টিকা সংগ্রহ নিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে : বিএনপি

টিকা সংগ্রহ নিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে : বিএনপি

করোনার টিকা সংগ্রহ নিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। করোনা টিকা নিয়ে সরকার দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে গোটা পরিস্থিতিকে লেজে-গোবরে করে ফেলেছে।

রোববার (১৮ জুলাই) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।  শনিবার (১৭ জুলাই) অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্তগুলো সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘আকুল আহ্বান’ বিজ্ঞাপনে দেড় কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহের কথা বলায় প্রমাণিত হয়েছে, সরকার করোনার শুরু থেকেই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে, টিকা মূল্য নিয়েও মিথ্যাচার করছে। অবিলম্বে টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে।

দেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হলে ২৬ কোটি ডোজ প্রয়োজন উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, গড়ে প্রতি মাসে ১ কোটি টিকা দিলেও ২ বছর দুই মাস লাগবে। অথচ এখন পর্যন্ত টিকা প্রাপ্তির কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকার দিতে পারছে না। অথবা টিকা প্রাপ্তির উৎস্য সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।

সরকারের নিজস্ব দুর্নীতিপরায়ণ মহলকে সহায়তা করার জন্যই টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের ক্ষেত্রে সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো রোড ম্যাপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি আরও বলেন, উপরন্তু মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রতারণা করা হচ্ছে। অযোগ্যতা ও দুর্নীতিপরায়ণতা এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী। এসব দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। শুধু মিথ্যাচার করে জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার সরকারের নেই।

‘লকডাউনের সিদ্ধান্ত হেমায়েতপুর থেকে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের লকডাউন লকডাউন খেলা মর্মান্তিক তামাশা। প্রথমে লকডাউন, তারপরে কঠোর লকডাউন, পরে শিথিল লকডাউন ঈদের এক দিন পর থেকে আরো কঠোর লকডাউন, শিল্প কলকারখানা বন্ধ ঘোষণা থেকে মনে হয়, সরকারি সিদ্ধান্তগুলো সবই পাবনার হেমায়েতপুর থেকে আসছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের এসব অপরিকল্পিত পদক্ষেপের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের দিন আনে দিন খায়, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত মানুষ, হকার, ছোট ব্যবসায়ী, রিকশা শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিক, মাঝি, বাইক চালক, পরিবহন শ্রমিকেরা। বিএনপি বারবার এসব মানুষের জন্য এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। আবারও দাবি জানাচ্ছি এসব মানুষদের জন্য ১৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হোক। ছোট ব্যবসায়ীদের পুঁজির ব্যবস্থা করা হোক।

দেশের জেলা হাসপাতালগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় করোনা বেড, অক্সিজেন, আইসিইউ বেড বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের আহজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। গাছের তলা, অ্যাম্বুলেন্সে অথবা ভ্যানের ওপর রোগীর চিকিৎসার দৃশ্য কি মধ্যআয়ের বাংলাদেশ বা উন্নয়নের মডেল বাংলাদেশের ছবি দেখায়।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য আবারও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি জানান বিএনপির মহাসচিব।

গত ১৩ জুলাই লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেজলার বারঘড়ি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবকের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান মির্জা ফখরুল।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সাবেক কেয়ারটেকারের সময়ে গ্যাটকো মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। খালেদা জিয়াসহ তৎকালীন যে মন্ত্রিসভা ছিল তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য। এই মামলার এফআইআর, চার্জশিট দুটির কোনো জায়গাতেই কোথাও খালেদা জিয়া বা জিয়া পরিবারের অন্যকোনো সদস্যের বিরুদ্ধে ন্যূনতম কোনো ধরনের অভিযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ফ্যাসিস্ট সরকার সেই মামলাকে চলমান রেখেছেন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য। কারণ এই বর্তমান সরকার জানেন তাদের অঙ্গুলি হেলনে আদালত আজকে চলছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন