ভারত সফর নিয়ে ফখরুলকে কাদেরের জবাব

ভারত সফর নিয়ে ফখরুলকে কাদেরের জবাব

ওবায়দুল কাদেরকে ভারত তাদের হয়ে কথা বলতে বলেছে কি না, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক। জানান, নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবেই তিনি বলেছেন, এমন কিছু হবে না। এ নিয়ে তিনি নিজে থেকে কিছু বলেননি।

শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান ওবায়দুল কাদের। এ সময় সাংবাদিকরা তার কাছে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য নিয়ে জানতে চান।গত ২২ থেকে ২৪ এপ্রিল ভারত সফর করে কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সফরকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গণ এবং গণমাধ্যমে নানা আলোচনা আছে।

সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও রাজনৈতিক অঙ্গণে প্রচার আছে যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের পছন্দের গুরুত্ব আছে। আর বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলনের মধ্যে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে যখন পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের পক্ষে ছিল, সেখানে রাশিয়া ও ভারত সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার পক্ষে ছিল।

আগামী জাতীয় নির্বাচনেও বিএনপি-জামায়াত অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়নি এখনও। এই পরিস্থিতিতে এই সফরে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল।তবে কাদের জানান, এই সফরে মোদির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে একটাও কথা হয়নি। তবে সফরের দ্বিতীয় দিন তাদের সম্মানে আয়োজিত নৈশপ্রহরে অনেকেই আশা করেছেন আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরবে।সফর থেকে ফিরে কাদের ২৪ এপ্রিল বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের কাদের বলেন, ‘বিদেশি শক্তি আমাদের বন্ধু হতে পারে। কিন্তু নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবে, আমরা তা আশা করি না। আর ভারত অতীতেও আমাদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেনি, এবারও করবে না। তাদের অনেক নেতার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।’

এই সফরের বিষয়ে বৃহস্পতিবার করা সংবাদ সম্মেলনে কাদের আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। বহুদল তাতে অংশগ্রহণ করবে। ভারত কি ক্ষমতায় বসাবে? তারা কি কখনও ক্ষমতায় বসিয়েছে? ৭৫ এর পরবর্তী সময়েও তারা আমাদের কোন বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। ২০০১ সালে আমরা হেরে গেছি। ভারত কি আমাদের জেতাতে চেয়েছে? তারা তো কোন হস্তক্ষেপ করেনি।’আর ফখরুল বলেন, ‘ভারত থেকে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে।…‘কেউ কি বলেছে ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনে ইন্টারফেয়ার করবে? ওনাকে (ওবায়দুল কাদের) কে কি ভারত দায়িত্ব দিয়েছে এই কথাটি বলার জন্য?’

‘এটা আমরা এখন পর্যন্ত বুঝতে পারছি না, দায়িত্ব তিনি (কাদের) কার কাছে থেকে পেলেন?’।মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শুক্রবার কাদের বলেন, ‘আমি নিজে থেকেই বলি নাই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছি।’আওয়ামী লীগ নেতা আবার জানান, তাদের এই ভারত সফর নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা ইলেকশনের এজেন্ডা নিয়ে ভারত যাইনি। কিছু কিছু দল বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দেয়। ভারত কখনও আমাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলে নাই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেশের স্বার্থ নিয়ে কথা বলেছি।’

১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল অবধি বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভারত সফরে গিয়ে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে ‘ভুলে যাওয়ার’ কথা উল্লেখ করেন কাদের। বলেন, “বিএনপি যখন ভারত গিয়েছিল, দেশে আসার পর তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘গঙ্গার বিষয়টা ভুলেই গিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগ দেশের স্বার্থের কথা কখনো ভুলে নাই।”

তারেক রহমানের যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে তার পাসপোর্ট জমা দেয়া নিয়েও কথা বলেন কাদের। বলেন, ‘পাসপোর্ট নিয়ে বিএনপির কূটকৌশল যখন ধরা পড়ে গেছে তখন দলটির নেতারা শাক দিয়ে মাছ ডাকার চেষ্টা করছে।’‘বিএনপি তারেক রহমানপর পাসপোর্ট ইস্যুতে একেক দিন একেক কথা বলছে।’২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তার পাসপোর্টর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এরপর নবায়নের আবেদন জমা পড়েনি। আর ২০১৪ সালের ২ জুন তিনি পাসপোর্ট যুক্তরাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরে জমা দেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গত ২১ এপ্রিল জানান, তারেক রহমান বাংলাদেশের পাসপোর্ট বর্জন করেছেন। আর ২৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে তা অস্বীকার করেন বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী। যদিও পরদিন সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল স্বীকার করে নেন এই তথ্য। জানান রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতেই পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন তাদের নেতা।

তারেক রহমান যে চার বছর ধরে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছে, সেটি এতদিন স্বীকার করেনি বিএনপি। আর এর মধ্যে গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করেছে বিএনপি।অন্য দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা ব্যক্তির বাংলাদেশের কোনো দলের নেতৃত্বে থাকার ঘটনা এর আগে ঘটেনি। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশ, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য রিয়াজুল কবির কাওছার এ সময় কাদেরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment