মেহেরপুর হাসপাতালের খাবারে অনিয়মের অভিযোগ

মেহেরপুর হাসপাতালের খাবারে অনিয়মের অভিযোগ

দীর্ঘদিন ধরে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের মাঝে পরিমাণে কম ও নিম্নমানের খাবার সরবারহ করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিনে উন্নত খাবার পরিবেশন করার কথা থাকলেও ওই দিনেও পরিমাণে কম ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করেন। ওইদিন মেহেরপুর পৌর মেয়র জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কসহ যুবলীগ নেতারা হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে এই চিত্র দেখে অনিয়মের প্রতিবাদ করেন।
মেহেরপুর হাসপাতালের খাবারে অনিয়মের অভিযোগগতকাল শনিবার খাসির মাংস সরবরাহের কথা থাকলেও ব্রয়লার মুরগির মাংস দেয়া হয়েছে। শুধু নিম্নমানের খাবার নয় অভিযোগ রয়েছে প্রায় দিনই দুপুরের খাবার রোগীরা পায় সন্ধ্যায় মেহেরপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম করে ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য যে পরিমাণ খাবার সরবরাহ করার কথা এর অর্ধেক পরিমাণ খাবার দেয়া হচ্ছে। আবার দুপুরের খাবার সন্ধ্যায় পরিবেশন করা হয়। বিশেষ করে খাসির মাংস বরাদ্দ থাকলেও দেয়া হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। উন্নত স্বাস্থ্যসম্মত মাছ দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে অল্প দামের অস্বাস্থ্যকর পাঙ্গাষ মাছ। এছাড়াও চাল, মাংস, মাছ, তেল, ডাল ও জ্বালানি সরবরাহ করা হয় প্রয়োজনের তুলনায় কম ও নিম্নমানের। গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রোগীদের উন্নত খাবার দেয়ার কথা ছিল। ওইদিন রোগী প্রতি ৩০০ গ্রাম খাসির মাংস ও চিকন চালের ভাত মেন্যুতে ছিল। অথচ কেনা হয় ব্রয়লার মুরগি ও মোটা চাল। যেখানে ৭৫ কেজি মাংস দেয়ার কথা সেখানে ৫৯ কেজি মাংস দেয়া হয়েছে, ১৫০ কেজি চালের জায়গায় ৯০ কেজি চাল, ৫০০ পিস মিষ্টির জায়গায় ৩২৫ পিছ, ২৫ কেজি দইয়ের জাগায় ১১ কেজি, যেখানে রোগীপ্রতি দুটি ডিম দেয়ার কথা সেখানে একটি ডিম, একটি করে আপেল দেয়ার কথা থাকলেও একটি আপেল কেটে চার ভাগ করে চারজন রোগীকে দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি পৌরসভার প্রতিনিধিরা যাচাই করে দেখলে তাদের কাছে ধরা পড়ে। তাছাড়া  দই ও  মিষ্টি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল বলে অভিযোগ করে পৌর কর্তৃপক্ষ।

সাধারণ রোগী মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের হারুনুর রশিদ ঢাকাটাইমসকে জানান, আমি সাত দিন ধরে মেহেরপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছি। সাত দিনে দুই দিন পোল্ট্রি মুরগি ও পাঙ্গাস মাছ দেয়া হয়েছে। তাও আবার দুপুরে যা দেয়া হয় এরই এক টুকরো রাতে দেয়া হয়। যদিও সাত দিনে দুই দিন খাসির মাংস দেয়ার কথা।

রোগীর আত্মীয় নুরজাহান বেগম জানান, গতকাল শনিবার আমাদের খাসির মাংস দেয়ার কথা থাকলেও দিয়েছে পোল্ট্রি মুরগি।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের প্রধান বাবুর্চি মনিরুল আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, গতকাল শনিবার খাসির মাংস দেয়া কথা অথচ আমাদেরকে ব্রয়লার মুরগি দেয়া হয়েছে। চাল দেয়ার কথা ১৪৫ কেজি, কিন্তু দিয়েছে ১০০ কেজি, মাছ সাড়ে ৯ কেজির জায়গায় আট কেজি, তেল আট কেজির জায়গায় সাতত কেজি পেয়েছি। এছাড়াও জ্বালানির খড়ি সাত মণ দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয় দুই মণ। আর মালামাল দেরি করে সরবারহ করায় রোগীদের খাবার দিতে দেরি হয় বলে জানান বাবুর্চি।

অনিয়মের প্রতিবাদকারী পৌরসভার প্রতিনিধি জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম পেরেশান ঢাকাটাইমসকে বলেন, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মানে মেহেরপুরবাসীর একটি সম্পদ। জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশের চিকিৎসার ভার নিচ্ছেন তখন দেখি আমাদের মেহেরপুর হাসপাতাল দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। মেহেরপুর পৌরসভা ও জেলা যুবলীগের পক্ষে থেকে যখন হাসপাতালে স্যালাইন সরবরাহসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতা হাত বাড়ানো হচ্ছে তখন একটু পেছনের দরজা দিয়ে তাকালে দেখি এই হাসপাতাল দুর্নীতিই ভরা। তিনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

মেহেরপুর হাসপাতালের ঠিকাদার লাল মিয়া ঢাকাটাইমসকে জানান, মাংস নিয়ে বাজার থেকে আসতে সময় লাগে, কিন্তু এর আগেই আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে সব এলোমেলো করে দেয়। আমি মাল কম দিতে পারি না। কারণ মালামাল বুঝে নেয়ার জন্য আরএমও তত্ত্বাবধায়কসহ অনেকে আছেন।

তবে অভিযোগ আংশিক স্বীকার করে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলায় পুরনো দামে খাবার সরবরাহ করতে হচ্ছে। যার কারণে সমস্যা হচ্ছে। মামলার সমাধান করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়ে কাজ হয়নি বলে জানান।

এদিকে তিনি নিজেই মামলা করে দীর্ঘদিন টেন্ডার বন্ধ রেখে নিজে ঠিকাদারি করছেন এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিষয়টি অনেকটা এড়িয়ে যান।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান অনিয়মের কথা অনেকটা স্বীকার করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ঠিকাদারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে খাবার কম দেয়ার। আমাদের কমিটি এখন খাবার মেপে নিচ্ছে। যেটুকু কম থাকছে বিল পরিশোধের সময়ে আমরা সেটা কেটে নেব।

তিনি বলেন, দুই দিন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে খাবার দিতে দেরি হয়েছে। তাছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে দেরি হওয়ায় খাসির মাংস না পেয়ে ব্রয়লার মুরগির মাংস দেয়া হয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment