সাভারে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা

নোমান মাহমুদঃ-
রাজধানীর উপকন্ঠ শিল্পাঞ্চল খ্যাত সাভার এলাকায় দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে ছিনতাই-ডাকাতির মত অপরাধমূলক কর্মকান্ড। গত কয়েকমাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বেশ কিছু সংঘবদ্ধ ছিনতাই ও ডাকাত চক্র ধরা পড়ার পরেও থেমে নেই ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা। গতকাল (শনিবার) ভোরেও সাভারের আমিনবাজার এলাকায় অবস্থিত ইউনাইটেড জেনারেল ইলেক্ট্রনিক্স নামে একটি ট্রান্সফরমার তৈরীর কারখানায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় কারখানার ব্যবস্থাপক রোকনুজ্জামান জানান, ২০/২৫ জনের একদল ডাকাত ভোররাতে কারখানায় প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে কারখানায় কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার ও ষ্টাফদের জিম্মি করে নগদ ১ লক্ষ টাকা সহ কারখানার প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। অন্যদিকে গত শুক্রবার বিকালে সাভার পৌর এলাকা নামাগেন্ডা হতে যাত্রী বেশে একটি ব্যাটারীচালিত অটোরিকশায় উঠে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উলাইল এলাকা থেকে ফিরোজ (১৬) নামে এক কিশোর রিকচালককে মারধর করে দেশীয় অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে চালকের ব্যাটারীচালিত রিক্সা ও চালকের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায় ৩ সদস্যের ছিনতাইকারী দল।
সাভারে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনাএঘটনার পরদিন আবার ছিনতাইকারীরা ছিনতাইকৃত মোবাইল থেকে ছিনতাইয়ের শিকার রিক্সা চালকের পরিবারের সাথে কথা বলে ছিনতাইকৃত রিক্সা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে বিকাশে নগদ আরও ২ হাজার টাকা গ্রহন করে, তবে টাকা গ্রহনের পরেও ছিনতাইকারীরা আর রিক্সাটি ফিরিয়ে দেয়নি। গত দু’দিনের ছিনতাই ও ডাকাতির দুটি ঘটনাতেই ভুক্তভোগীরা সাভার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। এদিকে সাভার-আশুলিয়ায় বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া এসকল অপরাধমূলক ঘটনা ও বিভিন্ন ছিনতাই-ডাকাতি চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) তৎপরতা দেখা গেলেও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে এসকল অপরাধী চক্র দমনে তেমন কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়না। অন্যদিকে ডাকাতি কিংবা বড় কোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও ছোট-খাটো ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দায়ের না করার কারনে এসব এলাকায় ঘটে যাওয়া অপরাধমূলক এসকল কর্মকান্ডের সঠিক কোন পরিসংখ্যান থাকছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। আবার বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, থানায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় অভিযোগ দিলেও সর্বক্ষেত্রে মামলা গ্রহন করা হয়না। তাতে করে দেখা যায় সাধারন ডায়েরী ব্যতিত থানায় দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগগুলোর বিষয়বস্তুও থেকে যাচ্ছে হিসাবের বাহিরে। আর সাভার-আশুলিয়ায় ঘটে যাওয়া এসকল অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঠিক হিসাব আড়াল হয়ে যাওয়ার কারনে অনেক অপরাধী কিংবা অপরাধী চক্রগুলো থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাহিরে। সচেতন মহল বলছে, ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও তৎপর না হলে এসকল অপরাধীদের নির্মূল সম্ভব হবে না। সেইসাথে ভুক্তভোগীদেরও প্রতিটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানাকে লিখিতভাবে অবহিত করে অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগীতা করতে হবে। তা নাহলে অপরাধীদের দৌরাত্ম দিনের পর দিন বেড়েই চলবে। সাভার মডেল থানাধীন এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির এসকল ঘটনা ও অপরাধী চক্রের দৌরাত্ম সম্পর্কে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহসিনুল কাদির বলেন, ”আমার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক উন্নত। তাছাড়া সব ঘটনায় আমাদের কাছে অভিযোগ আসেনা, অভিযোগ আসলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেই”। উদাহরনস্বরুপ তিনি বলেন, গতকাল ভোররাতে আমিনবাজারের ডাকাতির অভিযোগেও মামলা গ্রহন করা হয়েছে। তাছাড়া এসকল অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকার কারনে অপারাধীদের ধরা ছোয়ার বাহিরে থাকা এবং এসকল অপরাধীদের নির্মূলে কি ধরনের পদক্ষেপ কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment