-ত্রুটি থাকলে কোরবানি হবে না

কোরবানির পশু দোষত্রুটিমুক্ত হতে হবে। পশুর মধ্যে কিছু ত্রুটি থাকলে, কোরবানি দেওয়া যাবে না। সেগুলো এখানে উল্লেখে করা হলো—

১. দৃষ্টিশক্তি না থাকা, ২. শ্রবণশক্তি না থাকা, ৩. অত্যন্ত দুর্বল ও জীর্ণ-শীর্ণ হওয়া, ৪. এই পরিমাণ লেংড়া যে জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে অক্ষম, ৫. লেজের বেশির ভাগ অংশ কাটা, ৬. জন্মগতভাবে কান না থাকা, ৭. কানের বেশির ভাগ কাটা, ৮. গোড়াসহ শিং উপড়ে যাওয়া, ৯. পাগল হওয়ার কারণে ঘাস-পানি ঠিকমতো না খাওয়া, ১০. বেশির ভাগ দাঁত না থাকা, ১১. রোগের কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে যাওয়া, ১২. ছাগলের দুটি দুধের যেকোনো একটি কাটা, ১৩. গরু বা মহিষের চারটি দুধের যেকোনো দুটি কাটা।

মোটকথা, কোরবানির পশু বড় ধরনের দোষত্রুটি থেকে মুক্ত হবে। যেমন আল্লাহর রাসুল (সা.) হাদিসে বলেছেন, ‘চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্ধ— যেটার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্ত— যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু— যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট ও আহত— যার কোনো অঙ্গ ভেঙে গেছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১৪৪)

যেসব ত্রুটি থাকলেও কোরবানি দেওয়া যাবে

পশুতে কিছু ত্রুটি থাকলেও কোরবানি দেওয়ার সুয়োগ রয়েছে বা জায়েজ। সেগুলো হলো—

১. পশু পাগল, তবে ঘাস-পানি ঠিকমতো খায়; ২. লেজ বা কানের কিছু অংশ কাটা, তবে বেশির ভাগ অংশ আছে; ৩. জন্মগতভাবে শিং নেই, ৪. শিং আছে, তবে ভাঙা; ৫. কান আছে, তবে ছোট; ৬. পশুর একটি পা ভাঙা, তবে তিন পা দিয়ে সে চলতে পারে; ৭. পশুর গায়ে চর্মরোগ, ৮. কিছু দাঁত নেই, তবে বেশির ভাগ আছে। স্বভাবগত এক অণ্ডকোষের পশু; ৯. পশু বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম, ১০. পুরুষাঙ্গ কেটে যাওয়ার কারণে সঙ্গমে অক্ষম। তবে উত্তম হচ্ছে ত্রুটিমুক্ত পশু দিয়ে কোরবানি দেওয়া, ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কোরবানি দেওয়া অনুচিত।

আপনি আরও পড়তে পারেন