যশোরের শতবর্ষী গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হাইকোর্টে স্থগিত

যশোরের শতবর্ষী গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হাইকোর্টে স্থগিত

সড়ক প্রশস্ত করতে যশোর-বেনাপোল সড়কের শতবর্ষী গাছ কাটার সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

যশোরের শতবর্ষী গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হাইকোর্টে স্থগিত

রিট আবেদনে পক্ষে ছিলেন- আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এর আগে গত রোববার এ গাছ কাটার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন বেসরকারি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ মো. মহিবুল্লাহ।

তার পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নোটিশটি পাঠান। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

সড়ক ও জনপথ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, খুলনার ডিসি ও যশোরের পুলিশ সুপারকে আগামী সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে নোটিশে।

আইনজীবী ইশরাত হাসান সাংবাদিকদের বলেন, যশোর-বেনাপোল সড়কের দুই হাজারের বেশি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই গাছগুলো দেশের ঐতিহ্য। গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। তাছাড়া গাছ কাটার সিদ্ধান্ত সংবিধানের সঙ্গে সাংর্ঘষিক।

উল্লেখ্য, যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক চার লেন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সড়ক বিভাগ এরই মধ্যে দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে।
গত ৬ জানুয়ারি এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক বিশেষ সভায় সড়ক চওড়া করতে দুই ধারের গাছগুলো কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা করছেন কেউ কেউ। তাদের দাবি, গাছ না কেটেও সড়ক চওড়া করা সম্ভব। তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, গাছ রেখে সড়ক চওড়া করতে হলে সড়কের পাশে বিপুল পুরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। বন্দর এলাকায় জমির দাম বেশি বলে সড়ক নির্মাণের খরচ বেড়ে যাবে।

জানা যায়, ‘‘১৮৪০ সালে এই যশোর রোডের নির্মান কাজ শুরু করেন যশোরের তখনকার জমিদার কালি পোদ্দার৷ ১৮৪৪ সালে সড়ক নির্মাণ শেষ হয়৷ এরপর তিনি রাস্তার দু’ধারে সারি সারি রেইনট্রি লাগান ছায়ার জন্য৷ বাংলাদেশ অংশে তাঁর লাগানো প্রায় ১৮০ বছর বয়সি গাছ আছে আড়াইশ’র মতো৷ পরে আরো গাছ লাগানো হয়েছে৷ সব মিলিয়ে ৩৮ কি. মি. সড়কের দু’ ধারে দুই হাজারেরও বেশি গাছ রয়েছে৷’’ ‘‘কথিত আছে জমিদার কালি পোদ্দার তাঁর মা-কে চিকিৎসার জন্য সড়ক পথে কলকাতা নিতে এই রাস্তা নির্মাণ করেন৷ আর গাছ লাগান ছায়ার জন্য৷’’

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এই যশোর রোড জড়িয়ে আছে৷ এই যশোর রোড ধরেই শত শত শরণার্থী বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাড়ি দিয়েছেন৷ বিখ্যাত মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ এই সড়কটিকে বিশ্ববাসীর কাছেও পরিচিত করেছে৷ বাংলাদেশে গণহত্যা আর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে যাওয়া মানুষের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’৷

এই যশোর রোড এখন প্রশস্ত করার কাজ শুরু হয়েছে৷ ভবিষ্যতে এই সড়ক হবে ফোর লেন থেকে সিক্স লেন৷ এখন সড়কটি দুই লেনের৷ গত ৬ জানুয়ারি যশোরে এক মতবিনিময় সভায় স্থানীয় তিন সংসদ সদস্য এবং প্রকৌশলীরা সড়ক উন্নয়নে দু’ পাশের সব গাছ কেটে ফেলার পক্ষেই মত প্রকাশ করেন৷ তাঁরা মনে করেন, রাস্তা প্রশস্ত করতে হলে গাছ কাটতেই হবে৷

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment