কোটা সংরক্ষণে সংবিধানের বাধ্যবাধকতা নেই

কোটা সংরক্ষণে সংবিধানের বাধ্যবাধকতা নেই

চাকরিতে কোটা সংরক্ষণে রাষ্ট্রের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বলে জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, রাষ্ট্র কোনো কোটা দিলে সংবিধানের সমতার নীতি বাধা হবে না বলা হয়েছে। তবে কোনো গোষ্ঠীর জন্য কোটা দিতে হবে এটা বলা হয়নি।

সরকারি চাকরিতে কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে তুমুল আন্দোলনের মুখে গত ১২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যে শান্ত হয় পরিস্থিতি। সেদিন সন্ধ্যায় সংসদে তিনি বলেন, ‘কোনো কোটা থাকার দরকার নেই’।

এর আগে দুই দিন ধরে রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক বন্ধ করে দিয়ে তীব্র জনভোগান্তি তৈরি করা ছাত্ররা এরপর ফিরে যায়।

সরকারের কাছে তথ্য আছে, কোটা নিয়ে আন্দোলনের সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছিল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী। আর প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরও বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির চেষ্টা চলছে বলে তথ্য আছে সরকারের কাছে।

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, কোটা বাতিল নিয়ে রিট হলে তা উচ্চ আদালতে তা বাতিল হয়ে যাবে। সামাজিক মাধ্যমেও এর প্রচার রয়েছে।

সংবিধানের ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদে কোটার বিষয়টি উল্লেখ আছে। তবে সেটা বাধ্যতামূলক নয়।

সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এমন কোনো আইন করা যাবে না যেটা বৈষম্যমূলক, নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে। কিন্তু ব্যতিক্রমের মধ্যে বলা হয়েছে, যারা অনগ্রসর আছে তাদের জন্য বিশেষ বিধান করলে এই অনুচ্ছেদে যেটা বাধা নিষেধ আছে এটা রাষ্ট্রকে বিরত করবে না।

‘সংবিধানে কোটা সম্পর্কে কিছু বলা নাই। যদি অনগ্রসর জাতীর জন্য কোটা বরাদ্দ রাখে সেটা হতে পারে। যারা প্রতিবন্ধী তাদের জন্য রাষ্ট্র একটা ব্যবস্থা রাখতে পারে। সংবিধানে এই কথাটি আছে।’

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে উচ্চ আদালতেও রিট করা হয়েছিল। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত।

রিটকারী আইনজীবী এখলাছ উদ্দীন ভূইয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা কোটা সংস্কার চেয়ে রিট করেছিলাম। রিট খারিজ করে দিয়েছে। খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছি। পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে বিষয়টি নিয়ে শুনানি হবে।’

প্রধানমন্ত্রী কোটা থাকবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে এরপরও কেন আদালতে লড়তে যাচ্ছেন- জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মৌখিকভাবে কোটা থাকবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। আর আমি সর্বোচ্চ আদালতে জনস্বার্থে কোটার বিষয়ে আইন দেখাতে চাই। সর্বোচ্চ আদালতই এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত দিতে পারে।’

কোটা নিয়ে আইননে কিছু আছে কি না জানতে চাইলে এখলাস বলেন, ‘আইনে কোটা নিয়ে কিছু নাই। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কোটা বরাদ্দ দিয়েছিলেন।’

‘তবে সর্বোচ্চ আদালতের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার আছে। তারা একটা সিদ্ধান্ত দিতে পারে। এ বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তটা চাই।’

সংবিধানে যা আছে

পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী বা অন্য কারও জন্য বিশেষ সুবিধার বিষয়টি সংবিধানের ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে।

ধর্ম, প্রভৃতি কারণে বৈষম্য সংক্রান্ত সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে:

১. কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।

২. রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করিবেন।

৩. কেবল ধর্ম গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণে কোনো বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কিংবা কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে  ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বা বা শর্তের  অধীন করা যাইবে না।

তবে এই অনুচ্ছেদের চতুর্থ উপ অনুচ্ছেদে কোটার বিষয়ে কথা হয়েছে। এতে বলা হয়: নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত করিবে না।

আবার সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ভাগে ‘সরকারি নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা’ সংক্রান্ত ২৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-

১. প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।

২. কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।

৩. এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না।

ক. নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হইতে।

খ. কোন ধর্মীয় বা উপ সম্প্রদায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মাবলম্বী বা উপ- সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান সংবলিত যে কোন আইন কার্যকর করা হইতে।

গ. যে শ্রেণির কর্মে বিশষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেইরূপ যে কোন শ্রেণির নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হইতে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment