‘আগামী সংসদ নির্বাচনে একাধিক দিনে ভোট নেয়ার পরিকল্পনা’

‘আগামী সংসদ নির্বাচনে একাধিক দিনে ভোট নেয়ার পরিকল্পনা’

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একদিনে ৩০০ আসনে ভোট না নিয়ে ধাপে ধাপে ভোট নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শনিবার (১৭মার্চ) টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এক অনুষ্ঠানে নিয়ে সাংবদিকদেরকে এ কথা জানান মন্ত্রী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮ তম জন্মদিনে ভারতেশ্বরী হোমসে জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেখানে যান অর্থমন্ত্রী।

এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টায় অর্থমন্ত্রী সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে মির্জাপুর কুমুদিনী কমপ্লেক্স মাঠে পৌঁছেন। এসময় তাকে সেখানে স্বাগত জানান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা, পরিচালক (শিক্ষা) প্রতিভা মুৎসুদ্দি, শ্রী মতি সাহা প্রমুখ। মন্ত্রী কুমুদিনী লাইব্রেরীতে পরিদর্শন ভারতেশ্বরী হোমসে গেলে তাকে ছাত্রীরা বরণ করে এবং মনোজ্ঞ ডিসপ্লে প্রদর্শন করে।

পরে মন্ত্রী ভারতেশ্বরী হোমসে প্রিন্সিপাল প্রতিভা মুৎসুদ্দি হলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে অর্থমন্ত্রী ছাড়াও বক্তৃতা করেন কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা, একুশে পদক প্রাপ্ত ভাষা সৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দি, শ্রীমতি সাহা ও ভারতেশ্বরী হোমসের অধ্যক্ষ প্রতিভা হালদার প্রমুখ।
পরে বিকালে কুমুদিনী হাসপাতালে আধুনিক আইসিও উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে তিনি ঢাকার উদ্দেশে মির্জাপুর ত্যাগ করেন।

একাধিক দিনে ভোট নেয়ার কারণ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ছবিসহ ভোটার আইডি কার্ড হওয়ায় ফলে এখন আর জালিয়াতির নির্বাচন করা সম্ভব না। তবে দুই এক জায়গায় গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে সারাদেশে কয়েক ধাপে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’

১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে ভোট নেয়া হয়েছে একই দিনে। তবে ইউনিয়ন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট নেয়া হয়েছে একাধিক দিনে।

নির্বাচনের সময় বর্তমান মন্ত্রিসভা দায়িত্ব পালন করবে না বলে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাস আগে বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ ভেঙে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি সংসদে যেসব দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে শুধু সেসব দল থেকে প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাচনকালীন নতুন মন্ত্রী পরিষদ গঠন করবেন তিনি। কিন্তু বর্তমান সংসদে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিত্ব না থাকায় নির্বাচনকালীন সেই মন্ত্রী সভায় তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির জায়গা না হওয়ার কারণ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সংসদে যে সব দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে শুধুমাত্র সেই সকল দল থেকে প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করবেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী)। বর্তমান সংসদে বিএনপির কোন প্রতিনিধিত্ব না থাকায় নির্বাচনকালীন সেই মন্ত্রিসভায় তাদের কোন প্রতিনিধিত্ব থাকবে না।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে গঠন করা মন্ত্রিসভায় বিএনপিকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বিএনপি সে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যায়। আর দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা সে সময় ভোট বর্জন করে। আর এ কারণে ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম সংসদে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই।

আগামী অর্থ বছরের বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬০ হাজার চার লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা হবে বলেও জানান মুহিত। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি। জনসংখ্যা, আয়তন, সম্পদ, মানবসম্পদ বিবেচনা করে প্রতিটি জেলাকে আলাদা শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে জানিয়ে তিন বছরের মধ্যে জেলা ওয়ারী বাজেট দেয়া হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরের সম্ভব্য বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬০ থেকে ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা হবে। সামাজিক নিরাপত্তার আওতা প্রতি বছরই বাড়ছে আগামীতেও বাড়নো হবে। জনসংখ্যা, আয়তন, সম্পদ, মানবসম্পদ বিবেচনা করে প্রতিটি জেলাকে ক্লাসিফিকেশন করা হয়েছে। এই ক্লাসিফিকেশন অনুযায়ী আগামী তিন বছরের মধ্যে সারাদেশে জেলাওয়ারি বাজেট করা হবে।

এসময় বাংলাদেশকে জাতিসংঘের উন্নয়শীল দেশের তালিকায় স্বীকৃতির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, চলতি মাসের ১৫ তারিখ এ বিষয়ে আমরা একটি চিঠি পেয়েছি। ২০২৪ সাল পর্যন্ত তারা আমাদের এ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন। আর আমরা এর মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশের তালিকায় আমরা স্থান করে নিব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন সরকার সেই সঠিক পথেই আছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment