সৌদিতে ‘বাধ্যতামূলক’ কিছু থাকছে না

সৌদিতে ‘বাধ্যতামূলক’ কিছু থাকছে না

দশকের পর দশ রক্ষণশীল সামাজিক পরিকাঠামো থেকে বেরিয়ে আসতে ইতোমধ্যে বেশ কিছু সংস্কার করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। গত বছরের অক্টোবরে সৌদি আরবকে রক্ষণশীল দেশ থেকে সহনশীল  দেশে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। এরই মধ্যে দেশটির বেশকিছু কঠোর আইন শিথিল করা হয়েছে। এবার আরও কিছু কঠোর নীতির সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। ফলে দেশটিতে বাধ্যতামূলক আর কিছু থাকছে না। আধুনিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এমন পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

ঘোষণা অনুযায়ী দেশটিতে এখন থেকে নারী-পুরুষ একসঙ্গে কোনো জায়গায় থাকতে পারবেন। পার্টিতে অবস্থান করতে পারবেন।

এতদিন পর্যন্ত সৌদির নিয়মানুযায়ী নারী পুরুষের অবাধ চলাফেরা বৈধ ছিলো না। এছাড়া নামাজের সময় দোকানপাট, ক্যাফে, রেস্তরাঁ এমনকি ওষুধের দোকানও বন্ধ রাখা বাধ্যাতমূলক ছিল দেশটিতে।

নতুন ঘোষণায় এ কঠোরতাও শিথিল করা হয়েছে। এখন কেউ নামাজের সময়ে দোকান খোলা রাখলে, তা আর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে না।

বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের কাছে ২৩৬ পাতার একটি বিবৃতি পাঠায় সৌদি সরকার। তাতে বলা হয়, সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে বেশ কিছু কট্টর নিয়মকানুন লঘু করার কথা ভাবছে সৌদি সরকার। দ্রুত এই বদলের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।

গত মার্চে মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএসের ‘৬০ মিনিটস’ প্রোগ্রামে সৌদির ক্রাউন প্রিন্স কর্মক্ষেত্রে বা প্রয়োজনে নারী পুরুষের মেলামেশা অবৈধ নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন। বস্তুত তারই প্রতিফলন ঘটেছে এ ঘোষণায়।

এ ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ৩৫ বছর পর দেশটিতে চালু করা হয়েছে সিনেমা হল। বিনোদন খাত দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমেরিকার প্রযোজনা ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে।

এছাড়া স্টেডিয়ামে নারীদের গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার অনুমতি মিলেছে। নারীদের গাড়ি চালানোয় বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এক বছর আগে দেশটির নারীরা যা কল্পনাও করতে পারতেন না সেটি এখন তারা করতে পারছেন। এরই মধ্যে নারীদের গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণের জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি দেশটিতে প্রথমবারের মত আয়োজন করা হয় ফ্যাশন শোয়ের। যদিও সেসব ফ্যাশন শোয়ে পুরুষের প্রবেশাধিকার ছিলো না।

এছাড়া পশ্চিমা বিশ্বের আদলে সমুদ্র সৈকতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলারও ঘোষণা দিয়েছে সৌদি। যেখানে নারীদের বিকিনি পরে চলাফেরাতেও আপত্তি থাকছে না আর।

অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে ভিশন-২০৩০ নামের দীর্ঘেময়াদি পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর এ মহাপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে তেলনির্ভর অর্থনীতির বাইরে নতুন নতুন শিল্প খাতে বিনিয়োগ ও তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং এ লক্ষ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক তহবিল তৈরি করা।

আর এই মহাপরিকল্পনার মধ্যে রক্ষণশীল ধর্মীয় কাঠামোর মধ্যে সামাজিক পরিবর্তন বাস্তবায়নকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে দেশটি।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment