জন্মগতভাবেই নেই দুটি হাত ও একটি পা। তারপরও থেমে নেই জীবনযুদ্ধ। এক পা নিয়ে চলছে লড়াই। প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ়তায় প্রাথমিক ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পেয়েছে, জিপিএ ফাইভ। এমন অদম্য কিশোরীর নাম, তামান্না নূরা। বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নে।
জীবন কখনও কখনও এমন বিস্ময়ের জন্ম দেয়…যখন লোপ পায় অবাক হবার ক্ষমতাও। তেমনি এক বিস্ময় বালিকা তামান্না। দুটি হাত নেই…নেই একটি পাও। তারপরও উদ্যম ইচ্ছাশক্তিতে বয়ে চলেছেন জীবনের ভার।
কঠোর অধ্যবসায়কে সঙ্গী করে একের পর একে ছুঁয়ে চলেছেন সাফল্যের চুড়া। পিইসি কিংবা জেএসসি…দুটি পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ-ফাইভ। শুধু তাই নয়; ৯৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে সপ্তম স্থান দখল করে, উঠেছেন দশম শ্রেণিতে। লেখাপড়ার মতো ছবি আঁকায়ও দারণ আগ্রহ তামান্নার। তাইতো নিপুন দক্ষতায় তুলির আঁচরে, নিজের ভাবনাগুলো ফুটিয়ে তোলেন ক্যানভাসে। বাবা-মা হয়তো আগেই বুঝেছিলেন, মেধা আর বিচক্ষণতায় একদিন আলো ছড়াবে তাদের আদরের ধন…তাইতো নামের শেষের অংশটা রেখেছেন নূরা।
বড় হয়ে ডাক্তার হতে চান তামান্না। চান তার মতো অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে। তাই অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও মেয়ের পছন্দেই বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করান বাবা-মা। স্বপ্ন বাড়ছে…সেই সাথে স্বজনের কপালে বাড়ছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ…শারিরিক প্রতিবন্ধকতা, সামাজিক বঞ্চনা আর দারিদ্র্যকে জয় করে তামান্না কী পারবে অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছোতে। চার দেয়ালের আবদ্ধতায় বড্ড অরুচি তামান্নার। তাই মাঝেমধ্যেই মেয়েকে নিয়ে বাইরে বেরোন বাবা রওশন আলী। কিন্তু মেয়ের অবুঝ মন যে খুঁজে ফেরে শৈশবের চঞ্চলতা, তা কীভাবে পূরণ করবেন, হতভাগা বাবা। গল্পে-গল্পে সময় হয়েছে স্কুলের। তাই রোজকার মতোই বাবার সাথে স্কুলের পথ ধরেন তামান্না। অ্যাসেম্বলির সময় অন্য সবার মতোই সম্মান জানান লালসবুজে পতাকার প্রতি। কণ্ঠ মেলান জাতীয় সংগীতে।
সহপাঠি হিসেবে তামান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ বন্ধুরাও। শিক্ষকদের কাছেও সবসময় একটু বেশি আদরের, মেধাবী তামান্না।
ক্লাস শেষ এবার ফিরতে হবে বাড়ি। কিন্তু কীভাবে? কাজের ব্যস্ততায় যে এখনো আসেননি বাবা। উপায় না দেখে এবারও এগিয়ে এলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক।
সবার সহযোগিতায় এগিয়ে যাবেন তামান্নারা। হয়ে উঠবে সুন্দর পৃথিবির গর্বিত নাগরিক, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
https://www.facebook.com/1669611266635595/videos/1930647140532005/