ইয়াবার ভয়ঙ্কর বিস্তার ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে,ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ

ইয়াবার ভয়ঙ্কর বিস্তার ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে,ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ

রিয়াজ উদ্দীন (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জের পৌর এলাকাসহ  উপজেলা জুড়ে প্রায় সকল ইউনিয়নের আশেপাশের  সমগ্র  গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ক্রেজি মেডিসিন ইয়াবার ভয়ঙ্কর বিস্তার ঘটেছে। ইয়াবায় আসক্ত শতকরা ৫০ ভাগ ছেলেদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। মাদকাসক্ত হয়ে অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ায় স্কুল-কলেজের গন্ডি পার হতে পারছে না অনেক তরুণ। আবার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণির ছাত্রীরাও ইয়াবার নেশায় উন্মাদ। চিকিৎসা করেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছে না মাদকাসক্তরা। ফলে তারা যৌন অপরাধসহ নানা ধরণের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ইয়াবার ভয়াবহ ছোবল থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন আক্রান্ত ছেলে-মেয়ের  বাবা-মায়েরা। ইয়াবা সেবন করার কারণে ধ্বংসের পথে হাজার হাজার পরিবার। কেউ আসক্ত হচ্ছে পাড়ার বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে, আবার কেউ বা আসক্ত হচ্ছে স্কুল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীর পাল্লায় পড়ে। ইয়াবা সেবন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে বন্ধু ও সহপাঠীরা। এভাবেই মরণ ব্যাধি নেশায় আসক্ত হচ্ছে তরুণরা। এক পর্যায়ে তরুণরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে ইয়াবা খাওয়া ও বেচাকেনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পরিবার থেকে ইয়াবা কেনার টাকা না দিলে বাবা-মাকে মারধর করে মাদকাসক্ত ছেলেরা। অনেক সময় ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মাদকাসক্ত ছেলেকে পরিবার ছাড়া করছেন বাবা-মা। আবার পরিবার থেকে টাকা না দিলে  অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে এসব ছেলেরা। ইয়াবা কেনার টাকার জন্যই অপরাধে জড়াচ্ছে মাদকাসক্ত ছেলেরা। ইয়াবা কেনার জন্যই মূলত তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অপরাধের কারণে তারা পরিবার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আবার দেখা য়ায় মাদকাসক্ত ছেলের হাতে বাবা খুন হচ্ছে।
ইয়াবার ভয়ঙ্কর বিস্তার ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে,ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজমাদকাসক্ত ছেলেদের অভিভাবকরা জানান, চিকিৎসা করেও স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পারছেন না তাদের মাদকাসক্ত সন্তানদের। সন্তান ইয়াবা সেবন করার কারনে অনেক পরিবার ধ্বংস হতে চলছে। সমাজেও হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে মাদকাসক্ত সন্তানদের অপকর্মের কারণে। মাদক সিন্ডিকেটের ছড়িয়ে থাকা বিশাল শক্তিশালী জালের মাধ্যমে সহজে ছড়িয়ে পড়ছে এই মরণ নেশা ইয়াবা। মরণনেশা ইয়াবার সর্বনাশা থাবায় হাজার হাজার পরিবারের সন্তানের জীবন আজ বিপন্ন। এমন সন্তানদের বাবা মায়ের কান্না এখন ঘরে ঘরে। অথচ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগা দিয়ে প্রসার ঘটছে ইয়াবা ব্যবসার। সমাজের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ও এই ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসৎ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী সিন্ডিকেট ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রন করছে। যে কারণে কোন ভাবেই ইয়াবার আগ্রাসন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধ্বংস করে মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। জেলার সর্বত্রই এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় ‘ক্রেজি ড্রাগ’ ইয়াবা। মোবাইল ফোনে অর্ডার দিলেই মুহুর্তেই হাতে চলে আসছে হরেক রঙের ইয়াবা ট্যাবলেট। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসৎ সদস্য ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় সুচারুভাবে চলছে এই ইয়াবার ব্যবসা।

জানা গেছে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুণী শুধু নয়, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীদের একটি বড় অংশও এখন ইয়াবায় আশক্ত। সহজলভ্যতার কারণেই ইয়াবা আসক্তির সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে বলে মনে করছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর। ১৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারী-পুরুষ মাদক সেবন করছে। তবে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী মাদকসেবীর সংখ্যাই বেশি।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবদেহের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর নেশা দ্রব্যের মধ্যে ইয়াবা অন্যতম একটি। ইয়াবা অর্থ হলো ক্রেজি মেডিসিন বা পাগলা ঔষুধ। মেথ্যাম ফিটামিন, উত্তেজক পদার্থ ক্যাফিনের সঙ্গে হেরোইন মিশিয়ে তৈরি করা হয় ইয়াবা। এ নেশা দ্রব্য হেরোইনের চেয়ে ভয়াবহ। তাদের মতে, ইয়াবা সেবন করার পর সাধারণত নির্ঘুমতা, চাঞ্চল্যতা ও শরীরে উত্তেজনা দেখা দেয়। ক্রমান্বয়ে আসক্ত হওয়ার পর এটা মনব শরীরে নানা প্রকার ক্ষতি করে থাকে। মনে হতাশা, বিষাদ, ভয়, অনিশ্চয়তার উদ্ভব হতে পারে। এ ছাড়া এটি সেবনকারীকে আচরণগত ভাবে সহিংস করে তুলতে পারে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধীরা ক্রমশ সহিংস হয়ে উঠছে ইয়াবার প্রভাবেই।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ইয়াবার খুচরা ব্যবসায়ীরা মাঝে মধ্যে গ্রেফতার হয়। কিন্তু মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এতে করে ঠেকানো যাচ্ছে না ইয়াবা ব্যবসা। বানের পানির মতো ঢুকছে ইয়াবার চালান। আর যারা গ্রেফতার হচ্ছেন তাদের আটকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আইনের ফাঁক-ফোকড় দিয়ে কোন এক অদৃশ্য শক্তিতে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসছে তারা । আবার ফিরছে ইয়াবা ব্যবসায়।

স্থানীয় সুনামধন্য একজন আইনজীবীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মাদক ব্যবসা ও ব্যবহারে জড়িত ব্যক্তিদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ধরে আদালতে পাঠানোর পর জামিনে মুক্তি পাচ্ছে। জামিন যোগ্য সব ধারা পরিবর্তন করে অজামিন যোগ্য করাটাই এখন শুধুমাত্র সময়ের দাবী। তানাহলে এ অপরাধ কমবে না। কমবে না মাদক ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্কও।

ইয়াবা সেবনকারী ছেলের এক অভিভাবক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, কালীগঞ্জে ইয়াবার ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। উঠতি বয়সী তরুণরাই সবচেয়ে বেশি আসক্ত হচ্ছে মরণ ব্যাধি এই নেশায়। ইয়াবার কালো থাবা এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তরুণ প্রজন্ম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। ইয়াবা সেবন করার ফলে ভালো মন্দ বিচার করার ক্ষমতা থাকে না। ইয়াবার কালো থাবা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আমাদের পরিবারের মত সারা দেশের লক্ষ পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, ইয়াবা হাতের নাগালে পাওয়ার কারণেই অন্ধকার পথে পা বাড়াচ্ছেন তরুণরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জেলার শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার কাছে আকুতি জানিয়ে এই অভিভাবক বলেন, এই দেশের তরুণদের সুরক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নিন। না হলে আমাদের ছেলের মত লাখ লাখ ছেলে ধ্বংস হয়ে যাবে। ইয়াবা পাচার ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর ভাবে বিচারের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment