লৌহজংয়ে কালের সাক্ষী জমিদার বাড়ি দখলের পাঁয়তারা

লৌহজংয়ে কালের সাক্ষী জমিদার বাড়ি দখলের পাঁয়তারা


লৌহজংয়ে কালের সাক্ষী বেজগাঁও ইউনিয়নের জমিদার অনিল কুমার ব্যানার্জি বাবুর বাড়িটি দখলে নিতে একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। সরকারী খাস সম্পত্তি হলেও এটিকে নিজেদের ক্রয়কৃত সম্পত্তি দাবি করছে কেউ কেউ। এই নিয়ে আদালতে মামলার কারণে বৈরী আবহাওয়ায় উপড়েপড়া বড় বড় গাছ আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে ৩৫টি পরিবারের জীবন রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। উচ্চ আদালতে সিভিল আপীল দখলের স্থিতি অবস্থা মামলা থাকার কারণে উপড়েপড়া গাছগুলো ঘরের ওপর থেকে সরাতে পারেনা কেউ। অপর দিকে একই কারণে ঝুঁকিপূর্ণ গাছ কাটা ও ঘর সরাতে না পারায় এসব গাছ ও ঘর পড়ে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এই নিয়ে আতঙ্কে আছে ওই বাড়িতে বসবাসকারী ৩৫টি পরিবার।

লৌহজংয়ে কালের সাক্ষী জমিদার বাড়ি দখলের পাঁয়তারা

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৯৭ শতাংশের এই বিশাল আকারের বাড়িটির পাশেই রয়েছে একটি পুরনো বিশাল আকৃতির দীঘি। যার পাশেই জমিদার বাড়ির কিছু পুরনো নিদর্শন যেমন সতীদাহের মঠসহ বেশ কয়েকটি মঠ। সাড়ে ৩ শ’ বছরের পুরনো এই জমিদার বাড়িটিতে বিগত ৬০ বছর ধরে বসবাস করে আসছে হিন্দু-মুসলমান মিলে প্রায় ৩৫টি পরিবার। তাদের সকলের অভিযোগ বর্তমানে বাড়িটি দখল নিতে পাঁয়তারা করছে একই সঙ্গে বসবাসরত কৃষ্ণ দাস, স্বপন দাস, পরিমল দাস এবং অন্য এলাকা থেকে আসা কোমল ভট্টাচার্য ও ডাঃ রঞ্জিত গংরা। এই চক্রটি বিশাল আকারের খাস সম্পত্তি এই বাড়িটি মালিকানা দাবি করে ২০০৫ সালে মুন্সীগঞ্জ নি¤œ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। এরপর মামলায় তারা হেরে যায় এবং সরকার পক্ষ জিতে যায়।

এরপর বাদী পক্ষ পুনরায় উচ্চ আদালতে আপীল, লিভ টু আপীলসহ বেশ কয়েকটি মামলা করে। বর্তমানে এখানে স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার মামলা রয়েছে। বাড়িটিতে বসবাসকারী ফজল শেখ, হুমায়ুন শেখ, মোঃ সিরাজ উদ্দিন শিকদার, মান্না শেখ, কাউসার শেখ, শহীদ শেখ, সেলিনা বেগম, বাবুল চন্দ্র দাস, আরতি রানী দাস, সুনীল দাস, সুধীর দাস অভিযোগ করে বলেন, আমরা হিন্দু-মুসলমান মিলে প্রায় ৩৫টি পরিবার জমিদার অনিল কুমার ব্যানার্জি বাবুর কাছ থেকে মৌখিকভাবে অনুমতি নিয়ে এই বাড়িটিতে বসবাস করে আসছি দীর্ঘ ৫০/৬০ বছর ধরে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে ভারি বর্ষণের কারণে মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় দুটি বড় আকারের কড়ই গাছ গোড়া উপড়ে কয়েকটি ঘরের ওপরে পড়লে বেশ কয়েকটি বসতঘরের ক্ষতি হয়। বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া ও এলাকাবাসীর যাতায়াতের পথ।

এতে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হলে বেজগাঁও ইউনিয়নের সদস্য শারমিন আক্তার লোক দিয়ে গাছের কিছু অংশ কেটে যাতায়াতের পথ তৈরি করেন। কিন্তু গাছ দুটি কেটে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো এখনও তোলা যাচ্ছে না প্রতিপক্ষের বাঁধার কারণে। এই রকম পুরো বাড়িটি জুড়েই গাছ পড়ার ও পুরনো দালান খসে খসে পরছে প্রতিনিয়ত। আর আতঙ্কে রয়েছে বসবাসরত পরিবারগুলো। তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর একটি আবেদন করেছে পুরনো ঝুকিঁপূর্ণ গাছ গুলো কাটার অনুমতি চেয়ে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মনির হোসেন জানান, আবেদনটি পাওয়ার পর বিষয়টি ফরেস্ট অফিসারকে তদন্ত করার জন্য দেয়া হয়েছে এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি দেখার জন্য। এদিকে পড়ে যাওয়া গাছগুলো কাটার অনুমতি আনতে ভূমি অফিসে এক সঙ্গে গেলেও বাঁধ সাধে প্রতিপক্ষ কৃষ্ণ। তার দাবি আদালতে মামলা চলাকালীন অবস্থায় কোন গাছ কাটা বা স্থাপনা সরানো যাবে না।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিনাথ ফৌজিয়া গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থল বাবুর জমিদার বাড়িটিতে পরিদর্শনে যান এবং গাছ ও ঝুকিঁপূর্ণ দালানটি দেখে আসেন এবং ঝুকিঁ নিয়ে বসবাসকারীদের সঙ্গে কথা বলেন।

জনকন্ঠ

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment