পুলিশের দাবি পূরণ না হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

পুলিশের দাবি পূরণ না হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

পুলিশের দাবি-দাওয়া পূরণ না হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশের জ্যেষ্ঠ পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেড-১ পদমর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু চলতি পুলিশ সপ্তাহের মাত্র একদিন আগে একজনকে এবং কয়েকদিন আগে আরেকজনকে গ্রেড-১ এ পদমর্যাদা দেওয়া হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা। পরে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। পুলিশ কর্মকর্তারা নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অভাব, এভিয়েশন উইংয়ের প্রয়োজনীয়তা, প্রমোশনের ক্ষেত্রে নিউমেরিক পদের সৃষ্টি, গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পদমর্যাদার বাস্তবায়নের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। মঙ্গলবার রাতেও রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে পাঁচ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একই বিষয়ে আলোচনা করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, জনপ্রশাসনের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
পুলিশের দাবি পূরণ না হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীরাতের আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে আইজিপি একেএম শহীদুল হক গত এক বছরে জঙ্গি দমন ও অন্যান্য অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনতে পুলিশের সাফল্য তুলে ধরেন। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি উল্লেখ করে নানা সমস্যার কথাও উল্লেখ করেন। বাজেটে পুলিশের উন্নয়নে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ার আশা জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘বরাদ্দ পাওয়া গেলেও সময়মতো অর্থ ছাড় করিয়ে আনাটাই বড় সমস্যা। মন্ত্রণালয়ে যে কোনও ফাইল ধাপে ধাপে সচিব ও মন্ত্রীর কাছে যায়। আবার ধাপে ধাপে তা ফিরে আসে। এতে অনেক সময় লেগে যায়। এ সমস্যা সমাধানে সবার সহায়তা প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশে পাঁচটি গ্রেড-১ পদের দুটি পূরণ হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৭টি গ্রেড-২ পদের সম্মতি দিলেও আমরা মাত্র একটি পেয়েছি। এসব ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসনে গিয়ে আটকে আছে। অর্থও ছাড় হয়নি।’

বৈঠকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘আমি যখন এসপি ছিলাম তখন যারা ইউএনও ছিলেন তারা এখন জয়েন্ট সেক্রেটারি হয়েছেন। কিন্তু আমাদের গ্রেড-১ পদ দেওয়া নিয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা চলছে।’

এই আলোচনার পর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক বলেন, ‘প্রত্যেক ক্যাডার সার্ভিসেই কিছু পদ ও পদের সমমর্যাদা নিয়ে ঝামেলা আছে। আমরা এসব সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছি। প্রধানন্ত্রীর নির্দেশে একটি সেল গঠন করা হয়েছে। এসব ঝামেলা দ্রুত সমাধান করা হবে।’

৩০ ভাগ প্রশিক্ষণ ভাতা চায় পুলিশ

ওই বৈঠকে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআিইজি (ট্রেইনিং) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘প্রশাসন-শিক্ষাসহ সব ক্যাডারে প্রশিক্ষণ ভাতা চালু থাকলেও পুলিশের প্রশিক্ষণ ভাতা নেই। ভালো কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ একাডেমিতে যেতে চান না। অথচ পুলিশের জন্য প্রশিক্ষণ খুবই জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ৩০ ভাগ প্রশিক্ষণভাতা দেওয়া হলে প্রশিক্ষণ একাডেমির মান বাড়বে এবং দক্ষ কর্মকর্তারাও সেখানে কাজ করতে আগ্রহী হবেন।’

এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাডেমিগুলো একটি কমপ্লেক্সের মধ্যে আনা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

বহুতল ভবন নির্মাণের দাবি

পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ডেভেলপমেন্ট) গাজী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘পুলিশের আবাসন সমস্যা দূর করতে বহুতল ভবনের কোনও বিকল্প নেই। এজন্য রাজধানীতে আটটি ও বড় জেলাগুলোয় একটি করে বহুতল ভবন তৈরি করা প্রয়োজন।’

এ সময় পুলিশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন অতিরিক্ত ডিআইজি শোয়েব রিয়াজ আলম। তিনি বলেন, ‘রাজধানীতেই ১৫টি থানা ভাড়া বাসায় কার্যক্রম চালাচ্ছে।’

এসব দাবির পর ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বলেন, ‘আপনারা দেশের জন্য কাজ করবেন।  আমরা গুরুত্ব দিয়ে সমস্যাগুলো সমাধান করবো।’

আইন সংশোধনের দাবি

পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘হেফাজতে নির্যাতন আইনে মানসিক কষ্ট পাওয়ার একটি ধারা রয়েছে। কিন্তু মানসিক কষ্টকে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। একজন ব্যক্তি গ্রেফতার হলেই মানসিক কষ্ট পেতে পারে। এটা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ থাকা উচিত। বিভিন্ন থানার ওসিদের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা হয়। ফলে সাব ইন্সপেক্টররা মামলা তদন্তে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কারণ এই ধারার মামলা জামিনঅযোগ্য। আমরা এই আইন বাতিল চাই না, তবে সংশোধন চাই।’

এছাড়া সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় চার্জশিট দেওয়ার আগে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নেওয়ার বিষয়টিও আলোচনা হয়।

এসব দাবির বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আমরা ইন্টারনাল মিটিং করে এসব সমস্যার সমাধান করবো।’

যানবাহন সমস্যা

পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ট্রান্সপোর্ট) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘অপারেশনের জন্য প্রতিটি গাড়ি কিনতে ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই টাকায় ছোট গাড়ি কেনা যাবে। কিন্তু অপারেশনের জন্য বড় গাড়ি প্রয়োজন। যেটাতে অফিসারসহ ৬-৭ জন মুভ করতে পারে। তাই বাজেট বাড়ানো প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চলতি বছর থানার জন্য ৮২টি গাড়ি বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বর্তমানে মেট্রোপলিটন এলাকার থানাগুলোয় দুটি করে গাড়ি রয়েছে। যা বাড়িয়ে চারটি করা দরকার। অন্য থানাগুলোয় দুটির জায়গায় তিনটি এবং তদন্ত কেন্দ্রগুলোয় একটি করে গাড়ি প্রয়োজন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘পুলিশের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের চেষ্টা করা হবে।’

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment