মুদ্রার দাম পড়েছে ৬০%, গভীর সংকটে মিয়ানমারের জান্তা

সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর থেকেই ডলারের বিপরীতে নামতে শুরু করেছিল মিয়ানমারের মুদ্রা কিয়াটের দাম। বর্তমানে তার চুড়ান্ত অবস্থা চলছে, যা গভীর অর্থনৈতিক সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশটিকে।

বুধবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেখানে গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে এক ডলারের বিপরীতে পাওয়া যেত ১ হাজার ৩৯৫ কিয়াট, সেখানে মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক ডলারের বিনিময়ে সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ২ হাজার ৭০০ কিয়াট। অর্থাৎ শতকরা হিসেবে, গত সাত মাসে ডলারের বিপরীতে কিয়াটের মান কমেছে ৬০ শতাংশ।

কিয়াটের দাম এই পরিমাণ পড়ে যাওয়ার অর্থ হলো বর্তমানে দেশটিতে প্রকট হয়ে উঠছে ডলারের সংকট। সংকটের তীব্রতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দেশটির বিভিন্ন শহরের অনেক মানি এক্সচেঞ্জ দোকান ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হোর্সে এ প্রসঙ্গে রয়টার্সকে বলেন, ‘কিয়াটের মান এই পরিমাণ পড়ে যাওয়া দেশটির জান্তা সরকারের জন্য খুবই অস্বস্তিদায়ক হবে। কারণ তারা মনে করে, কিয়াটই হলো মিয়ানমারের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।’

সোমবার ওয়ার্ল্ডব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের অর্থনীতি আনুমানিক ১৮ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। ফলে, একদিকে যেমন কর্মহীনতার হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে, তেমনি দেশটিতে বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা।

সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশটিতে বাড়ছে দ্রব্যমূল্যও। বর্তমানে মিয়ানমারে ৪৮ কেজি ওজনের একটি চালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৮০০ কিয়াটে, যা অভ্যুত্থানের আগের সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি দাম। এছাড়া, অভ্যুত্থানের আগের সময়ের তুলনায় বর্তমানে রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম হয়েছে দ্বিগুণ।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিয়াটের দাম পড়ে যাওয়ার মূল ভুক্তভোগী দেশটির সাধারণ জনগণ। ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর কিয়াটের মান পড়ে যাওয়ার শঙ্কায় মানুষজন দলে দলে ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে স্বর্ণ কিনেছিলেন, তাদের অনেকেই এখন নগদ অর্থের অভাবে সেসব স্বর্ণ বিক্রি করে দিচ্ছেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত আগস্ট পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে কিয়াটের মান ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়েছিল; কিন্তু গত ১০ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকও হাত গুটিয়ে নিয়েছে।

ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার যাবতীয় ব্যার্থ প্রচেষ্টা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছি। কারণ, প্রকৃত সত্য হলো- দেশের রাজনৈতিক অবস্থা যতদিন টালমাটাল থাকবে, অর্থনীতিও এ রকম বেহাল থাকবে।’

 

আপনি আরও পড়তে পারেন