বেপরোয়া কদমতলীর সেই রিপন

চাঁদাবাজি

চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, নকল সামগ্রীর ব্যবসা, ভুয়া ও জাল দলিলের মাধ্যমে প্রতারণা করাই একমাত্র কাজ রিপনের। ‘প্রথমে প্যারাসিটামল দিলাম, না হলে আমাকে এন্টি ভাইরাস দিতে হবে’। এই শব্দ ব্যবহার করে একজন সিনিয়র সাংবাদিকের মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছিলেন রাজধানীর কদমতলী থানা এলাকার সেরা উদ্দিন রিপন নামে চিহ্নিত ওই সন্ত্রাসী। বিষয়টি জানিয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত ১৩ মার্চ যাত্রাবাড়ী থানায় জিডি (নং ১০০৬) দায়ের করেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক নুরুল ইসলাম। তদন্তে নেমে পুলিশ এ ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। মোবাইলের পাশাপাশি ফেসবুকেও রিপন ওই সাংবাদিককে নিয়ে মানহানিকর পোস্ট দিয়েছে। এ নিয়েও ৩২ ধারায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।জিডির তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার এসআই প্রদীড কুন্ড বলেন, বিষয়টির তদন্ত সমাপ্ত হয়েছে। তদন্তে হুমকি দিয়ে বার্তা পাঠানোর অভিযোগের সতত্যা মিলেছে। অভিযুক্ত রিপন নিজেও স্বীকার করেছেন। হুমকির প্রমাণসহ ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আদালতে প্রসিকিউশন পাঠানো হয়েছে। মামলা না হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এদিকে, জিডির তদন্তের খবর পাওয়ার পর আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে রিপন। ওই সাংবাদিককে সে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। কদমতলী থানার দনিয়া নূরপুর এলাকার স্থানীয়রা জানান, রিপনের বাসা ৮২২ নং নূরপুরে। সেখানে রয়েছে নকল স্যানেটারি কারখানা। যার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইন সবই অবৈধ। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। যেখানে আরএফএল ও ম্যাটাডরের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে বাজারজাত করা হয়। আরো রয়েছে, নকল টিস্যু পেপার বক্স, সাবান কেসসহ বিভিন্ন সামগ্রী। কারখানার বিকট শব্দে আশপাশের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ। কেউ মুখ খুললেই তাকে প্যাকেট করে লাশ পাঠানোর হুমকি দেয় রিপন।এক সময়ের রিকশাচালক থেকে ছিচকে চোর রিপন এখন সন্ত্রাসী। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, কথায় কথায় মৃত্যুর হুমকি দেওয়াসহ রিপন তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলা করেছে। জোর করে তাদের পরিবারের জায়গা দখল করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে। একসময় শিবিরের সক্রিয় সদস্য রিপন ভোল পাল্টে রাতারাতি আওয়ামী লীগ বনে গেছে। আলুবাজার সেনেটারি ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনে বিএনপির প্যানেলে নির্বাচন করে সে। কয়েক বছর আগে এক আওয়ামী লীগ নেতার ছবির সাথে নিজের ছবিসম্বলিত ‘ঈদের শুভেচ্ছা’র বিশালাকার একবিলবোর্ড ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টানিয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগের সদস্য বলে জাহির করার চেষ্টা করে। পরে ওই নেতা ক্ষুব্ধ হলে রিপন সেই বিলবোর্ড নামাতে বাধ্য হয়। সরকারি দলের পরিচয়ে ইতোমধ্যে বহু অপকর্ম করেও পার পেয়ে গেছে। তবে তার এসব অপকর্মে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। রিপনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ শফিক আহমেদ রিপনের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। ওই অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে জোর করে মানুষের জায়গা জমি দখল করা, জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া দলিল তৈরি করে ফ্ল্যাট, দোকান, জমি দাবি করাই রিপনের পেশা। গত বছরের মাঝামাঝি রিপন বর্ণমালা স্কুল রোডে ৪৩০ নং নির্মাণাধীন শরীফ টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট দাবি করে।


এজন্য শ্রমিকদের মারধর করে বন্ধ করে দেয় ওই ভবনের নির্মাণকাজ। একপর্যায়ে টাওয়ারটির একটি দোকানের জাল দলিল তৈরি করে সেটা নিজের দাবি করে তালা মেরে দেয়। ওয়ারী জোনের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে সেই জালিয়াতি ধরা পড়ে। ওই সময় টাওয়ার কর্তৃপক্ষকে পুলিশের শরণাপন্ন হতে পরামর্শ দেওয়ায় রিপনের রোষানলের শিকার হন সেখানকার স্থানীয় বসিন্দা একটি জাতীয় দৈনিকের একজন সিনিয়র সাংবাদিক। ওই সাংবাদিকের কাছে টাকা পাওনা দাবি করে তার মোবাইলে একটি খুদে বার্তা পাঠায় রিপন। সেই জিডির তদন্তে রিপনের হুমকির প্রমাণ মিলেছে। শুধু তাই নয়, মোবাইলের পাশাপাশি ফেসবুকেও রিপন ওই সাংবাদিককে নিয়ে মানহানিকর পোস্ট দিয়েছে। এ নিয়েও ৩২ ধারায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। রিপনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে কদমতলী থানায় জিডি নং ২৪০, তাং ০৪/০৭/ ১৭, জিডি নং ১৮৫২, তাং ২৯/১২/১৬, জিডি নং ১২৭৬, তাং ২২/০৭/১৬, জিডি নং ১৩৮৭, তাং ২৪/০৭/১৭। ডিসি ওয়ারী বরাবর আবেদন স্মারক নং ২৩০৫/ ডিসি ওয়ারী, তাং ১৮/০৬/১৭, যাত্রাবাড়ী থানায় জিডি নং ১০০৬, তাং ১৩/৩/১৮। উল্লেখযোগ্য মামলা নং ৭৫, তাং ২৮/০৫/১৭ ধারা ৩৮৫, সিআর মামলা নং ৮৬, তাং ২৮/০৫/১৭, ২০ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের মামলা, সিএম মামলা নং ২৫/ সিআর মো: নং ৭০/২০১৮, তাং ১৪/০১/১৮। এতগুলো অভিযোগের আসামি হয়েও সে এলাকায় চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে। এতে করে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। তারা এ সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment