রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন হামিদ না শিরিন

রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন হামিদ না শিরিন

দেশের সবথেকে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি হলেন রাষ্ট্রপতি। দেশের সবার উপরে তার মর্যাদা। আজ দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। কিন্তু কে হচ্ছেন নতুন রাষ্ট্রপতি ? বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য এ পদে আসীন হচ্ছেন নাকি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নতুন রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন। আপাতত এ দু’জনকে নিয়েই আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। তবে এর বাইরেও কয়েকজনের নাম আলোচনায় আছে। আলোচনা যাই হোক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেহেতু বর্তমান সংসদে বিএনপি নেই। আওয়ামী লীগের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এমপিদের দলের বাইরে ভোট দেয়ার বিধান নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের মনোনীত প্রার্থীই হবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। দেখার বিষয় হচ্ছে এ যাত্রায় কাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নিচ্ছেন তারা ?

রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন হামিদ না শিরিন
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এবারো রাষ্ট্রপতি হিসেবে থেকে যেতে পারেন মো. আব্দুল হামিদ। তিনি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে অভিজ্ঞ। সবার কাছেই তিনি গ্রহণযোগ্য। তার সম্পর্কে কোনো বিতর্ক নেই। সরকারের বিভিন্ন সংকটকালে তার পরামর্শ থেকে উত্তরণে সফলতা পেয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন, প্রধান বিচারপতি বিদায় সংক্রান্ত সমস্যা এমনকি বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও তার পরামর্শ সরকারের কাজে লেগেছে। এছাড়া চলতি বছরই হতে যাচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের আগে নতুন কাউকে রাষ্ট্রপতি করে ঝুঁকি নিতে চাইবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কাজেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে আব্দুল হামিদের নামই উজ্জ্বল।
আবার কেউ কেউ বলছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্তই আস্থাভাজন। এর আগে টেকনোক্র্যাট কোটায় তাকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এখান থেকে তাকে সরাসরি স্পিকার করে নেন প্রধানমন্ত্রী। স্পিকার হিসেবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকেই দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এখন তাকে রাষ্ট্রপতি করার সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ রাষ্ট্রের বড় বড় পদে মহিলারা অধিষ্ঠিত আছেন। নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগ বেশ সোচ্চার। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো নারী রাষ্ট্রপতি হতে পারেননি। তাই এই রেকর্ড ভাঙতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন নারীকে রাষ্ট্রপতি করে। শেষ পর্যন্ত শিরীন শারমিন রাষ্ট্রপতি হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের প্রতি বাড়বে নারীদের সমর্থন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকেও করা হতে পারে রাষ্ট্রপতি। তবে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, স্ত্রী শীলা ইসলামের মৃত্যুর পর তিনি অনেকটাই নীরবে সময় কাটাচ্ছেন। কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যেতে তিনি নিজেই হয়তো রাজি হবেন না। বর্তমান প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন আগামী পাঁচ বছরের জন্য। আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন দিক পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে।
এদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হবে আজ বৃহস্পতিবার। গতকাল জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। তিনি জানান, আগামী ১৮ থেকে ২০শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হবে। এর আগে সিইসি বিকাল তিনটায় সংসদ ভবনস্থ স্পিকারের কার্যালয়ে যান। সাক্ষাতের বিষয়ে স্পিকার সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সংসদ সচিবালয় থেকে আমার কাছে সিইসির সাক্ষাতের সময় চাওয়া হয়েছিল। সে হিসেবে আজ বৈঠক হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল আমাকে জানানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে থাকেন। ইসি সচিবালয় থেকে আমাদের কাছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা চাওয়া হয়েছিল। আমরা তা সরবরাহ করেছি।
প্রসঙ্গত কোনরূপ প্রতিদ্বন্দ্ব্তিা ছাড়াই মো. আব্দুল হামিদ বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ২৯ এপ্রিল, ২০১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরূপে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন ২১ এপ্রিল তারিখে। অতঃপর এ নির্বাচনে অন্য কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল না করায় ও প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাইপূর্বক বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রাকিবউদ্দীন আহমদ ২০ এপ্রিল তাকে দেশের রাষ্ট্রপতিরূপে ঘোষণা দেন। এরফলে তিনি জাতীয় সংসদের ইতিহাসে দ্বিতীয় স্পিকার হিসেবে দেশের তৃতীয় অবস্থান থেকে প্রথম অবস্থানে উন্নীত হন ও তার স্পিকার পদটি শূন্য হয়ে যায়। তার পূর্বে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস ১৯৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদের স্পিকার থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ২৪ এপ্রিল, ২০১৩ সালে ভারপ্রাপ্ত স্পিকার শওকত আলী’র কাছ থেকে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
এ পর্যন্ত যারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা হলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম (অস্থায়ী), আবু সাঈদ চৌধুরী, মোহাম্মদউল্লাহ, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, জিয়াউর রহমান, আব্দুস সাত্তার, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, আফম আহসানউদ্দিন চৌধুরী, আবদুর রহমান বিশ্বাস, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জমিরুদ্দিন সরকার, ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ও জিল্লুর রহমান।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment