সৌদিতে নরপশুদের নির্যাতনের শিকার চম্পার আত্মহত্যার হুমকি

সৌদিতে নরপশুদের নির্যাতনের শিকার চম্পার আত্মহত্যার হুমকি

ভালো বেতনের আশায় বাংলাদেশের রেজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ফাঁদে পড়ে সৌদি আরব গিয়ে জীবনঝুঁকিতে পড়েছেন গৃহকর্মী চম্পা আক্তার। গৃহকর্তা ও তার তিন ছেলের শারীরিক-মানুষিক নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে প্রায় মরতে বসেছেন এ নারী। নির্যাতনের মাত্রা সইতে না পেরে দেশে থাকা স্বজনদের কাছে ফোন করে বারবার আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছেন। একদিকে নির্যাতন, অন্যদিকে পাচ্ছেন না বেতন-ভাতাও। পশুরূপী ওই গৃহকর্তার কাছে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর আকুতি করলে এজেন্টদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন বলে জানিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে চম্পাকে। নিয়মিত খাবার না দিয়ে কাজ করানো আর কাজের সময়ে মারধরসহ নানান কায়দায় নির্যাতন করছে কর্তার তিন ছেলে। স্থানীয় দালাল থেকে শুরু করে সৌদি আরবের গৃহকর্তাদের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত অসংখ্য হাত বদলের শিকার চম্পা আক্তারের আর্তনাদ শুনছে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং দেশিয় নারী বিক্রির দালাল রেজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরবে পাঠানোর পর থেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে রেজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। সিলেট হবিগঞ্জের বানিয়াচং এলাকার সিরাজ নামের স্থানীয় এক দালাল বিনা খরচে সরকারিভাবে গৃহকর্মীর ভিসায় সৌদি আরবে নারীদের পাঠানো হচ্ছে বলে চম্পার পরিবারকে রাজি করায়। ভালো বেতনের আশা দিয়ে চম্পাকে সর্বপ্রথম রাজধানীর মতিঝিলে রেজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের অফিসে নিয়ে আসে। রেজা ট্রেডের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে দালাল সিরাজ। এরপর রেজা ট্রেডের দায়িত্বে কয়েকদিন হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সৌদি আরবের এজেন্টদের কাছে পাঠায় চম্পাকে। সেখান থেকে তাকে সৌদির এজেন্টরা একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজে নিয়োগ করিয়ে দেয়। ওই বাসায় নিয়োগের পর থেকেই চম্পার ওপর শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন।
সৌদি আরবে গিয়ে নিজের জীবন ও সম্ভ্রম রক্ষার যুদ্ধ করে কোনো কোনো নারী জীবন নিয়ে দেশে ফেরত আসতে পারলেও আসতে পারছেন না চম্পা আক্তার। ট্রাভেল এজেন্সি রেজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে গত বছরের নভেম্বর মাসে গৃহকর্মীর ভিসায় সৌদি আরবে পাঠায় চম্পা আক্তারকে। যাওয়ার এক মাস পর সে দেশের দালালরা তাকে আলকান-২০১০১২ নম্বর বাসার কর্তার কাছে বিক্রি করে দেয়। বিক্রি করে দেয়ার পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার। বর্তমানে তিনি সে বাসাতেই রয়েছেন বলে ধারণা করছে তার পরিবার। সে বাসায় প্রতিনিয়তই তিনটি ছেলে তাকে শারীরিক এবং মানষিক নির্যাতন করছে এবং নিয়মিত খেতে দিচ্ছে না। যার দরুণ সেখানে অসুস্থ অবস্থায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। এছাড়াও কাজ শেষে তাকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়, যাতে করে বাইরে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে। আলকান-২০১০১২ নম্বর বাসায় কর্তাকে দেশে আসার আকুতি করলে তারা বলছেন, ‘তোর এজেন্সি তোকে আমাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে এবং তার বিনিময়ে মোটা অংকের অর্থ নিয়েছে। তাই তোকে দেশে পাঠানো যাবে না।” বর্তমানে ওই নারী সেখানে নানাবিধ জঠিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় এবং আত্মহত্যার হুমকি দেওয়ায় যে কোনো সময় মারা যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে তার পরিবার। চম্পা আক্তারকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে কথা বলতে রেজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা হুমকি-ধমকি দিয়ে কথা বলছেন এবং বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। চম্পার পাসপোর্ট নম্বর বিই-০১৮১৬১৭। মোবাইল নম্বর ০০৯৬৬৫০২৮৫৩৬৯৭।
চম্পা আক্তারের বোন হেলেনা আক্তার আমার সংবাদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, রেজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্থানীয় দালাল সিরাজ তাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং মোটা অংকের টাকা আয়ের লোভ দেখিয়ে সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য রাজি করান। সিরাজের মাধ্যমেই রেজা ট্রেডের সঙ্গে কথা বলে তার বোনকে সৌদি আরবে পাঠান। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর থেকেই তার বোন নানান সমস্যায় রয়েছে। শারীরিক মানসিক সকল ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, রেজা ট্রেডের অফিসে গেলে তারা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন না। রেজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্থানীয় দালাল সিরাজ জানান, সৌদি আরবের একটি এজেন্টের কাছে চম্পাকে পাঠানো হয়েছে। চম্পার পরিবারের কাছ থেকে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য কোনো রকমের টাকা পয়সা নেওয়া হয়নি। তার মেডিকেল ফি থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ রেজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল বহন করেছে। রেজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কেন তার পুরো খরচ বহন করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন , এটা রেজা ট্রেডের মালিক বলতে পারবে। আমিও চম্পার পক্ষের লোক। মেয়েটি গরিব বলে আমি তাকে পাঠানোর জন্য বলেছি এবং রেজা ট্রেডের মাধ্যমে পাঠিয়েছি। তিনি আরো জানান, সৌদি আরবের আবু আহম্মেদ নামের একজনের কাছে তাদের পাঠানো হয়। সেখানে তিনিই বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। তিনি বর্তমানে উগান্ডায় রয়েছেন যার কারণে চম্পাকে ফেরত আনা যাচ্ছে না। তিনি সৌদিতে ফেরত আসার পর এ বিষয়ে জানা যাবে। রেজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অফিসের কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। তারা বলছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক সব জানেন। এ বিষয়ে কথা বলতে রেজা ট্রেডের মালিকের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। এদিকে, রেজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের হবিগঞ্জের স্থানীয় দালালের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি চম্পা আক্তারের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। দালাল সিরাজ চম্পার পরিবারকে বলছেন, সাংবাদিক দিয়ে কাজ হবে না। রেজা ট্রেডের যে মালিক তাকে এমপি-মন্ত্রীও কিছু করতে পারবে না।
ভুক্তভোগী চম্পা আক্তার জানান, তিনি তার গৃহকর্তার কাছে দেশে ফেরত আসার আকুতি জানালে কর্তা জানায়, তোকে তোর এজেন্সি আমাদের কাছে বিক্রি করেছে। চাইলেই তুই দেশে যেতে পারবি না।
দেশের বিভিন্ন ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে গিয়ে বাংলাদেশি নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে- এ সমস্যা সমাধানে আপনার মন্ত্রণালয়ের কি উদ্যোগ রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার আমার সংবাদকে বলেন, সৌদি আরবে কেউ এমন সমস্যার সম্মুখীন হলে আমরা তাদের দেশে ফেরত নিয়ে আসবো। সেজন্য অমাাদের কাছে ভুক্তভোগীদের আবেদন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আবেদন করতে বলেন। আবেদন করলে আমরা নিয়ে আসবো। আবেদন করা হয়েছে জানালে তিনি বলেন, তাহলে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে দেশে ফেরত আনতে সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment