‘রোহিঙ্গাকেন্দ্রিক অপরাধ বাড়ছে, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

রোহিঙ্গাকেন্দ্রিক অপরাধ বাড়ছে, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ক্রমাগত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এসব রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ-সংঘাতের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।অভিযোগ আছে যে, রোহিঙ্গারা মাদক ব্যবসা, চুরি-ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাচ্ছে। এ সব অপরাধের পাশাপাশি একটি চক্রের ইন্ধনে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টাও করছে বলে দায়িত্বশীল সংস্থার প্রতিবেদনে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এতে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা শঙ্কাও।

 

রোহিঙ্গাকেন্দ্রিক অপরাধ বাড়ছে, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সংস্থার তথ্য মতে, গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা ছিল এদেশে। রোহিঙ্গারা বসবাস করছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে। এসব রোহিঙ্গাদের সর্বোচ্চ মানবিক সহায়তা প্রদান করা হলেও অনেকে হত্যাসহ নানা অঘটন ঘটাচ্ছে।

পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, গত ২১ অক্টোবর টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে কবির আহমদ নামের এক এসআইকে পিটিয়ে আহত করেছে রোহিঙ্গারা। এর আগে ১৯ অক্টোবর রোহিঙ্গারা হামলায় চালিয়ে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের আবু সিদ্দিক নামের এক যুবককে আহত করে। ২১ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান এ যুবক। ৩০ অক্টোবর ডাকাতির প্রস্তুতির সময় উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প সংলগ্ন বাগান থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ পাঁচ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে র‌্যাব। ২৭ অক্টোবর রামুর খুনিয়াপালংয়ে আব্দুল জব্বার নামের এক বাঙালি যুবককে কুপিয়ে হত্যা করছে এক রোহিঙ্গা। একই দিন বালুখালী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের হামলায় চার নলকূপ শ্রমিক আহত হয়েছেন। এ দিন দেশীয় দুটি বন্দুকসহ দুইজন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। ২৮ অক্টোবর রাতে টেকনাফের হ্নীলায় এক বাড়ি থেকে ছয়টি মোবাইল ফোনসেট চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় জাবেদ নামের এক রোহিঙ্গা যুবককে আটক করা হয়।

এ ছাড়া গত এক মাসে রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটিয়েছে ৫০টিরও বেশি। অস্ত্রসহ নানা অপরাধে চলতি মাসে ২০ জন রোহিঙ্গাকে আটকও করা হয়েছে। মঙ্গলবার এক রোহিঙ্গা নারী ইয়াবাসহ আটক হয়েছে। এর আগে গত ৩ অক্টোবর রোহিঙ্গাদের এক ঘর থেকে ইয়াবা ও গাঁজা উদ্ধার করা হয়।

এদিকে একটি চক্র রোহিঙ্গাদের দিয়ে রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিকভাবে কঠোর নজরদারির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে এনজিও কর্মীর ছদ্মবেশে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরির সময় পাঁচ বিদেশি নাগরিকসহ ২৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এদের আটক করা হয় বলে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) খালেদ মাহমুদ।

এডিএম খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে সোমবার রাতে বহিরাগত কয়েক ব্যক্তি উখিয়ার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া এলাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে অবস্থান করে সন্দেহজনক আচরণ করছে বলে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় ক্যাম্পটির ডি-৪ ব্লক থেকে বিদেশি পাঁচ নাগরিকসহ ২৬ জনকে আটক করা হয়।

তিনি জানান, শুরুর দিকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে এ ধরনের আচরণ লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয়দের সঙ্গে বিরোধের পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সংঘাতের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

কিছু-কিছু রোহিঙ্গার কারণে এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোহিঙ্গাদের অনেকেই।

এর মধ্যে কুতুপালং ক্যাম্পের আবদুল গফুর নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘এক শ্রেণির রোহিঙ্গা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এই রোহিঙ্গারা নিবন্ধনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি, ত্রাণ নিয়ে অনিয়ম ও নানা অপরাধে জড়িত রয়েছে।’

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment