মিরপুরে ডিবি পরিদর্শক খুনে জড়িত ৬ জনকে খুঁজছে পুলিশ

মিরপুরে ডিবি পরিদর্শক খুনে জড়িত ৬ জনকে খুঁজছে পুলিশ

রাজধানীর মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগে ডিবি পরিদর্শক জালাল উদ্দিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত হাসান আলী ও মানিক মিয়াসহ ছয়জন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারে অভিযান শুরু হয়েছে। ডিবি ও থানা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থা এ অভিযান চালাচ্ছে।

তবে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জড়িত কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি। অবশ্য যে কোনো সময়েই ঘটনার মূল হোতা হাসানকে আইনের আওতায় নেওয়ার ব্যাপারে আভাস দিয়েছে সংস্থাগুলো। এ ঘটনায় মিরপুর থানায় মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে ডিবি পরিদর্শক জালাল উদ্দিনকে পুলিশের বাসা থেকে চুরি করা অস্ত্র দিয়েই গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে, নাকি অন্য কোনো অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত সংস্থা। এ জন্য জালালের মাথার ভেতর পাওয়া গুলি ও ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা গুলির খোসা ব্যালিস্টিক পরীক্ষার জন্য সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে।

নিহত জালাল উদ্দিনের মৃতদেহ মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জের ভোলপাড়া গ্রামে পৌঁছে। এ সময় সেখানে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি দেখা দেয়। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা ছাড়াও স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ জালালকে এক নজর দেখতে ছুটে আসেন। পরিবারের সদস্য, স্বজনসহ সবার উপস্থিতিতে রাত ১০টার পর গ্রামের স্কুল মাঠে জানাজা শেষে বাবা বিশারত মণ্ডলের কবরের পাশে নিহতের দাফন সম্পন্ন হয়।

এরআগে গত সোমবার মধ্যরাতে ডিবির পল্লবী জোনাল টিমের একটি দল মধ্য পীরেরবাগের ১০৫/এ/১ নম্বর বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে যায়। এ সময় পরিদর্শক জালাল উদ্দিন বাড়ির তৃতীয় তলার ছাদে সন্ত্রাসীদের অবস্থান শনাক্তে রেকি করতে যান। তখন সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। গভীর রাতে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিদর্শক জালাল গুলিবিদ্ধ হওয়ার পেছনে অভিযানিক টিমের অপর সদস্যদের কোনো গাফিলতি ছিল কি-না, কোন পরিস্থিতিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেল- এসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ডিবি-পশ্চিম বিভাগের ডিসি মোখলেসুর রহমান  বলেন, তারা এখন পরিদর্শক খুনে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ জন্য অভিযানও চালানো হচ্ছে। জড়িত অন্তত একজন সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় নেওয়া গেলে সব রহস্য উদ্ঘাটিত হবে।

ডিবি সূত্র জানায়, গত ১১ জানুয়ারি পীরেরবাগের ঝিলপাড় এলাকায় বসবাসকারী ট্রাফিক সার্জেন্ট মামুন ও সার্জেন্ট সোহেল রানার দুটি পিস্তল খোয়া যায়। ওই দিন রাতে বাসার গ্রিল কেটে তাদের নামে ইস্যু করা দুটি পিস্তল ছাড়াও আট রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, দুটি মোবাইল ফোন ও ৭৫ হাজার টাকা চুরি করা হয়। গত তিন দিন আগে মিরপুর এলাকা থেকেই চুরি হওয়া একটি মোবাইল ফোন সেটসহ মাইন উদ্দিন নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে ডিবি। তার দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে সোমবার রাতে চুরি হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে গিয়েছিল ডিবি টিম।

ডিবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা  বলেন, তারা এখন পর্যন্ত তদন্তে ধারণা করছেন, অভিযানের সময় ওই বাড়ির ছাদে হাসান আলী ও মানিক মিয়া নামে অন্তত দু’জন সন্ত্রাসী অবস্থান করছিল। তবে সার্জেন্টের অস্ত্র চুরি থেকে পুরো ঘটনায় আরও অন্তত চারজন জড়িত। তাদের মধ্যে নামধারী দুই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

ডিবি কর্মকর্তা বলেন, এরই মধ্যে সন্ত্রাসী হাসান আলীর সব তথ্য ডিবির হাতে এসেছে। হাসান তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। সে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারও হয়েছে। এরই মধ্যে তার মা-বোনসহ কয়েক স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। পুলিশকে গুলি করে ওই রাতে সে একই এলাকায় তার মায়ের বাসায় থাকে। স্বজনদের কাছেও সে ওই রাতের ঘটনা জানিয়েছিল। এর পরই আত্মগোপনে চলে যায় সে।

ডিবি পুলিশের অস্ত্র বিশেষজ্ঞ অপর এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ব্যবহৃত ক্ষুদ্রাস্ত্রে সাধারণত সেভেন পয়েন্ট সিপ-টু ও নাইন এমএম গুলি ব্যবহার করে থাকে। তবে সন্ত্রাসীরা সেভেন পয়েন্ট সিপ-ফাইভ, পয়েন্ট থ্রি-টু ও পয়েন্ট টু-টু বোরের গুলি ব্যবহার করে। পুলিশের ভাষায় যাকে নন প্রফেশনাল বোর (এনপিবি) বলা হয়। এ জন্য ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া গুলির খোসা ও নিহত পরিদর্শক জালাল উদ্দিনের মাথা থেকে বের করা গুলিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়াহিদুজ্জামান সমকালকে বলেন, ডিবি পরিদর্শক নিহত হওয়ার ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment