নারী পুলিশ সহ যশোর সিটি হোটেলে এমপি পুত্র আটক,রাতে মুক্তি

নারী এএসআই’র সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় আবাসিক হোটেল থেকে এমপিপুত্র আটক

যশোর শহরের একটি অভিজাত হোটেল থেকে নারী পুলিশসহ আটক হয়েছেন মণিরামপুরের সংসদ সদস্যের ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্য শুভ। বিকালে আটকের পর তাকে রাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে পুলিশ এই ঘটনা পুরোপুরি স্বীকারও করেনি আবার অস্বীকারও করেনি। তবে পূর্বপশ্চিমকে এমপি পুত্রের আটক হওয়ার বিষয়টি হোটেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। পুলিশ প্রশাসন থেকে একেকবার একেক কথা বলছে এমনকি বিষয়টি দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এটি ছিল টক অব দ্য্য টাউন।

 

সূত্র জানায়, সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে কোতয়ালী থানার ইনসপেক্টর (অপারেশন) যশোর শহরের হাটখোলা রোডে হোটেল সিটি প্লাজায় অভিযান চালান। তিনি হোটেলের একটি কক্ষ থেকে শুভ ও মনিপুর থানার একজন নারী পুলিশ সদস্যকে আটক করে নিয়ে যান।

যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্যরে ছেলে সোমবার দুপুর একটার কিছু সময় পর যশোর শহরের টিবি ক্লিনিক এলাকার বাসিন্দা জনৈক তুষার হোটেল সিটি প্লাজায় গিয়ে তার ‘কোম্পানির অফিসার আসবে’ জানিয়ে সেখানকার একটি কক্ষ ভাড়া নেন। তুষার সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্যরে ছেলে শুভর ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর কিছু সময় পর এমপির ছেলে শুভ হোটেলটির ভাড়া করা ৫১৪ নম্বর কক্ষে ওঠেন। তারও কিছু সময় পর কক্ষটিতে যান মণিরামপুর থানার এএসআই সাবরিন। হোটেল কক্ষে নারীকে ঢুকতে দেখে স্টাফদের একজন ফোন দেন। তখন শুভ ওই নারীকে মণিরামপুর থানার পুলিশ কর্মকর্তা ‘নিঝুম ভট্টাচার্য্য’ হিসেবে পরিচয় দেন। বলেন, ‘উনি একটি কাজে এসেছেন। কিছু সময়ের মধ্যে চলে যাবেন।’ পুরুষের কক্ষে নারী ঢোকায় হোটেল কর্তৃপক্ষ কোতয়ালী থানাকে অবহিত করেন।

থানার ইনসপেক্টর (অপারেশন) শামসুদ্দোহা অল্প সময়ের মধ্যে হোটেলে এসে শুভ ও নারী পুলিশ সদস্যকে নিয়ে যান। এই ঘটনার কিছু সময় পর বিকেল তিনটা ১৭ মিনিটে যোগাযোগ করা হয় হোটেল সিটি প্লাজায়। ফোন রিসিভ করে শাকিল নামে একজন বলেন, ‘শিফট চেঞ্জ হওয়ার পর আমি এসেছি। ঘটনা সম্বন্ধে আমি কিছু বলতে পারবো না।’ তিনি হোটেলের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। যোগাযোগ করা হলে হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার শেখ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী হোটেল কক্ষে নারী থাকার বিষয়টি কোতয়ালী থানায় অবহিত করা হয়। এর পর থানার অফিসার শামসুদ্দোহা কক্ষটি থেকে শুভ ও সাবরিনকে আটক করে নিয়ে যান।’

তবে ইনসপেক্টর শামসুদ্দোহা হোটেল সিটি প্লাজা থেকে কাউকে আটকের কথা স্বীকার করেননি। স্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এ সম্বন্ধে কিছুই জানি না।’
এদিকে, ঘটনার পর পরই প্রকাশ হয়ে পড়ে যে, হোটেল কক্ষ থেকে আটক নারী মণিরামপুর থানায় কর্মরত। যোগাযোগ করা হলে মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকাররম হোসেন নিশ্চিত করেন, তার থানায় সাবরিন নামে একজন নারী কর্মকর্তা রয়েছেন।

পরে সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে ওসি মোকাররম জানান, ওই নারী পুলিশ সদস্য পাসপোর্ট করার জন্য বেলা ১২টার সময় থানা থেকে সিসি নিয়ে যশোর যান। এর পর কী ঘটেছে, সে বিষয়ে ওসি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।

ঘটনার বিষয়ে যশোরের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে সংবাদকর্মীরা বার বার জানতে চাইলেও কেউ মুখ খুলতে চাইছিলেন না। পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে জানা যায়, তিনি ছুটিতে আছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্ধ্যার কিছু সময় আগে অবশ্য মুখ খোলেন। তিনি বলেন, ‘একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা অফিস অর্ডার ছাড়া হোটেল সিটি প্লাজায় গিয়েছিলেন। কী কারণে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’

তবে এমপির ছেলে শুভকে আটক করা হয়েছে- এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই বলে দাবি করেন এডিশনাল এসপি। এদিকে, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্যরে স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য কয়েক যুবককে নিয়ে হোটেল সিটি প্লাজায় যান। তারা শুভকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য হোটেল কর্মীদের দায়ী করেন। হুমকি-ধামকিও দেন। বলেন, ‘দশ মিনিটের মধ্যে আমার ছেলেকে হাজির করে দাও।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।   এছাড়া আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ এমপির পরিবারের বিপক্ষে কুৎসা রটানোর জন্য এমন ফাঁদে ফেলা হয়েছে বলে জানা গেছে। সন্ধ্যায় তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমার ছেলে শুভ বাড়িতেই আছে। তবে ওই পুলিশ সদস্য পুলিশ হেফাজতে ছিল এবং রাতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এদিকে, নারী পুলিশ সদস্যসহ শুভর আটক হওয়ার বিষয়ে তার পিতা ও সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য পূর্বপশ্চিমকে বলেন, আমি এখন ঢাকাতে। বিষয়টা আমি জানিনা।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment