লকডাউনে পারিবারিক অশান্তি, সন্তানের সামনে ঝগড়া করবেন না

লকডাউনে পারিবারিক অশান্তি, সন্তানের সামনে ঝগড়া করবেন না

বিয়ের পর দুজন মানুষ যখন একসাথে থাকেন তখন তাদের মধ্যে কারণে-অকারণে মতের অমিল, ঝগড়া-ঝাটি খুব একটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। পরস্পরের ব্যক্তিত্বের সংঘাত, শ্বশুরবাড়ি বনাম বাবার বাড়ির, পুরনো বন্ধুত্বে সন্দেহ, সামাজিক-অর্থনৈতিকসহ আরো অনেক কারণে কখনো কখনো সংসার হয়ে ওঠে রণক্ষেত্র। করানোকালে লকডাউনের সময়টাতে এসব ঘটনা বেশি হচ্ছে।

দুজন ঝগড়া করে হয়তো মনের ক্ষোভ একে অন্যের উপর উগরে দিচ্ছেন, কিন্তু আপনারা যদি বাবা-মা হোন, তাহলে ঝগড়ার সীমারেখা টানা উচিত। কারণ, শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। বড়দের কাছ থেকেই তারা শেখে। শিশুর আচরণ দেখেই কিন্তু বোঝা যায়, পরিবারের বড়দের আচরণ কেমন। মা-বাবার ভেতরে সুন্দর সম্পর্ক দেখলে শিশুও কিন্তু তাই শেখে। অন্যদিকে আপনাদের হার-জিতের প্রভাবও শিশুর উপর পরে। এর মাশুল গুণতে হয় নিষ্পাপ কুঁড়িটিকে, যাকে আপনারাই আলো-বাতাস-পানি-সার দিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বড় করে চলেছেন।

তাই সন্তানের সামনে ঝগড়া করবেন না। বিশেষ করে লকডাউনে, যখন চার দেয়ালের মাঝেই বন্দি থাকতে হচ্ছে সবাইকে। কোভিডের কারণে যেখানে শারীরিক-মানসিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে ছোটবড় সবার, সেখানে নিত্যদিন মা-বাবার দাম্পত্য অশান্তি অচিরেই নিষ্পাপ শিশুদেরকে ঠেলে দিবে অন্ধকারের দিকে। সেজন্য মতপ্রার্থক্য হলে একান্তে বসে দুজন মিটমাট করে নিন। কখনো সন্তানের সামনে ঝগড়া-ঝাটি, হৈচৈ করবেন না। মা-বাবার ঝগড়া সন্তানের উপর কী কী বিরূপ প্রভাব ফেলে জেনে নেওয়া যাক-

১.বাবা-মায়ের প্রতিদিনের কলহ, চেঁচামেচি, সমালোচনা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, কটাক্ষ শিশুদের মনে নানারকম প্রভাব ফেলে। তারা অকারণ জেদ করতে থাকে। অনেকসময় অল্পতেই রেগে যায়। চিৎকার করে কথা বলে, কখনো আবার খুব সহজে ভয় পেয়ে যায়।

২.তাদের আত্মবিশাসের ঘাটতি তৈরি হয়। সেই সঙ্গে উৎকণ্ঠা, হতাশার মধ্যে পড়ে যায় তারা। স্কুলর পরিবেশেও মানিয়ে নিতে অনেক সময় তাদের অসুবিধা হয়।

৩.বাবা-মায়ের সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলে, শিশুরা ভীষণভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগতে শুরু করে। খুব অসহায় মনে করে নিজেদের। ঝগড়া দেখে দেখে ক্লান্ত শিশুটি বুঝতেও পারে না, সে কার পক্ষ নেবে। এসব কারণে ছোট থেকেই সে সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগতে থাকে। এতে করে ভবিষ্যতেও তার ব্যক্তি জীবন, এমনকি কর্মক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হতে পারে।

৪.শিশুরা তার ব্যবহারের প্রথম শিক্ষাটুকু পায় বাবা-মায়ের কাছ থেকেই। পরস্পরের প্রতি অশ্রদ্ধা, অন্যের মতকে গুরুত্ব না দেওয়া, এসব দেখে দেখে যখন সে বড় হয়ে ওঠে তখন ভবিষ্যতে তার ব্যক্তিগত জীবনের আচরণেও সেটার ছাপ থাকে। এবং এই তিক্ত পরিবেশে বড় হতে হতে বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের অশ্রদ্ধাও জন্মায়।

আপনি আরও পড়তে পারেন