আপনি চাইলে প্রেমিকা ভাড়া নিয়ে সবই করতে পারবেন!

আপনি চাইলে প্রেমিকা ভাড়া নিয়ে সবই করতে পারবেন!

টাকার বিনিময়ে টিউটর বা বাসার গৃহকর্মী সাপ্লাই দেয়ার কথা তো আমরা অনেক শুনেছি। ডিজিটাল যুগে এ জাতীয় কাজ করার জন্য গড়ে ওঠেছে বহু ব্রোকারি প্রতিষ্ঠান। তাই বলে প্রেমিক বা প্রেমিকা সাপ্লাইয়ের কথা তো আগে কখনও শুনিনি। এবার নাকি সেটাও শুরু হয়েছে। কলকাতায় রাতারাতি কিছু ভুঁইফোড় কোম্পানি গজিয়েছে। তারা বান্ধবী বা প্রেমিকা জুটিয়ে দেয়ার দারুণ সব প্রলোভন দেখাচ্ছে। তাদের দেয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নাম্বারে মোটা টাকা ফেললেই নাকি মিলছে বন্ধু বা বান্ধবী, যার যেটা দরকার। এখানে একটা নমুনা তুলে ধরা হলো।

— হ্যালো, এটা কি ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি?
— হ্যাঁ, বলুন স্যার, কোথা থেকে বলছেন?‌
— আপনাদের মেম্বারশিপের ব্যাপারে .‌.‌.‌
— হ্যাঁ, স্যার, আপনাকে দুটো জিনিস বলি। আমাদের মেম্বারশিপ করতে হলে ৩ হাজার ৫০ টাকা দিতে হবে। তার জন্য আপনি প্রতি সপ্তাহে ২ জন করে বন্ধু বা বান্ধবী পাবেন। তাদের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা বা ঘুরতে যেতে পারবেন। যদি ইন্টারেস্ট থাকে তাহলে ওটাও (!) পাবেন।
— আপনাদের সঙ্গে কী করে যোগাযোগ করব?‌
— খুব ইজি স্যার। এই তো আপনি আমার সঙ্গে কথা বললেন। আমার নাম নেহা। এই নম্বরে ফোন করলে আপনি আমাকেই পাবেন। আপনি কোথায় থাকেন স্যার? আপনার নাম?‌
— আমার নাম দিলীপ পাল। থাকি বাঁশবেড়িয়াতে।
— ওকে স্যার। কোনও প্রবলেম নেই। আমরা আপনার কাছাকাছি কনট্যাক্ট নাম্বার দিয়ে দেব। আপনি ফোন করে শুধু বলবেন, ইউনিক ফ্রেন্ড ক্লাব থেকে বলছি। স্যার আপনার বয়স কত?‌ কী করেন?‌
— তেত্রিশ। বাবার ব্যবসা দেখি।
— কোনও প্রবলেম নেই স্যার। আপনার কী রকম বয়সের বান্ধবী চাই?‌
— এই ধরুন, ২৫–‌৩০ বয়সের মধ্যে।
— ওকে স্যার, ম্যারেড, আনম্যারেড সব পাবেন। আমাদের একটা ফর্ম আছে, সেটা ফিলআপ করে দেবেন। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটা বলে দেব স্যার?‌
— আসলে আপনার সঙ্গে এখুনি কথা হল, টাকাটা যোগাড় করি। আপনার নাম্বার তো রইলই। আর একটু ডিটেলস লাগবে।
— স্যার আপনি যা জানতে চান বলুন। আমি ভীষণ ফ্রি, ‌কথা বলতে ভালবাসি। আমাদের স্টেট ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে। আপনি যাকে বান্ধবী করবেন, সে কিন্তু খারাপ মেয়ে না। মিশলেই বুঝতে পারবেন।

ঠিক এভাবেই সাধারণ মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে থাকে ওই ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি। শুক্রবার দুপুরে বন্ধু–‌বান্ধবী চাই বলে এসএমএস বা ফোন আসা নম্বরগুলিতে ফোন করে এমনই অভিজ্ঞতা হয় স্থানীয় এক প্রতিনিধির।

খোদ কলকাতার লেকগার্ডেনস এলাকা থেকেই আপাতত চলছে মোটা টাকার বিনিময়ে বন্ধু–‌বান্ধবী জুটিয়ে দেওয়ার এক চক্র। শুধু কলকাতায় নয়, বহু জায়গাতেই ১৮–‌৫৫ বছরের মধ্যে সখা–‌সখী গোপনে জুটিয়ে দেওয়ার এক গোপন ঘটকালির আসর চলছে!‌ পুলিস মাঝেমধ্যে ধরপাকড় করে। গ্রেপ্তার হয় বহু। প্রচুর সিমকার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট উদ্ধার হয়। কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর ফের সিম ও নাম বদলে আবার চক্র গজিয়ে ওঠে।

নির্দিষ্ট কয়েকটি নম্বর থেকে ফোন, এসএমএস তো আসেই। সরাসরি যোগাযোগ করলে একেবারে সাহসী ঢঙে অ্যাড্রিনালিন চলকে ওঠার মতো নানা কথা বলে যায়!‌ একই জায়গা থেকে নানা নম্বরে ফোন এসএমএস করে হয়। অনেক সময় বাল্ক মেসেজ ছেড়ে দিয়ে দেখে, টাকা দিয়ে বন্ধু–‌বান্ধবী জোটানোর জালে খদ্দের পড়ল কিনা!‌

সকাল, বিকেল, দুপুর, রাত; যখন তখন নিষিদ্ধ ‌সম্পর্কের ইশারা দিয়ে ফোন আসে। কিছু ফোন কলকাতা থেকে, কিছু ঝাড়খণ্ড থেকেও আসে। আসলে সবই এক প্রতারণা। টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়লেই সেই ফোন নম্বর বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধু বা ‌বান্ধবী কিছুই আসে না। এখন আবার ট্রেনে–‌ট্রামে–‌বাসে সাদা বা রঙিন কাগজে ফোন নম্বর দিয়েও বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা পুলিস বলছে, এ সমস্তই প্রতারকের দল। নিষিদ্ধ সম্পর্কের ফল খেতে গিয়ে মোটা টাকা পানিতে না ফেলাই ভাল।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment