‘আমার বউ কই?

‘আমার বউ কই?

নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় চল্লিশ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়ে অজ্ঞান ছিলেন ডা. রেজওয়ানুল হক শাওন। অবশেষে মঙ্গলবার সকালে জ্ঞান ফিরলে শাওন তার বাবা মোজাম্মেল হককে জিজ্ঞেস করেন, আমার বউ কই? জবাবে তার বাবা মৃত্যুর খবরটি লুকিয়ে বলেন, শশীকে অন্য একটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নেপালে পৌঁছেছেন ডা. শাওনের বাবা। নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তার স্ত্রী তাহিরা তানভিন শশী। কিন্তু গুরুতর আহত হয়ে শাওন নেপালের ওম হসপিটাল এন্ড রিসার্চ সেন্টারের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। স্বামী ডা. রেজওয়ানুল হক শাওনের (৩৬) সাথে পাশের সিটে বসে যাচ্ছিলেন তাহিরা তানভিন শশী (২৬)। নিজেদের সপ্তম বিয়েবার্ষিকী পালন করবেন নেপালে, এই পরিকল্পনা ছিল তাদের। আগামী ১৭ মার্চ ছিল তাদের বিয়েবার্ষিকী। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার ইচ্ছা ছিল সারাজীবন। সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিলো ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা। মানিকগঞ্জ শহরের লঞ্চঘাট এলাকার ডা. রেজা জামানের একমাত্র মেয়ে শশী। শশী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিমিনোলজি বিভাগে মাস্টার্স করছিলেন। শশীর স্বামী শাওনের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সাঁটুরিয়া উপজেলায় গোপালপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মোজাম্মেল হক। তিনি কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক হিসেবে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে শাওন সবার বড়। ডা. রেজা জামানের মেয়ে শশীর সঙ্গে ডা. শাওনের বিয়ে হয় বছর সাতেক আগে। তাদের কোনো সন্তান নেই। রেজওয়ানুল হক শাওন রংপুর মেডিকেল কলেজে কর্মরত আছেন।
জীবনের বিনিময়ে ১০ নেপালিকে বাঁচিয়েছেন বাংলাদেশি পাইলট প্রিথুলা
নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বিমানটির বাংলাদেশি কো-পাইলট প্রিথুলা রশিদ। নিজের জীবনের বিনিময়ে বিমানটির ১০ নেপালি যাত্রীকে বাঁচিয়েছেন তিনি। ইউএস-বাংলার প্রথম নারী পাইলট প্রিথুলা নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। গত সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ২টা ১৮ মিনিটে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার সময় ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ মডেলের উড়োজাহাজটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। এতে বিমানটিতে থাকা ৭১ আরোহীর মধ্যে ৪৯ জনই মারা যান। এর মধ্যে পাইলট আবিদ সুলতান, কো-পাইলট প্রিথুলা রশিদ ও ক্রু খাজা হোসেন রয়েছেন। অন্যদিকে বেঁচে আছেন ক্রু কে এইচ এম শাফিসহ ২২ জন। দুর্ঘটনার পর সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে ‘সিকিম ম্যাসেঞ্জার’ নামে একটি পেজে প্রিথুলার মহানুভবতার কথা তুলে ধরে বলা হয়, ‘আজ নেপালি নাগরিকদের বাঁচাতে গিয়ে বাংলাদেশি কন্যা তার নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে কাঠমান্ডুতে আজ এই বাংলাদেশি তরুণী পাইলট মারা গেছেন। তার নাম মিস প্রিথুলা রশিদ। তিনি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের (ফ্লাইট বিএস২১১) কো-পাইলট ছিলেন। যেটি আজ নেপালের কাঠামান্ডুতে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়েছে। যাই হোক, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ১০ নেপালি নাগরিককে রক্ষার চেষ্টা করে গেছেন। যাদের সবাই জীবিত আছেন।’ প্রিথুলার ফেসবুক পাতা থেকে জানা যায়, তিনি ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যুক্ত। নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর তিনি আরিরাং এভিয়েশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বিমান চালনার ওপর ডিগ্রি নেন। ফেসবুকের শেষ স্ট্যাটাসে প্রিথুলা লিখেছিলেন- খোদা হাফেজ। ইথিওপিয়া বিমানবন্দরে গত ১৮ জানুয়ারি দেয়া ওই স্ট্যাটাসের পর তিনি আর কোনো স্ট্যাটাস লেখেননি। ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবার বুলে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে বাংলাদেশে আসার সময় তিনি এ স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি আর কোনো স্ট্যাটাস দেননি। এর পর তিনি শুধু (গত ৩ ফেব্রুয়ারি) তার প্রিয় বিড়ালকে কোলে নিয়ে একটি ছবি পোস্ট করেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment