খুলনায় খালেককে রাজি করানোর চেষ্টায় আ.লীগ

খুলনায় খালেককে রাজি করানোর চেষ্টায় আ.লীগ

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপিকে মোকাবেলায় তালুকদার আবদুল খালেককে রাজি করাতে চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।

গত দুই নির্বাচনের একটিতে জেতা এবং একটিতে হারা খালেদ এখন বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য। আইন অনুযায়ী সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে হলে সংসদ সদস্যপদ ছাড়তে হবে। এর মধ্যে খালেদ জানিয়েছেন, তিনি সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে চান না।

তবে বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনিকে বিএনপির প্রার্থী ধরে তাকে মোকাবেলার যে ছক কষা হচ্ছে, তাতে খালেককেই সবচেয়ে ভালো বিকল্প ভাবছে আওয়ামী লীগ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে কেন্দ্রে। আর কেন্দ্রীয় নেতাদেরও একই মত।

খালেক যদি মেয়র পদে প্রার্থী হন, তাহলে তাকে ছাড়তে হবে বাগেরহাট-৩ (রামপাল, মংলা) আসন। এই আসনটি আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। মংলা বন্দর সচল হওয়া, রামপালে বড় আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও এলাকায় ব্যাপক শিল্পায়ন হচ্ছে।

এই অবস্থায় খালেককে এই আসনটি ছাড়তে হলে তার স্ত্রী হাবিবুন নাহারকে আবারও এই আসনে মনোনয়ন দেয়ার চিন্তা আছে ক্ষমতাসীন দলে। দলের সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্য ঢাকাটাইমসকে এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, এমনটি হলে খালেক রাজি হতে পারেন।

২০০৮ সালে খুলনার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর যেহেতু সংসদ নির্বাচন করায় আইনি বাধা ছিল খালেকের। আর তখন তার বদলে হাবিবুন নাহারকে রামপাল-মংলা আসনে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। তবে ২০১৩ সালে খুলনায় হেরে যাওয়ার পর ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে খালেককেই বাগেরহাট-৩ আসনে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়।

গণিতে স্নাতকোত্তর হাবিবুন নাহার নবম জাতীয় সংসদের সদস্য হিসাবে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ করেছেন বলেই মনে করে ক্ষমতাসীন দল। আর স্ত্রীকে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হলে খালেক রাজি হবেন বলেই ভাবছেন নেতারা।

জানতে চাইলে তালুকদার আবদুল খালেক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি তো সংসদ সদস্য আছি। সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইচ্ছা নাই’

-‘কিন্তু আপনাকেই তো দল চাইছে’

-‘আমি একটা এলাকার সংসদ সদস্য। সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদ সদস্য অন্য কোথাও যাওয়া আগে সংসদ নেত্রীর নির্দেশনা লাগবে। তাঁর নির্দেশনা ছাড়া আমার পক্ষে কোনো কথাই বলা সম্ভব নয়।’

‘শেখ হাসিনা যদি চান?’-

-‘উনি (শেখ হাসিনা) দলের সভাপতি, তিনি যদি তাঁর দলের প্রয়োজনে কোন জায়গায় আমারে বলে সেটা আলাদা কথা। তাঁর নির্দেশ মানতে আমি বাধ্য। এছাড়া আমার কোন রকমে এ জায়গায় নির্বাচনের ইচ্ছা নাই।’

-‘খুলনার নেতারা তো আপনার নামে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস করেছে।’

-‘নেতাকর্মীরা সর্বসম্মতভাবে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে এখানে সংসদ নেত্রীর সিদ্ধান্ত ছাড়া আমার কিছুই করার ক্ষমতা নেই। সর্বোপরি আমার দলের নেত্রী যদি আমাকে কোন নির্দেশ দেয় তা আমি পালন করব।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের প্রার্থী বাছাই করবে আমাদের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড, এখানে আমাদের মতামত দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড তৃণমূল থেকে পাঠানো নাম নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেবে।’

‘দল যাকেই মনোনয়ন দিবে তাঁকে বিজয়ী করতে আমরা আমাদের সাংঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করব।’

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ মে নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ১২ এপ্রিল। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ এপ্রিল।

খুলনার সঙ্গে একই দিন ভোট হবে গাজীপুরেও। আর দুই নগরে প্রার্থী বাছাইয়ে ৮ এপ্রিল স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা ডেকেছে আওয়ামী লীগ।

খুলনায় ২০০৮ সালের মেয়র নির্বাচনে তালুকদার আবদুল খালেক জিতলেও ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির কাছে ৬০ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।

খালেকের বিকল্প হিসেবে যেসব নাম আসল কেন্দ্রে

খুলনা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে যে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে তাতে খালেক ছাড়াও আরও নয় জনের নাম আছে। এরা হলেন: সদর আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, কাজী এনায়েত হোসেন, শেখ সৈয়দ আলী, এম ডি এ বাবুল রানা, সাইফুল ইসলাম, আনিসুর রহমান পপলু, সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস এবং শেখ সালাউদ্দীন জুয়েল ও শেখ সোহেল।

দলটির নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মতো অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। তাঁর নেতৃত্বে মানুষের জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে। তাই তিনি যাকেই মনোনয়ন দিবেন সেই খুলনার সিটি করপোরেশনের আগামীর কাণ্ডারি হবেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘আমরা নাম সুপারিশ করেছি, এখন দল যাকে মনোনয়ন দিবে তাকে বিজয়ী করতে আমরা কাজ করব।’

অবশ্য আওয়ামী লীগ যে ১০টি নাম পাঠিয়েছে, এদের মধ্য থেকেই যে প্রার্থী বাছাই করা হবে এমনটি নয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নের জন্য যাদের নাম সুপারিশ করা হয় তাদের মধ্যে সেলিনা হায়াৎ আইভীর নাম ছিল না। কিন্তু পরে তাকেই মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment