ভোটের হাওয়া : টাঙ্গাইল-৭ একাধিক প্রার্থী আওয়ামী লীগে পুনরুদ্ধারের লড়াই বিএনপির

ভোটের হাওয়া : টাঙ্গাইল-৭ একাধিক প্রার্থী আওয়ামী লীগে পুনরুদ্ধারের লড়াই বিএনপির

পরপর তিন দফা মনোনয়ন পেতে তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েননি টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা একাব্বর হোসেন। তবে এবার আর বিনা চ্যালেঞ্জে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই টানা তিনবারের এই এমপির। অন্যদিকে, ২০০১ সালে হাতছাড়া এ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চাইছে বিএনপি।

২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে নৌকার জয়পতাকা ওড়ান একাব্বর হোসেন। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনেও জয়ী হয়ে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। তবে একদিকে নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতৃত্ব পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের একাংশের নানা অভিযোগ তার অবস্থানকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এবারকার মনোনয়নযুদ্ধে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে রয়েছেন- এ আসনে ১৯৭০ সালে ও স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের প্রথম নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিয়ে আসা সাবেক এমপি, টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুকের ছেলে জেলা যুবলীগের সহসভাপতি খান আহমেদ শুভ, দলের কেন্দ্রীয় নেতা মেজর (অব.) খন্দকার এ হাফিজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিআরডিবির চেয়ারম্যান মীর শরীফ মাহমুদ। এরই মধ্যে তারা সবাই ভোটের মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

দলের মনোনয়নযুদ্ধ সম্পর্কে জানাতে গিয়ে এমপি একাব্বর হোসেন বলেন, গণতান্ত্রিক একটি দলে যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে দল নিশ্চয় একজন প্রার্থীর ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেই প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবে। দল এবং এলাকার মানুষের জন্য তার বিশেষ অবদান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের জন্য কাজ করেন বলেই ২০০১ সালে রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। এমপি হওয়ার পর মির্জাপুরে তিনি যত উন্নয়ন কাজ করেছেন, অতীতে তা কখনোই হয়নি।

উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় স্কুল, ব্রিজ, রাস্তাসহ অনেক উন্নয়ন কাজ হয়েছে তার সময়ে। তিনি আরও বলেন, দলীয় নেতাকর্মীরা তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আগামীতেও মনোনয়ন পাওয়া এবং বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

অন্যদিকে, মনোনয়ন পেতে টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক খান আহমেদ শুভও আটঘাট বেঁধেই প্রচারণা শুরু করেছেন। বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগের মধ্য দিয়ে নিজেকে ঘিরে একটি শক্তিশালী বলয়ও গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। মনোনয়নপ্রত্যাশী শুভ বলেন, দেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু যেমন তরুণদের নিয়ে কাজ করেছেন; দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাও তরুণদের নিয়ে এগোচ্ছেন। দেশের ২০ শতাংশ ভোটারই নবীন। তারা সব হিসাব-নিকাশ উল্টে দিতে পারে। তিনি বলেন, মির্জাপুরে একজনই দীর্ঘদিন ধরে এমপি থাকায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব, হতাশা ও নানা ক্ষোভ জমা হয়েছে। তাই অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীই দল থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার পক্ষে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এলাকার সাধারণ মানুষ, ছাত্র-তরুণ ও দলের বড় একটি অংশই তার পক্ষে জনসমর্থন তৈরিতে কাজ করছে। মনোনয়ন পেলে প্রৌঢ়ের বুদ্ধি ও তরুণের শক্তি কাজে লাগিয়ে আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

মনোনয়নপ্রত্যাশী মীর শরীফ মাহমুদও উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক ও সভা-সমাবেশ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, সেই ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করছি, বিপদে-আপদে সব সময় সঙ্গে রয়েছি। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব। নতুবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার সঙ্গে থেকে নৌকা প্রতীককে জয়ী করব।

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ মাহফুজুর রহমান তালুকদার কনক বলেন, দলের অনেকেই এবার পরিবর্তন চাইছেন। এ ক্ষেত্রে খান আহমেদ শুভ দলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের মধ্যে অন্যদের তুলনায় বেশি সাড়া ফেলেছেন। মনোনয়ন পেলে শুভ নৌকার শুভবার্তা বয়ে আনবেন।

এক সময় বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মির্জাপুরে এখন বিএনপির জনপ্রিয়তায় অনেকটাই ভাটা পড়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দলটি ক্ষত-বিক্ষত। একটি পক্ষ চাইছে দুবারের এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীকে প্রার্থী করে নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দিতে। অন্যপক্ষ চাইছে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে।

সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী ছাড়াও বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাঈদুর রহমান সাঈদ সোহরাব, শিল্পপতি এ কে এম আজাদ স্বাধীন ও ইঞ্জিনিয়ার মৃধা নজরুল ইসলাম।

উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এ প্রসঙ্গে  বলেন, চারবার মনোনয়ন পেয়ে দু’বার নির্বাচিত হয়েছি। দু’বার কারচুপি করে হারানো হয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা তাকেই এমপি হিসেবে দেখতে চান। প্রশাসনের প্রতিবন্ধকতা ও নির্যাতন উপেক্ষা করে মির্জাপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন জানিয়ে তিনি বলেন, দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা বিবেচনা করে আগামী নির্বাচনে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া নিশ্চয় তাকে মনোনয়ন দেবেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা মো. সাঈদুর রহমান সাঈদ সোহরাব বলেন, দলের প্রার্থী একাধিকবার পরাজিত হওয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীর মনোবলই ভেঙে গেছে। প্রার্থী পরিবর্তন হলে তারা আবার চাঙ্গা হবে এবং মির্জাপুরে বিএনপির জোয়ার সৃষ্টি হবে। তিনি জানান, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে তা পরিবর্তন করা হয় এবং বৃহত্তর স্বার্থে তিনি তা মেনে নিয়ে দলের পক্ষে কাজ করেন। তিনি আরও জানান, নিশ্চয় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও দলের হাইকমান্ড তার কাজের মূল্যায়ন করে আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে তাকেই মনোনয়ন দেবেন। আওয়ামী লীগের যে কোনো প্রার্থীকে পরাজিত করে বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে আনার আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে দলের মনোনয়ন পাওয়ার আশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির, মোহাম্মদ ইব্রাহীম শেখ ও নুরুল ইসলাম নুরু। জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন নাজমুল ইসলাম। এ ছাড়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে দলের মির্জাপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আরমান হোসেন তালুকদার তাপস, খেলাফত মজলিস থেকে মাওলানা মজিবুর রহমান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরী দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে চাইছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment