ঘুষ না দিলে ‘ভুল’

ঘুষ না দিলে ‘ভুল’

গত বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা। বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। সেবাপ্রত্যাশীদের জটলা। ছোট ছোট লাইন। বাইরে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষের ভিড়। ভেতরে চেয়ারে বসে আছেন কাউন্টারম্যান সাজেনুর। কিন্তু তাঁর কাজ এগোচ্ছে না। আবেদনপত্র জমা নিচ্ছেন। একটু সময় পাতা উল্টে ভুল আছে উল্লেখ করে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। কী ভুল কিংবা কী সংশোধন করতে হবে তা বলা হচ্ছে না।

ঘুষ না দিলে ‘ভুল’

এর পাশে অন্য কাউন্টারে কাজ করছেন নৈশপ্রহরী লিংকন। কারণ সেখানে ডেলিভারিম্যানের চেয়ার ফাঁকা। দায়িত্বপ্রাপ্ত আলমগীর হোসেন (এমএলএসএস) না থাকায় লিংকন চেয়ারে বসে কাজ করছেন। কাজ বলতে দু-একজনের কাছ থেকে ডেলিভারি স্লিপ নিয়ে পাসপোর্ট খোঁজাখুঁজি করছেন। কিন্তু একটু পর পাসপোর্ট আসেনি বলে স্লিপ ফিরিয়ে দেন। তবে দুই কাউন্টারে একটি কাজের ক্ষেত্রে মিল দেখা গেছে। পরিচিত মুখের মানুষের হাত থেকে স্লিপ এলে পাসপোর্ট খুঁজে পাচ্ছেন তাঁরা। কাউন্টারের বাইরে থাকা সেই মানুষের হাতে বিদ্যুৎ গতিতে পৌঁছে যাচ্ছে পাসপোর্ট। আবেদনপত্র জমা নেওয়ার বেলায় একই দৃশ্য চোখে পড়ল। লাইনে দাঁড়ানো অপেক্ষমাণদের একজন আব্দুল হামিদ বলেন, ‘দালাল ধরলে কোনো কাজেই সমস্যা হয় না। আবেদনপত্রের সঙ্গে এক হাজার টাকা বেশি দিলে কোনো ভুল ধরা পড়ে না। পরে আরো ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দিলে অল্প সময়ে ডেলিভারি পাওয়া যায়।’ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাসপোর্ট অফিসে প্রবেশপথগুলোতে তালা। সাধারণ মানুষের সেখানে ঢুকতে মানা। তবে বিশেষ মানুষ এলে তাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে অফিসের ভেতর আনা হয়।

গত বুধবার সকালে অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের ফটকের বাইরে দাঁড়ানো একজন দালালের কাছ থেকে আবেদনপত্র নিয়ে দ্রুত কক্ষে চলে এলেন আনসার সদস্য সাদেকুল। গেটে তখন ছিলেন পোশাক পরিহিত মহেন্দ্র। আর অফিসের ভেতরে ফাইল নিয়ে ছোটাছুটি করছিলেন রানু নামের আরেক আনসার সদস্য। দালালদের দেওয়া ফাইলগুলো তাঁরা নিয়ে যাচ্ছেন কাউন্টারম্যান সাজেনুরের কাছে। তিনি ফাইলে বিশেষ একটি সাংকেতিক চিহ্ন এঁকে সেটি জমা রাখছেন।

আমিনুল, হবিবর, সাইফুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, সকাল ১০টা থেকে তাঁরা পাসপোর্ট পেতে নির্ধারিত স্লিপ হাতে এই কাউন্টারে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। দেড় ঘণ্টা পরও সকাল সাড়ে ১১টায় নির্ধারিত চেয়ারে কোনো লোকের দেখা মেলেনি।

জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী সহকারী পরিচালকের পদমর্যাদার কর্মকর্তা অফিসের মূল দায়িত্বে থাকেন। তাঁর অধীনে উচ্চমান সহকারী, হিসাবরক্ষণ সহকারী, ডাটা এন্ট্রি সহকারী, অফিস সহকারী, গার্ড ও এমএলএসএস নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন। পাসপোর্টের আবেদন ঠিক আছে কি না তা দেখে জমা নেওয়ার দায়িত্ব কর্মকর্তার। কিন্তু বেশির ভাগ সময় তা জমা নেন গার্ড ও আনসার সদস্যরা। সাধারণত সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আবেদন জমা নেওয়ার নিয়ম। কিন্তু কাউন্টারে এক ঘণ্টাও থাকেন না দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এ কারণে লাইনে দাঁড়ানো আবেদনকারীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment