ঐতিহ্য ভেঙে নতুনত্ব আসছে ছাত্রদলে!

ঐতিহ্য ভেঙে নতুনত্ব আসছে ছাত্রদলে!

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এক বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। নতুন কমিটি গঠনে দেরির কারণে সংগঠনের নেতাকর্মীরা খানিক অস্থির হয়ে উঠলেও ‘ভালো কিছুর প্রত্যামশায়’ কমিটি গঠনের গ্রিন সিগনাল দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় নিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড।

ঐতিহ্য ভেঙে নতুনত্ব আসছে ছাত্রদলে!

সংগঠনটির ইমেজ ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক যোগ-বিয়োগ আর হিসাব-নিকাশে ঢেলে সাজানোর চিন্তাভাবনা চলছে। এজন্যম দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যর ভেঙে এবার সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব আনার চিন্তা করছে বিএনপি, যেখানে কমিটির উচ্চ পর্যায়ের দুটি পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যা্লয়ের সঙ্গে অন্য প্রতিষ্ঠানের কেউ দায়িত্ব পেতে পারেন। এমনটাই বলছে বিএনপির সূত্রগুলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এই ধরনের কমিটি গঠনের চিন্তা ভাবনা রয়েছে দলে। মনে করা হচ্ছে, এতে সংগঠনটির কর্মকাণ্ডে যেমন গতি বাড়বে, তেমনি নেতৃত্বও বিকেন্দ্রীয়করণ হবে। আর অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো নেতৃত্বও উঠে আসবে। ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বরাবরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যােলয়ের ছাত্রনেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। দু’একটি ব্যছতিক্রম বাদ দিলে এটি হয়ে আসছে। তবে এবার সেই ধারায় পর্র্তিনের চিন্তা করা হচ্ছে। ছাত্রদলের ভেতরেও এই দাবি জোরালো হচ্ছে। তাই এবারের কমিটিতে শীর্ষ দুটি পদ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদের মধ্যে একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যাালয় থেকে এবং অন্যা পদটি আরেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে দেয়া হতে পারে।

ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত দুটি সরকার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নেতাকর্মীদের সক্রিয় দেখা গেছে, তার মধ্যেি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যামলয়সহ ঢাকার হাতে গোনা দু’একটি কলেজের ভুমিকা রয়েছে। অথচ ব্যা পক সম্ভবনা থাকা স্বত্ত্বেও এই প্রতিষ্ঠানের নেতারা অতীতে সুপার ফাইভে এসেছেন তা বিরল। অন্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও তাই। এই ধারার পরিবর্তন চান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, সুপার ফাইভ যে কমিটি হয়, সেখানে অন্তত একটি পদ হলেও অন্যয বিশ্ববিদ্যা।লয়ের প্রতিনিধি রাখা উচিত। এতে অন্যফ প্রতিষ্ঠান থেকেও ভালো নেতৃত্ব উঠে আসবে।

সূত্র বলছে, আগামী ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই নতুন নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। সভাপতি, সহ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এই ‘সুপার ফাইভ’ কমিটি হচ্ছে। বিএনপির ক্ষমতা হারানোর পর থেকে বেহাল দশায় থাকা ছাত্রদলে প্রাণ ফেরাতে একাধিক এমন উদ্যোমগ নেওয়া হচ্ছে, যা নেতাকর্মীদের মাঝে মাইলফলক হয়ে থাকবে। আগামী একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রদলের এই নতুন কমিটি গঠনকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্যদ এক বছরেরও বেশি সময় বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি দিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা ঘটছে।

ছাত্রদল নেতাকর্মীরা বলছেন, ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন, বয়স্কদের নিয়ে কমিটি গঠন, কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেন, ঐক্যের অভাবসহ অনেক কারণে প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছরেও ‘বিএনপির ভ্যানগার্ড’ খ্যাত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অবস্থা এখন নাজুক। সংগঠনটিকে বাঁচাতে নতুন নেতৃত্ব আসার আগে তাই মাঠের নেতাদের বায়োডাটা পরখ করে কমিটি দেয়ার অনুরোধ করেছেন তারা।

কেমন কমিটি দেখতে চান জানতে চাইলে ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যােশী নেতা ওমর ফারুক মুন্না রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রদলের এবারের কমিটি অনেক গুরুত্বপূর্ন। এক্ষেত্রে যারা মাঠে থেকেছেন, সংগ্রাম করেছেন, জেল খেটেছেন, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেও মাঠ ছাড়েন নি, তাদের সংগঠনের দায়িত্ব দিতে হবে। আমি নিজেও একাধিকবার কারাগারে গিয়েছি, জেল খেটেছি। দলের যে কোনো দায়িত্ব পালনে প্রতিকুল পরিবেশও বিবেচনায় নেই নি।’

ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব আনার আগে পদ প্রত্যাছশীদের মাঠের রাজনীতির অনুসন্ধান করতে বিএনপির হাইকমান্ডের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

পদপ্রত্যািশী আরেক নেতা আলমগীর হাসান সোহান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ছাত্রদলে নেতৃত্বে আসুক সে কতটা কর্মী বান্ধব, মাঠে কতটা সময় দিচ্ছে এবং সর্বোপরি সংগঠনের জন্যব কতটা ঘাম ঝড়িয়েছেন; সেগুলো বিবেচনায় রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আমি নেতৃত্ব পেলে কমিটি পুর্নাঙ্গ করার ক্ষেত্রে ত্যা গীদের পদ দিতে জিরো টলারেন্সে নীতিতে অবস্থান রাখবো।’

এর আগে ছাত্রদলের বেহাল দশা কাটাতে ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজিব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বেধেঁ দেওয়া সময়সীমারও অনেক পরে ৭৩৪ জনকে পদায়ণ করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করলেও তা নিয়ে রীতিমতো সমালোচনার ঝড় ওঠে। ছাত্রদলের ইতিহাসে এতো বড় কমিটি আর কখনো হয়নি। রাজীব-আকরামের কমিটিকে বলা হচ্ছে, ছাত্রদলের অন্যহতম ব্যহর্থ কমিটি। ছাত্রদলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই কমিটি দিয়ে সংগঠনটির নেতৃত্ব যেমন সমালোচনার মুখে পড়ে, তেমনি সিনিয়র-জুনিয়রের ভারসাম্য ঠিক না রাখা এবং যোগ্য ও ত্যাগীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ ওঠে। এতে সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

এদিকে মেয়াদোত্তীর্ন এই কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের জন্যে প্রায় প্রতিদিনই শোডাউন-মিছিল মিটিং করছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। সংগঠনটির নেতা-কর্মীরাও চান দ্রুত নতুন কমিটি গঠনের পাশাপাশি এতে যোগ্যর ও মাঠের নেতাদের মূল্যায়ন হোক। আগামী একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির হাইকমান্ড ছাত্রদলে নেতৃত্ব নির্বাচন ভুল হলে এর সুদুরপ্রসারী মাশুল দিতে হতে পারে বলে মনে করছেন সংগঠনটির নেতারা।

ছাত্রদলের আগামী কমিটিতে শীর্ষ পদের জন্য বেশি আলোচনায় আছেন মামুনুর রশিদ মামুন, আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, আসাদুজ্জামান আসাদ, ইসহাক সরকার, ওমর ফারুক মুন্না, মিয়া রাসেল, বায়েজিদ আরেফিন, মেহেবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment