বেনাপোল বন্দরে প্রতিনিয়তই চুরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পণ্য

বেনাপোল বন্দরে প্রতিনিয়তই চুরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পণ্য
শাহাজাদা বেলাল
স্টাফ রিপোর্টার
দেশের অন্যতম স্থলবন্দর হচ্ছে বেনাপোল। ওই বন্দর দিয়ে বছরে ২০ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়। যা থেকে সরকার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকেন।
পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষও আলাদা রাজস্ব পায়। কিন্তু বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্যের নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। ফলে বন্দর থেকে প্রতিনিয়ত পণ্য চুরির ঘটনা ঘটছে।
এমন অবস্থার অবসানে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বারবার বেনাপোল স্থলবন্দরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছে।
কিন্তু কর্তৃপক্ষের তাতে তেমন আগ্রহ নেই। ফলে পণ্য চুরির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দিন দিন আস্থা হারাচ্ছেন।
বেনাপোল বন্দর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৮ টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারত থেকে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৩ টন পণ্য এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছিল ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯৭ দশমিক ৯৩ টন পণ্য।
অথচ বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর চার যুগেও দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়নি। বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মূলত কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই বেনাপোল স্থলবন্দরে সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে না। ফলে চুরিসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ড বাড়ছে এবং অব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাতে আমদানি-রফতানিকারকরা ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
একটি সূত্র জানায়, বন্দরে রহস্যজনক অগ্নিকান্ডে ব্যবসায়ীদের আমদানি করা কোটি কোটি টাকার পণ্য পুড়ে যায়। গত এক যুগে বেনাপোল বন্দরে বড় ধরনের ৭টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। তাতে পুড়ে গেছে ব্যবসায়ীদের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার পণ্য। তাছাড়া সম্প্রতি বন্দর পণ্যগার থেকে ১০টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে এবং বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। তবে বন্দরে সিসি ক্যামেরা না থাকায় অগ্নিকান্ডের কোনো রহস্য বা দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করা যায়নি।
অথচ সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকলে ওসব ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। বিভিন্ন সভায় ব্যবসায়ীরা সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জোর দাবি জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আমদানি পণ্যে প্রবেশদ্বারসহ ২ কিলোমিটার বন্দর এলাকাজুড়ে কোথাও সিসি ক্যামেরা নেই। প্রয়োজন ছাড়া বন্দরের মধ্যে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ থাকলেও বহিরাগতরা সেখানে অবাধে যাতায়াত করছে।
বিগত ২০১৭ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব পালনের সময় চোর সিন্ডিকেটের হামলায় একজন আনসার সদস্য খুন হয়। আর চোরাই পণ্য কেনা-বেচার জন্য বন্দরের সামনেই নামে-বেনামে শতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে।
সূত্রটি আরো জানায়, বিগত ১৯৭৮ সালে বেনাপোল বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেটি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হতে শুরু করে।
আর ওই কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই সেখানে চোরের দৌরাত্ম্য রয়েছে। চোর চক্রের সদস্যরা প্রভাবশালী, ক্যাডার, সন্ত্রাসী ও লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্য। বন্দর থেকে পণ্য চুরি হওয়ায় আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এদিকে এ প্রসঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, কলকাতা থেকে বেনাপোলের দূরত্ব ৮৪ কিলোমিটার।
যে কারণে ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে পণ্য নিয়ে আসে। নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা লাগাতে বন্দর কর্তৃপক্ষ কেন অনীহা দেখাচ্ছে তা বোধগম্য হচ্ছে না। সরকারকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন। অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন জানান, প্রতিটি সভায় উন্নয়নের ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখানে কোনো নজরদারি নেই।
অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চলছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। সিসি ক্যামেরা স্থাপনে বন্দর সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায়ীর দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ওই দাবির মুখে পূরণ করার কথা বলা হলেও তা বাস্তবে রূপ পাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার জানান, বন্দরে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন