নওগাঁয় ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু ক্লিনিক ভাংচুর॥ মামলা দায়ের

নওগাঁয় ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু ক্লিনিক ভাংচুর॥ মামলা দায়ের

বিকাশ চন্দ্র প্রাং, স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁঃ
নওগাঁয় অস্ত্রোপচারের সময় আল এখলাস (৮) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অজ্ঞানবিদ ছাড়াই ওই শিশুর গলায় অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। শনিবার রাতে নওগাঁ সদর হাসপাতাল সড়কের শাহ্ নার্সিং হোম এ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে এই অস্ত্রোপচার করা হয়। এঘটনায় রবিবার ওই শিশুর পিতা বাদী হয়ে চিকিৎসক আসাফুদ্দৌলা ও ক্লিনিকের পরিচালক শাহ্ নুরুল ইসলামকে আসামি করে নওগাঁ সদর মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। মৃত্যুর পর রোগীর স্বজনরা ক্লিনিকটিতে ভাংচুর চালায়। ঘটনার পরপর চিকিৎসক, সেবিকা ও কর্মকর্তারা পালিয়ে আত্মগোপন করে। নিহত শিশু আল এখলাস নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের দীঘা উত্তরপাড়া গ্রামের শুকবর আলী ও কামরুন নাহারের সন্তান।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে গলায় টনসিল সমস্যা নিয়ে শিশু এখলাসকে শাহ্ নার্সিং হোম এ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের চিকিৎসক আসাফুদ্দৌলার কাছে নিয়ে আসেন তার বাবা শুকবর আলী। চিকিৎসক তাকে দেখে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এখলাসকে ওই ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি করা হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেয়া হয়। চিকিৎসক আসাফুদ্দৌলা অস্ত্রোপচার করেন। রাত ১২টার দিকে এখলাসকে বের করে এ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। এ বিষয়ে ক্লিনিকের কর্মকর্তারা বলেন, রোগীর জ্ঞান ফিরছে না। তাকে দ্রুত রাজশাহীতে নিতে হবে।
নিহত এখলাসের মা কামরুন্নাহার বলেন, ‘অস্ত্রোপচার কক্ষে কোনো অজ্ঞানবিদ ছিলেন না। এ অবস্থায় অজ্ঞান করতে গিয়ে আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। ক্লিনিকের লোকজনের কানাঘুষা করতে দেখে আমরা বুঝতে পারি, এখলাসের মৃত্যু হয়েছে। এরপরেও ক্লিনিকের লোকজন জোর করে আমার সন্তানকে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়। এ্যাম্বুলেন্স কিছু দূর যাওয়ার পর চালক বলেন, আপনাদের রোগী মারা গেছে, রাজশাহী গিয়ে আর কি করবেন? আমরা আবার নওগাঁয় ফিরে আসি। এরপর আমরা আরও স্বজনদের খবর দিলে তারা সবাই ক্লিনিকে জড়ো হয়।’
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, জনরোষের মুখে ক্লিনিক মালিক ও তাঁর লোকজন পালিয়ে যান। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। নিহত শিশুর পিতা শুকবর আলী অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় আপোস করার জন্য তাঁকে চাপ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ক্লিনিকের মালিক শাহ নুরুল ইসলাম এবং চিকিৎসক আসাফুদ্দৌলার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। চিকিৎসক আসাফুদ্দৌলা বর্তমানে রংপুর সদর হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। রবিবার ওই ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ। কথা বলার জন্য প্রহরী ছাড়া দায়িত্বশীল কাউকেই পাওয়া যায়নি।
নওগাঁর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সমিত কুমার কু-ু বলেন, অস্ত্রোপচার করার পর রোগীর জ্ঞান না ফেরায় ওই চিকিৎসক দ্রুত চলে গেছেন। চিকিৎসা অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যু হয় বলে তার বাবা থানায় অভিযোগ করেছেন। ঘটনার পর থেকেই আসামিরা পলাতক রয়েছেন। নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।#

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment