সিংগাইরে ইটভাটায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানকালে মালিকপক্ষের হামলায় ৪ কৃষক আহত

সিংগাইরে ইটভাটায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানকালে মালিকপক্ষের হামলায় ৪ কৃষক আহত

Brand Bazaar

সিংগাইরে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভ্রাম্যমান আদালতেরঅভিযান পরিচালনাকালে ইটভাটা মালিকপক্ষের হামলায় ফসলি জমির মালিক স্থানীয় ৪ কৃষক গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের খোলাপাড়াচকে আবাসিক এলাকা ও ফসলি জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপনের অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টারদিকে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালান। এ সময় ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) হামিদুর রহমান এএমবি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ভাটা মালিক আমিনুর মেম্বারকে আটক করেন। এ খবরে ইটভাটা মালিক পক্ষের লোকজন প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে ফসলি জমির মালিক সফিকুল ইসলাম (১৯), ময়নাল (৪৫), নুরু মিয়া (৫০) ও আনছার আলীকে (৬০) মারধর করে গুরুতর আহত করেন। আহতদের মধ্যে সফিকুল ইসলামের অবস্থা আশংকাজনক। এ ঘটনায় জয়নাল আবেদীন বাদি হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সিংগাইরে ইটভাটায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানকালে মালিকপক্ষের হামলায় ৪ কৃষক আহত
সিংগাইর থানার অফিসার ইনচার্জ খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা গেছে, আটককৃত ভাটা মালিক আমিনুর মেম্বার ও মোখলেছুর রহমানকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সেই ইটভাটার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানোর শর্তে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ যুবায়ের বলেন, ফসলি জমির মালিকদের উপর হামলা প্রশাসন কিংবা ভ্রাম্যমান আদালতের সামনে ঘটেনি। তারপরেও আমি ওসি সাহেবকে নিয়মিত মামলা নিতে বলেছি।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, দু’বছর আগে উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের আবাসিক এলাকা সংলগ্ন খোলাপাড়া চকে তিন ফসলি জমিতে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অবৈধভাবে “এএমবি” নামে ইটভাটা নির্মান করেন স্থানীয় প্রভাবশালী আমিনুর মেম্বার। তার দেখা দেখিতে ওই ভাটার অদূরে পশ্চিম পার্শ্বে চলতি বছর জুন মাসে মহর আলী (৩৫), সামেজুদ্দিন (৭০) , আশ্রব আলী (৬৫), মালেক (৩৮) ছোরহাব আলী (৬৫) ও মোখলেছের (৬০) মালিকানাধীন “এমএবি স্টার” ও আমিনুর মেম্বারের মালিকানাধীন উত্তর পার্শ্বে “এইচআরবি” নামে আরো একটি ইটভাটা নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ওই ইটভাটা নির্মাণ বন্ধে এলাকাবাসী প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। মানব বন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেন তারা। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে ৬ জুন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তৎকালীন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এলিনা আক্তার সরেজমিনে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ইটভাটাকে জরিমানাসহ কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন। তারপর ও থেমে নেই ইটভাটার কার্যক্রম।

অভিযোগ ওঠে, প্রশাসনকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে মালিকেরা তাদের ইটভাটা নির্মান কাজ সম্পন্ন করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন ভাটা মালিকদের পক্ষ অবলম্বন করায় কৃষককূল উচ্চ আদালতের দারস্থ হন। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তেলিখোলা গ্রামের জয়নাল আবেদীন গত ১৭ জুলাই হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি যুবায়ের হোসেন চৌধুরী ও ইকবাল কবীর সমন্বয়ে দ্বৈতবেঞ্চ বন ও পরিবেশ সচিবসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে রুল জারী করেন। বিবাদী পক্ষকে ইটভাটার কার্যক্রম স্থগিতসহ ৩০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দেয়ার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে, ওই বেঞ্চ মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইটভাটার সকল কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। জানা যায়, হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে ৩ টি ইটভাটার সকল কার্যক্রম চলছে পুরোদমে। মালিক পক্ষ প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে ইট ভাটার নাম পরিবর্তন করে এমএবি স্টারের স্থলে এএবি ও এএমবি’র স্থলে এইচআরবি নাম ব্যবহার করে ইট তৈরী করছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আদালতের বিধি-নিষেধ থোরাই কেয়ার করে নাম পরিবর্তনসহ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বিনা বাধায় তাদের ইটভাটা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। দেখার যেন কেউ নেই।
সূত্র আরো জানায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশ ভাটা মালিকপক্ষসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে পৌঁছলে তোলপাড় শুরু হয়। মালিক পক্ষ স্থানীয় প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারস্থ হন। তাদের যোগ সাজশেই ইটভাটার পূর্বের নাম পাল্টিয়ে ভিন্ন নামে ইট তৈরীর কাজ করে যাচ্ছেন। এতে ফসলি জমির মালিক ও এলাকাবসীর মধ্যে নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গত মঙ্গলবার রীটকারী জয়নাল আবেদীন উচ্চ আদালতের সার্টিফাইড কপিসহ জেলা প্রশাসক বরাবর ইটভাটা ৩টির কার্যক্রম বন্ধে লিখিত আবেদন করেন। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দৈনিক ফুলকিসহ কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকালে অভিযোগকারী ফসলির জমির মালিকদের ওপর হামলা করে ইটভাটা মালিক পক্ষ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment