আনিসুল হক মারা যাওয়ায় সুবিধা হয়েছে অনেকেরই…

আনিসুল হক মারা যাওয়ায় সুবিধা হয়েছে অনেকেরই…

আনিসুল হক মারা যাওয়ায় অনেকের সুবিধা হয়েছে। যেমন, যারা ই-টেন্ডারিং পছন্দ করেন নি। বাংলাদেশের টেন্ডার সংস্কৃতি কেমন এটা ব্রাউজারের হিস্টোরির মতো পরিষ্কার বিষয়। “চুরি কাচি দাঁও যার, টেন্ডার সব ফাও তার”-টাইপ দেশে ই-টেন্ডারিং একটি চমকপ্রদ বিষয়। ই-টেন্ডারিং ছিলো আনিসুল হকের নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি। সাধারণত প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় ভাঙ্গার জন্য। কিন্তু এই লোক উল্টো পথের পথিক। তিনি প্রতিশ্রুতি রাখতে শুরু করলেন। যদিও প্রবল অসন্তোষের মুখে তাকে পড়তে হয়েছিলো। সেই অসন্তুষ্ট মানুষেরা নিশ্চয়ই হয়তো কিছুটা খুশি হবেন এই মৃত্যুতে।

আনিসুল হক মারা যাওয়ায় সুবিধা হয়েছে অনেকেরই…

দক্ষিণ এশিয়ার প্রচলিত রাজনীতির একটা সংজ্ঞা আমি দিয়েছি। সেটা হলো, “এক পাপী আরেক পাপীর পাপকে গুণ হিসেবে প্রচার করার বিনিময়ে কিছু পাপ কাজ করার সুযোগ পাওয়ার নামই রাজনীতি।” আনিসুল হককে আমার পছন্দ করার অন্যতম কারণ হচ্ছে তিনি আমার সংজ্ঞার বাইরের কোরামের লোক। একবার তিনি গুলশান, বনানী, বারিধারার কিছু প্রভাবশালী দখলদারদের তালিকা করলেন। এরা দলের নাম বিক্রি করে। ক্ষেত্রবিশেষে বঙ্গবন্ধুর নাম বিক্রি করে। মেয়র আনিসুল হক তালিকাটি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বললেন, এরা সবাই আমাদের চেনাজানা, পরিচিত লোক। এরা দখলদারি করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তৎক্ষণাৎ বললেন, “তারা কেউ আমার লোক না। আমার লোক সাধারণ মানুষ। তুমি তোমার কাজ করে যাও।”

আনিসুল হক তার কাজ করে গেলেন। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের রাস্তা, গাবতলী বাস টার্মিনাল, গুলশানের মরিয়ম টাওয়ারের পেছনের রাস্তা, মোনায়েম খানের বাড়ির সামনের রাস্তা দখলমুক্ত করার ঠেকা আপনার ছিলো না। হয়তো বলেছিলেন দখলমুক্ত করবেন। ওরকম সবাই বলে। আপনি সবাই না হয়ে আপনি হতে চেয়েছেন হয়তো। কেন অমন করতে গেলেন শুধু শুধু! তারচেয়ে দুই চারটা টংয়ের দোকান বসিয়ে লাইনম্যান লাগিয়ে ভাড়া আদায় করতেন, সেটাই তো সবাই করতে চায় ক্ষমতা পেলে! তবুও তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে গিয়ে আপনাকে তিন ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকতে হয়েছিলো! যাই হোক, এখন আপনি গিয়ে সুবিধা হয়েছে। রাস্তাগুলো নিশ্চয়ই আবার দখল হবে। না হয়ে যাবে কই!

মহামান্য রাষ্ট্রপতির একটা ভাষণ ইউটিউবে দেখছিলাম। তিনি পোস্টার বিলবোর্ড নিয়ে কথা বলছিলেন সেখানটায়। এই যে আজকাল আতি নেতা, পাতি নেতা, ছাতি নেতা সবাই পোস্টার করে নগর ভারাক্রান্ত করে রাখে, এটার যৌক্তিকতা কী! তারচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এইসব পোস্টারের এক কোনায় ছোট করে থাকে বঙ্গবন্ধু যেন চোখেই পড়ে না, আর বাকিটা জুড়ে নিজের ছবি। এর ব্যাখ্যা কি? তারা কি বঙ্গবন্ধুর চেয়েও বড় নেতা? রাজনীতি মানুষের জন্য হলে মানুষের কাছে গিয়ে নিজেকে তাদের মধ্যে গ্রহণযোগ্য করাই তো নিয়ম। অযৌক্তিক ও অবমাননাকর পোস্টার করে নেতা হওয়া কি রাজনীতি? রাজধানীর এমন অনেক অবৈধ বিলবোর্ড আনিসুল হক সরিয়েছেন। বিশ হাজারেরও বেশি! অবৈধরা নিশ্চয়ই খুশি হয়েছে আজ!

প্রিয় আনিসুল হক,
সুবক্তারা সুকর্মা হয় না। আপনি খুব বিরল প্রজাতির একজন। আপনি রুপকথার মতো এ শহর পালটে ফেলেননি। গানের লাইনের মতো করে জাদুর শহর বলার মতোও কিছুই হয়নি। তবুও, একটা ধাক্কা দিয়ে গিয়েছেন। দাগ কেটে গিয়েছেন। দাগগুলোকে হয়তো ভুলেই যাওয়া নিয়তি, কিন্তু আঁচড়গুলো সত্যিই থেকে যাবে…

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment