‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে খালেদার মামলার তুলনা দুঃখজনক’

‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে খালেদার মামলার তুলনা দুঃখজনক’

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মামলার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার তুলনা অত্যন্ত দুঃখজনক দাবি করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান সরকার স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে বারবার কারাগারে নিয়েছিলেন। সেই মামলার সঙ্গে আপনার দুর্নীতির মামলার তুলনা করা, অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা কখনোই মেনে নেওয়ার মতো নয়।

‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে খালেদার মামলার তুলনা দুঃখজনক’

শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামী পার্টি ‘নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানের সংকট নিরসন’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে।

গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়া আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের চতুর্থদিনের বক্তব্যে বলেছেন, আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, প্রতিহিংসায় নয়, ক্ষমায় বিশ্বাস করি। আমার এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি শেখ হাসিনার প্রতিহিংসামূলক ও বৈরি আচরণ সত্ত্বেও তাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি। পাশাপাশি তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ চন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাশ, জওহরলাল নেহরু, নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিংয়ের মতো নেতাদের নাম উল্লেখ করে এসব নেতাদের ‘অবিচারের মাধ্যমে’ কারাগারে পাঠানো হয়েছিল বলে জানান।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এমন বক্তবের তীব্র সমালোচনা করে হানিফ বলেন, আমি অবাক হয়ে যাই। বিএনপি নেত্রী একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। উনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই মামলা আমাদের সরকার দেয় নাই।

তিনি আরো বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) বললেন, আমি প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না, প্রতিহিংসার জন্য আমি শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করলাম। অবাক হতে হয়! কাকে কি কারণে আপনি ক্ষমা করলেন? এই মামলা কি প্রধানমন্ত্রী আপনার বিরুদ্ধে দিয়েছিল? এই সরকার দিয়েছে? এই মামলা হয়েছে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। এই মামলার দায়ভার তো আমরা নিতে পারি না।’

মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘আপনি (খালেদা জিয়া) একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আমরা চাই, আপনি নিজে নির্দোষ হয়ে বেরিয়ে আসুন। কোনো প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করুক, এটা কোনো দেশের জন্য খুব গৌরবের বিষয় নয়। সে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হোক আর উচ্চপর্যায়ের নেতাই হোক। এটা কখনো দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনে না। আপনি যদি নিজেকে নির্দোষ ভাবেন, তাহলে দ্রুত শুনানি করে শেষ তথ্য দিয়ে প্রমাণ করুন, আপনি এই অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত নন’।

মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘কিন্তু আপনার মধ্যে শঙ্কা আছে। কারণ এই অপরাধের সাথে আপনি সম্পৃক্ত আছেন বলেই আপনার মধ্যে শঙ্কা আছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবেন না। সে কারণে আপনি এখন বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির সাথে তুলনা করছেন। বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেছেন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি করে অর্থ আত্মসাতের কোনো মামলায় অভিযুক্ত হয় নাই। বঙ্গবন্ধুকে এই পাকিস্তান সরকার স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে বারবার কারাগারে নিয়েছিলেন। সেই মামলার সঙ্গে আপনার দুর্নীতির মামলার তুলনা করা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা কখনোই মেনে নেওয়ার মতো নয়’।

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে প্রতিহিংসার জন্য ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেইনি। আর প্রতিহিংসার রাজনীতি যদি করে থাকেন সেটা আপনিই করেছেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সময়কার কথা কি ভুলে গেছেন আপনি। আপনি ভুলে যেতে পারেন। কিন্তু জাতি কি করে ভুলবে। আমরা কি করে ভুলব। বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতা-কর্মীর নিহতসহ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী শাহ এসএম কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, নাটোর এমপি মমতাজসহ ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা তুলে ধরেন হানিফ।

মাওলানা ইসমাঈল হোসাইনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলাম এমপি প্রমুখ।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment