শীতের প্রকোপে নওগাঁয় বোরো বীজতলা ও আলুু ক্ষেতে মড়ক; ফলন বিপর্যয়ের আশংকা

শীতের প্রকোপে নওগাঁয় বোরো বীজতলা ও আলুু ক্ষেতে মড়ক; ফলন বিপর্যয়ের আশংকা

ফারমান আলী,নওগাঁ প্রতিনিধি: –
প্রচন্ড শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে শস্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁয় বোরো চাষ থমকে দাঁড়িয়েছে। হিমালয়ের বরফগলা হাওয়া কাঁপিয়ে তুলেছে নওগাঁর জনপদ। ঘনকুয়াশার সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। ফলে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। স্থবির হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা। সকাল থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে পথঘাট। গত কয়েক দিনের শৈত্য প্রবাহের ফলে শীত আর ঘন কুযাশায় বোরো বীজতলার ধানের বীজ, পিয়াজ ও রসুন ক্ষেতের পাতা হলুদ হয়ে মারা যাচ্ছে। পর্যাপ্ত আলো না পাওয়ায় আলুতে দেখা দিয়েছে মড়ক। ফলন রক্ষায় ছত্রাক নাশক বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করছেন কৃষকরা। কিন্ত প্রতিকুল আবহাওয়ায় কীটনাশক প্রয়োগে কাজে আসছে না তেমন। এতে ফলন বিপর্যয়ের আশংঙ্খাও করছেন কৃষকরা। আত্রাই উপজেলায় এবার বোরো চাষ প্রচন্ড শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে থমকে দাঁড়িয়েছে।
শীতের প্রকোপে নওগাঁয় বোরো বীজতলা ও আলুু ক্ষেতে মড়ক; ফলন বিপর্যয়ের আশংকাচলমান শৈত্যপ্রাবাহ আর ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বীজতলার চারা গাছগুলো লালচে আর হলুদ হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা সময়মতো বোরো আবাদ করতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন-চলমান শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যের আলো না পাওয়ায় বীজতলার চারা গাছগুলো ‘কোল্ড ইনজুরি’তে আক্রান্ত হয়ে মরে যাচ্ছে। এদিকে তীব্র শীতের কারণে দিনমজুররা মাঠে নামতে পারছে না। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ইরি বোরো রোপণে দিন দিন ভাটা পড়ছে।

প্রতিবছর ঠিক এই সময়ে বোরো চাষে কৃষকরা বীজতলা থেকে বীজ উত্তোলন, দিনরাত সেচ পাম্প খোলা এবং চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেলেও এবার মাঠে সে দৃশ্য খুব অল্পই চোখে পড়ছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ৬০ শতাংশ বোরো বীজতলা শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বাড়েনি। লালচে হয়ে অনেক ক্ষেত্রেই শুকিয়ে যাচ্ছে। মাঠে কৃষকদের বোরো রোপণ করতে দেখা যাচ্ছে খুব কম। সেচ পাম্পগুলো তেমন ভাবে চলছেনা। অথচ এ মৌসুমে মাঠে মাঠে ইরি বোরো রোপণে কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকদের ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। দিন রাত সেচ পাম্পগুলো খোলা থাকত। ট্রাক্টরে জমি চাষের দৃশ্য ছিল অহরহ। সকালে বীজতলা থেকে চারা উঠাতে ব্যাস্ত থাকত কৃষাণ-কৃষাণীরা।

ইকরতারা গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, “তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে ইরি বোরোর চারা বড় হচ্ছে না। লালচে রং ধরে শুকিয়ে যাচ্ছে। চারাগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। দুর্বল চারায় ফলন ভালো হবে না।
বরুনকান্দী গ্রামের বোরো চাষী হেলাল জানান, “এসময় প্রতিদিন দিনমজুর হিসাবে অধিক টাকায় মাঠে ব্যাস্ত থাকলেও শীতের কারণে বর্তমানে ইরি বোরো রোপণ করা যাচ্ছে না। প্রচন্ড ঠান্ডার কারনে কিছুক্ষন রোপণ করার পর হাতে আর কাজ করার মত অনুভূতি পাওয়া যায় না। তাই বসে আছি।
সেচ পাম্পের মালিক মানিক সরকার জানান, “কৃষকরা মাঠে নামছে না। তাই জমির মালিকরাও বোরো চাষের জন্য জমি তৈরি করছে খুব কম। একারণেই প্রায় সময়েই সেচ পাম্প বন্ধ থাকছে। আগে এই সময়ে দিন রাত সেচ পাম্প খোলা থাকত। শীত না কমলে মাঠে নামতে পারবে না কৃষকরা।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলেন, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে এবং সূর্যের আলো কম থাকায় বীজতলার চারাগাছগুলো খাদ্য সরবরাহ না হওয়ার কারণে প্রথমে হলুদ এবং পরে লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা কৃষকদের বীজতলাগুলো সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া এবং বীজতলায় রাতে প্রচুর পরিমাণে পানি জমে রেখে সকালে সেই পানি বদলে আবার নতুন পানি রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে রবিশষ্যের ক্ষেতে বোরো আবাদের জন্য পরে যেসব বীজতলা তৈরি করা হয়েছে সেগুলো বেশি আক্রান্ত হয়েছে। আগের যেসব বীজতলায় বীজ বড় হয়েছে সেগুলোর কোনো সমস্যা হয়নি। তবে শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী হলে বীজতলা আরো নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা আছে।

জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে কৃষকরা ইতোমধ্যে ৯ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করেছেন। রোপনকৃত জমির মধ্যে উন্নত ফলনশীল উফশী জাতের ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৭১ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের ১০ হাজার ৯৭৮ হেক্টর। গত বছর বোরো লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৮ হেক্টর জমি। আলুর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে প্রায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে।
চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষা ২৭ হাজার ৫০০ হেক্টর, পেঁয়াজ ৩ হাজার ৪৩০ হেক্টর ও ১ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ করা হয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment